সোমবার দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের পার্সোনাল অফিসার (পিও) মোতালেব হোসেনকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ডেইলিএডুকেশনডটনেট নামের একটি অনলাইন এ সংবাদ দিয়েছে। এ সংক্রান্ত এক অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে বলে শিক্ষামন্ত্রীর দফতরের একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত, বিভিন্ন মিডিয়ায় পিও মোতালেব ও পিওন মোহাম্মদ আলীর দুর্ণীতির খবর প্রকাশ হয়েছে গতমাসে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, এসব ঘটনার সূত্রে গত ১১ অক্টোবর মোহাম্মদ আলী বরখাস্ত হয়েছেন, প্রতারণা মামলাও হয়েছে তার নামে। এর বিপরীতে বরখাস্ত অর্ডার বাতিলের জন্য আলী হম্বিতম্বি করলেও আর চাকরি ফিরে পাবে না। তিনি আরও বলেন, মোতালেবের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত ও মামলা হবে। প্রাথমিক শাস্তি হিসেবে মন্ত্রীর দফতর থেকে বদলি করা হয়েছে। সিন্ডিকেটের সদস্য এসব লোকের কারণে ফেরেশতার মতো মন্ত্রীর দুর্ণাম হচ্ছিল। সরকারের দু�টি সংস্থা মোতালেবের যাবতীয় সম্পদের খোঁজখবর নিয়ে রিপোর্ট দাখিল করেছে বলে তিনি জানান।
জানা গেছে, মোতালেবের নিজ জেলা ঝালকাঠীসহ পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা এবং উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলার বেশ কয়েকটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভূক্ত করার নামে গত সাড়ে তিন বছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। নিজ এলাকায় মোতালেব নিজেকে শিক্ষামন্ত্রীর পিএস হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছেন বলেও অভিযোগ আছে। গত সাড়ে তিন বছরে মোতালেবের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে প্রায় তিন শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে মন্ত্রীর কাছে।
এছাড়া বরিশাল অঞ্চলের কয়েকজন সাংসদও মোতালেবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। শিক্ষাভবনের প্রায় ডজনখানেক কর্মকর্তা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপক, শিক্ষাবোর্ডের কয়েকজন চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকজন নারী কর্মকর্তা মোতালেবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন মন্ত্রীর কাছে।
পুলিশের হাতে ধরা পড়া পিওন মোহাম্মদ আলীকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় যাওয়া, আবার নিজ বাসা থেকে দামী জিনিস সরিয়ে ফেলা ইত্যাদি অভিযোগ রয়েছে মোতালেবের বিরুদ্ধে।
মোতালেবের আচরণ প্রসঙ্গে শিক্ষা ভবনের এক কর্মকর্তা বলেন দুঃখ করে বলেন, মন্ত্রীর সাথে দেখা করার জন্য আমার ভিজিটিং কার্ড দিয়েছিলাম মোতালেবের কাছে। মোতালেব বাম হাত দিয়ে আমার কার্ড নিয়ে ঝুড়িতে ফেলে রেখে বললো তথ্য কর্মকর্তার মাধ্যমে আসেন।
আমরা শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা; অথচ টাইপিস্ট থেকে পদোন্নতি পেয়ে পিও হওয়া মোতালেব আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। দারোগার চেয়ে তার নৌকার মাঝির ক্ষমতা বেশি গল্পটা মনে পড়ে মোতালেবকে দেখলেই, তিনি বলেন।
শিক্ষামন্ত্রীর থেকে বয়সে বড় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক শিক্ষামন্ত্রীর কাছে অভিযোগ দিয়েছেন মোতালেবের বিরুদ্ধে। মন্ত্রীর আমন্ত্রণে সিনিয়র এ অধ্যাপক মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন। মন্ত্রীর আসতে একটু দেরি তাই অধ্যাপক সাহেব মন্ত্রীর রুমে বসতে চেয়েছিলেন। এতে তাকে মোটামুটি ঘাড় ধাক্কা দেয়ার চেষ্টা করে মোতালেব। পড়ে একজন যুগ্ম-সচিব ওই অধ্যাপককে শিক্ষা সচিবের রুমে বসিয়ে দেন এবং যুগ্ম-সচিব নিজেই মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ দেন মোতালেবের বিরুদ্ধে। ওই সময়েই মন্ত্রী মোতালেবকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু সমিতির মাধ্যমে অনুরোধ করে টিকে গিয়েছিলো। পরবর্তীতে ওই যুগ্ম-সচিবের বিরুদ্ধে মোতালেব বিষোদগার করে।
বরখাস্ত হওয়া কোটিপতি পিওন মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে সাংবাদিক পেটানোর পরিকল্পনা করার অভিযোগ আছে মোতালেবের বিরুদ্ধে।
একটি প্রভাবশালী বাংলা দৈনিকের সাংবাদিক জানান, মোহাম্মদ আলীর গ্রেফতার ও বরখাস্ত সংক্রান্ত খবর ছাপানোর পর মন্ত্রণালয়ে গেলে মোতালেবসহ আরো কয়েকজন খারাপ ব্যবহার করে তার সঙ্গে।
ওই সাংবাদিক জানান, তিনিও মোতালেবসহ সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যদের ব্যাপারে মন্ত্রীকে বলেছেন।কেন সরিয়ে দেয়া হলো এবং কেন এত অভিযোগ ইত্যাদি বিষয়ে জানতে চাইলে মোতালেব বলেন, পত্রিকায় কী লিখলো তাতে আমার কিছু আসে যায় না।