প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক ইচ্ছায় দারিদ্র্য বিমোচন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে স্থানীয় সম্পদ ও মানব সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার তথা জীবিকায়নের মাধ্যমে প্রতিটি বাড়িকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তুলতে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলছে।
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে এক হাজার ৪৯২ কোটি টাকা। ১৭ হাজার ৩৮৮টি গ্রামে এই প্রকল্পের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
প্রাথমিক পর্যায়ে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত ২০০৯ সালের ১০ নভেম্বর একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয় এক হাজার ১৯৭ কোটি টাকা।
প্রকল্পে ৪৮২টি উপজেলার ১৯২৮টি ইউনিয়নের ৯৬৪০ গ্রামের ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৪০০টি পরিবারের জীবিকায়ন নিশ্চিতকরণের কাজ শুরু হয়।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১০-২০১১ অর্থবছরে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৬০ পরিবারে সম্পদ হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে ৪৭ হাজার ৮০০ পরিবারে গবাদিপশু, ৪১ হাজার ৯৮০ পরিবারে ঢেউটিন, ১৩ হাজার ৬০০ পরিবারে হাঁস-মুরগি, ৫৫ হাজার ৯৮০পরিবারে সবজি বীজ ও ৩৮ হাাজর ৩০০ পরিবারে গাছের চারা বিতরণ করা হয়। এছাড়াও ঘূর্ণায়মান ঋণ তহবিল হিসেবে প্রতিটি গ্রাম সংগঠনকে ৩৬ হাজার ৩৫০ টাকা প্রদান করা হয়।
একই গ্রাম সংগঠনের মধ্যে কিছু পরিবার গরু, কিছু পরিবার ঢেউটিন এবং কিছু পরিবারের মধ্যে হাঁস-মুরগি, গাছের চারা ও শাক-সবজি বীজ বিতরণ করায় সদস্যদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এ কারণে প্রকল্প সংশোধন করে ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বর নতুন আঙ্গিকে জুলাই ২০০৯ হতে জুন ২০১৩ মেয়াদে বাস্তবায়নে একনেক সভায় অনুমোদন লাভ করে। সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবে ৯৬৪০টি গ্রামের পরিবর্তে ১৭৩৮৮টি গ্রামে প্রকল্পের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয় এবং প্রকল্প ব্যয় ১১৯৭কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৯২ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।
সংশোধিত প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হচ্ছে- প্রতি গ্রাম থেকে ৬০টি দরিদ্র পরিবার বাছাই করে গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠন করা; দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সঞ্চয়মূখী করে তাদের পুঁজি গঠনের জন্য প্রতিটি দরিদ্র পরিবারকে তাদের নিজস্ব সঞ্চয়ের বিপরীতে প্রকল্প থেকে মাসে ২০০ টাকা হিসেবে বছরে ২৪০০ টাকা অনুদান প্রদান করা, সমিতিকে প্রতি বছরে ১,৫০,০০০ টাকা সুদবিহীন ঘূর্ণায়মান ঋণ তহবিল প্রদান করা; সমিতির সভাপতি/ম্যানেজার/সদস্যদের প্রয়োজনানুযায়ী বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা; উঠান বৈঠকের মাধ্যমে তহবিল ব্যবহার করে নিজেদের প্রয়োজনানুসারে প্রকল্প গ্রহণ করে মৎস্যচাষ, পশুপালন, নার্সারি, হাঁস-মুরগি পালনসহ পেশাভিত্তিক জীবিকায়নের ব্যবস্থা করা এবং এলাকার অনিবাসী ভূমি মালিকের অব্যবহৃত/পড়ে থাকা জমিজমা সমিতির আওতায় চাষাবাদ ও তা সংরক্ষণ করা।
প্রকল্পের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনয়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন আরও এক ধাপ এগিয়ে নিতে মোবাইল ব্যাংকিং তথা অনলাইন নির্ভর করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। গ্রাম সংগঠনের সদস্যরা যাতে তাদের সঞ্চয় ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র হতে ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে ও মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে জমা দিতে পারেন এবং প্রকল্প হতে সঞ্চয়ের বিপরীতে প্রদত্ত উৎসাহ সঞ্চয় প্রাপ্তির তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে জানতে পারেন তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রকল্পের সাথে ব্যাংক এশিয়া, ইউসিবিএল ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। ব্যাংক এশিয়া ২০১২ সালের ১০ মে থেকে মুন্সিগঞ্জ জেলায় পাইলটিং কার্যক্রম শুরু করেছে। ইতিমধ্যে এ জেলায় ৭.৮০ কোটি টাকা অনলাইনে লেনদেন হয়েছে। খুব শিগগিরই সকল জেলায় মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে প্রকল্পর সকল আর্থিক লেনদেন শুরু করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর দর্শন কাজের মধ্য দিয়ে দারিদ্র্যের উৎপাটন। সে লক্ষ্য অর্জনে গৃহীত একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের কার্যক্রম একদিকে যেমন সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন অন্যদিকে তার স্থায়ীত্ব ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার নিশ্চয়তা প্রয়োজন। প্রকল্পের অর্থের নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা ও জনগণের সঞ্চয়ের নিশ্চয়তার জন্য পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অধীনে একটি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যেতে পারে, যেখানে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সকল প্রকল্প ও বিভাগীয় লেনদেন বাস্তবায়িত হতে পারে যার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দর্শন জীবিকায়ন নিশ্চিত করে স্থায়ীভাবে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার কর্তৃক ঘোষিত দিন বদলের সনদ বাস্তবায়নে অগ্রাধিকারভুক্ত নির্বাচনী অংগীকারের মধ্যে দারিদ্র্য বিমোচন অন্যতম। নির্বাচনী ইস্তেহার ও রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী ২০১৫ সলের মধ্যে দেশের দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনতে সরকারের চলমান একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প হতে পারে সফল উদ্যোগ।