প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেদের শক্তি, উদ্যম ও কর্মস্পৃহার মাধ্যমে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে আত্ম-কর্মসংস্থানে এগিয়ে আসতে যুব সমাজের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
আজ সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় যুব দিবস-২০১১ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘শুধু চাকরির প্রত্যাশায় অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে না থেকে তোমরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করো। দেখবে, এক সময় তোমরাই অনেককে চাকরি দিতে পারছো।’
তিনি বলেন, যুবকরা এখন তাদের আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, কৃষি সমবায়, টেলিযোগাযোগ, ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প ও অন্যান্য পেশায় প্রচুর সুযোগ সুবিধা খুঁজে পাবে। কারণ, সরকার তাদের ব্যবসা শুরুর জন্য জামানতবিহীন ঋণসহ সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার ব্যবস্থা করেছে।
উন্নয়নের জন্য যুব শক্তিকে প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তোমাদের মেধা, শক্তি ও কর্মস্পৃহাকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগাতে চাই।’
এ বছর যুব দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘দিন বদলের আহ্বান : যুব কর্মসংস্থান।’
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকারের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে জাতীয় সংসদে একই মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ হাসান রাসেল বক্তৃতা করেন।
এতে এই মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুব আহমেদ স্বাগত ও যুব ও ক্রীড়া অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ কে এম মনজুরুল হক ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দেশের ৭টি বিভাগে আত্ম-কর্মসংস্থান ও অন্যান্য যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য ৬ জন যুব মহিলাসহ ১৫ জন যুবককে পদক দেন।
যুবকদের হাতকে কাজের হাতিয়ারে পরিণত করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্মরণ রাখবে
, তোমাদের কেউ যেন বিপথে ঠেলে দিতে না পারে।’
যুব সমাজের বিপুল আত্মত্যাগের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন এবং তারাই দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও নিরক্ষতামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। যুব সমাজ যাতে ভুল পথে পা না বাড়ায়, মাদকাসক্ত বা সমাজ বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে না পড়ে এ ব্যাপারে সকলকে সজাগ থাকতে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। ‘বিশেষ করে বিশ্ব পরিমণ্ডলে শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবে দেশের ভাবমূর্তি অুন্ন রাখার লক্ষ্যে যুব সমাজকে সন্ত্রাসবাদ থেকে দূরে রাখতে সকলের দৃষ্টি দিতে হবে’Ñ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এলক্ষ্যে যুব সমাজকে অবশ্যই দেশের ইতিহাস, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, ঐতিহ্য ও পারিবারিক বন্ধন সম্পর্কে জানতে হবে। যুবকদের কর্মসংস্থানে নেয়া বিভিন্ন ব্যবস্থার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় আসার পর এ পর্যন্ত তাঁর সরকার শুধু সরকারি খাতেই সাড়ে ৪ লাখরেও বেশী নারী-পুরুষের চাকরির সংস্থান করেছে। তিনি বলেন, জাতীয় কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় ১ লাখ ১ হাজার ১৮৬ জন যুবককে ৩২৩ কোটি টাকা পরিবার ভিত্তিক ঋণ ও আত্ম-কর্মসংস্থান ঋণ দেয়া হয়েছে। পল্লীর যুবকরা সরকারের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে নিজেদের আত্ম-কর্মসংস্থানের পথ খুঁজে নিতে পারে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, যুব সমাজকে সামনে রেখেই ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে যুব অধিদফতরকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এই অধিদফতর দেশব্যাপী উদ্বুদ্ধকরণ, প্রশিণ ও ঋণ কর্মসূচি পরিচালনা করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রত্যেক অঞ্চল এখন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত। যা নতুন উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে মতায় আসার পর তাঁর সরকার প্রত্যেকের জন্য মোবাইল ফোনের সুবিধার ব্যবস্থা করেছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ছিল এক বড় ধরনের উদ্দীপন। শিগগিরই পল্লীর যুবকরা ল্যাপটপের সুবিধা পাবে এবং অবশ্যই বহনযোগ্য নিজস্ব কম্পিউটার ব্যবহার করে তারা নিজেদের বিকশিত করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। |