প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আদেশ ব্যর্থ করার অভিযোগে তদন্তের মধ্যে সোমবার শীর্ষ মার্কিন সহায়তা ও উন্নয়ন সংস্থার কমপক্ষে ৬০ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটন বিশ্বব্যাপী মার্কিন সাহায্যের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করার পর ট্রাম্প প্রশাসন ইউএসএআইডি-এর প্রায় ৬০ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ছুটিতে পাঠিয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় ইউএসএআইডি কর্মীদের কাছে পাঠানো একটি অভ্যন্তরীণ স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘নতুন নেতৃত্ব সংস্থাটিতে বেশ কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য করেছে, যা রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশ এবং আমেরিকান জনগণের আদেশ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি বলে মনে হচ্ছে।
’
রয়টার্সের পর্যালোচনা করা স্মারকলিপিতে ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক জেসন গ্রে বলেছেন, ‘এর ফলস্বরূপ আমরা এই পদক্ষেপগুলো নিয়ে পর্যবেক্ষণ শেষ করার আগে পর্যন্ত এবং পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত ইউএসএআইডির বেশ কয়েকজন কর্মচারীকে পূর্ণ বেতন এবং সুবিধাসহ প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠিয়েছি।’
শনিবার প্রশাসন ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে বিশ্বজুড়ে ওয়াশিংটনের সাহায্য বরাদ্দের পদ্ধতি পরিবর্তনে সহায়তা করার জন্য ইউএসএআইডি কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এবং এর আদেশ অমান্যকারী যে কোনও কর্মীর বিরুদ্ধে ‘শৃঙ্খলাবদ্ধ ব্যবস্থা’ নেওয়ারও হুমকি দিয়েছে।
এদিকে স্মারকলিপিতে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর এই সিদ্ধান্তের ফলে ঠিক কতজন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত ছয়টি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, প্রায় ৫৭ থেকে ৬০ জনকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
দুটি সূত্র জানিয়েছে, যাদের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যে ওয়াশিংটনে অবস্থিত প্রায় সকল ইউএসএআইডি ব্যুরোর নেতৃত্বের পদে কর্মরত কর্মীরা রয়েছেন। জ্বালানি নিরাপত্তা থেকে শুরু করে পানি নিরাপত্তা, শিশুদের শিক্ষা এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রয়েছে তাদের। সংস্থার জেনারেল কাউন্সেলের অফিসের কর্মীরাও এই তালিকায় ছিলেন।
চলতি মাসের শুরু পর্যন্ত ইউএসএআইডির চীন নীতির প্রধান ছিলেন ফ্রান্সিসকো বেনকোসমে।
তিনি বলেন, ‘মানুষ এই পদক্ষেপকে সোমবার বিকেলের গণহত্যা বলছে।’
আমেরিকা বিশ্বের বৃহত্তম একক দাতা দেশ। দেশটির প্রশাসনের নেওয়া এই পদক্ষেপ কোটি কোটি ডলারের জীবন রক্ষাকারী সাহায্য পাওয়া মানুষের জন্য হুমকি। ২০২৩ অর্থবছরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৭২ বিলিয়ন ডলার সহায়তা সরবরাহ করেছে। দেশটি ২০২৪ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক দেওয়া সকল মানবিক সাহায্যের ৪২ শতাংশ প্রদান করেছে।
ইউএসএআইডি তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
ছুটিতে থাকা কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা সোমবার বিকেলে একটি স্মারকলিপিসহ একটি ইমেল পেয়েছেন। যাতে জানানো হয়েছে, তারা প্রশাসনিক ছুটিতে রয়েছেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে তা কার্যকর হবে, তবে কোনো কারণ জানানো হয়নি।
এতে বলা হয়েছে, তাদের স্বাভাবিক কর্মঘণ্টায় টেলিফোন এবং ইমেলের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে প্রয়োজনে যোগাযোগ করা হবে। পরবর্তী নির্দেশনা এলে কাজে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হবে। তবে তারা ইউএসএআইডি প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে বা ইউএসএআইডি সিস্টেমে প্রবেশ করতে পারবে না।
ছুটিতে থাকা একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘তারা নির্বাহী আদেশ বাস্তবায়নে সহায়তা করার চেষ্টা করেছেন।’
জীবন রক্ষাকারী সহায়তা
গত সপ্তাহে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন সংস্থার শত শত কর্মীকে পুনর্নিয়োগ করেছে অথবা বরখাস্ত করেছে। এর লক্ষ্য হলো, ট্রাম্প ২০১৭-২০২১ সালে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের সময় তার প্রতি শত্রুভাবাপন্ন একটি ফেডারেল আমলাতন্ত্র নতুন করে সাজানো।
দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক ঘন্টা পরেই ট্রাম্প সকল ধরনের বৈদেশিক সাহায্য ৯০ দিনের জন্য স্থগিতের নির্দেশ দেন। তারা যুক্তি দিয়েছে, এ সকল সাহায্য বৈদেশিক নীতির অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না তা পর্যালোচনা করা। গত শুক্রবার পররাষ্ট্র দপ্তর বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান সহায়তার জন্য একটি স্টপ-ওয়ার্ক অর্ডারও জারি করে।
আরো পড়ুন
শনিবার দ্বিতীয় স্মারকলিপিতে ইউএসএআইডি কর্মীদের কাছে স্পষ্ট করা হয়েছে, বৈদেশিক সাহায্য ব্যয় স্থগিত করার অর্থ ‘সম্পূর্ণ স্থগিত’। একমাত্র ব্যতিক্রম হবে, জরুরি মানবিক খাদ্য সহায়তা এবং তাদের কর্তব্যস্থলে ফিরে আসা কর্মকর্তাদের জন্য।
ইউএসএআইডি-অর্থায়িত প্রোগ্রামগুলো বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষকে এইচআইভি/এইডসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। পরিষ্কার পানি, স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো এবং শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা থেকে শুরু করে সব। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সোমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অতিরিক্ত ছাড়ের বিষয়টি বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউএসএআইডির একজন সাবেক কর্মকর্তা এবং বর্তমানে রিফিউজি ইন্টারন্যাশনালের সভাপতি জেরেমি কোনিনডিক বলেছেন, ‘যদি এই পদক্ষেপ বাতিল করা না হয়, তবে এটি মার্কিন বৈদেশিক সাহায্যকে ধ্বংস করে দেবে… এটি স্থায়ীভাবে ইউএসএআইডিকে দুর্বল করে দেবে।’
সূত্র : রয়টার্স