থাইল্যান্ড থেকে মিয়ানমার ১৫ দিনের পদযাত্রায় বাংলাদেশি

থাইল্যান্ড থেকে মিয়ানমার ১৫ দিনের পদযাত্রায় বাংলাদেশি

থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে মিয়ানমার। ৩৭০ কিলোমিটারের দীর্ঘপথ। দূরত্ব অবশ্য কোনো বাধা নয় মানবতার সৈনিকদের কাছে। এই পথেই টানা ১৫ দিনের নিরলস পদযাত্রার পর মিয়ানমার পৌঁছবেন তারা।

শনিবার শুরু হওয়া এ পথযাত্রায় অংশ নিয়েছেন ২০টি দেশের শতাধিক পথচারী। উদ্দেশ্য, মানব পাচার বন্ধ করার জন্য বিশ্ববাসীকে উদ্বুদ্ধ করা।

এসব পথচারীর মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশেরও এক পথিক। তার নাম ঋষভ কৃষ্ণ, ঢাকার অদূরে টঙ্গীর অধিবাসী।

‘ফ্রিডম টু ওয়াক’ নামক এই ঐতিহাসিক পদযাত্রায় অংশ নিতে পেরে গর্বিত তিনি। মানবপাচারকে তিনি ‘আধুনিক যুগের দাসপ্রথা’ বলে মনে করেন, যা প্রতিটি দেশ থেকেই উচ্ছেদ করা উচিত।

তিনি বলেন, “দুঃখজনক হলেও সত্য, এই প্রকট সমস্যাটি বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই ঘটছে। এটা শুধু যৌনকর্মীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, অনেক সাধারণ নারী-পুরুষ ও শিশুও এর হাত থেকে নিস্তার পাচ্ছে না।”

এ যাত্রার খরচ পথচারীদের সবাই নিজেরাই বহন করছেন। এছাড়া পাঁচটি মানবপাচার বিরোধী সংগঠনের জন্য ৫ হাজার মার্কিন ডলার সাহায্য তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা। ব্যাংককের ‘ডাবলিনার পাব’ নামক একটি হোটেল ও রেস্তোঁরার মালিক জন কিলি এই দীর্ঘ পথে পথচারীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন।

থাইল্যান্ডে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টি কেনিসহ বিখ্যাত মানবাধিকার কর্মী স্যার ফ্র্যাঙ্ক পিটার্স যাত্রার উদ্বোধনকালে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক শাস্তি দেওয়ার যে প্রচলন আছে, তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন স্যার ফ্র্যাঙ্ক।

এই পরিকল্পনার সহ-প্রতিষ্ঠাতা থাইল্যান্ডের তানরাক চিয়েংটং ও যুক্তরাষ্ট্রের আলি ওয়েইনারকে সশ্রদ্ধ সম্মান জানান স্যার ফ্র্যাঙ্ক। তিনি বলেন, “তরুণেরা যখন তাদের ঈশ্বপ্রদত্ত মেধা খাটিয়ে মানুষের সেবার জন্য এগিয়ে আসে, তখন সেটার চেয়ে উৎসাহোদ্দীপক কিছু হতে পারে না। এক বছরেরও কম সময়ে এই প্রদর্শনীর শুরু হয়েছে। তানরাক ও আলি এক লাখ ডলার সংগ্রহ করতে চেয়েছিল, ইতোমধ্যে ৮০ হাজার ডলার উঠে গিয়েছে। এই টাকা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করছে এমন পাঁচটি দাতব্য সংস্থার মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হবে।”

মানবপাচার সম্বন্ধে স্যার ফ্র্যাঙ্ক বলেন, “এটা খুবই ভয়াবহ ও নিষ্ঠুর একটা ব্যাপার। এটি মানুষকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করে না, মানুষের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে বেঁচে থাকার সাধ কেড়ে নেয়। নরকযন্ত্রণার জন্য তাদের মারা যাবার দরকার হয় না, পৃথিবীতেই তারা সেই ব্যাথা, অপমান আর দুর্দশা নিয়ে বেঁচে থাকে।”

“মানবপাচার বন্ধ করতে হবে। আমাদের নিজেদের এ ব্যাপারে নগণ্য মনে হতে পারে, সৈকতের এক কণা বালুর মতোই। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে অসংখ্য বালু একত্রিত হয়েই সৈকত সৃষ্টি হয়। আমরা একসঙ্গে হলে কি করতে পারি, তা ইতোমধ্যে এই দুই তরুণী করে দেখিয়েছেন,” বলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী এবং ভারমন্ট রাজ্যের প্রাক্তন গভর্ণর হাওয়ার্ড ডিন পথচারীদের সাথে পথের শেষার্ধে যোগ দেবেন। এরপর ফ্রিডম টু ওয়াক-এর অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে দ্য ডাবলিনারে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।

আন্তর্জাতিক