হজযাত্রী পাঠানোর ক্ষেত্রে চলতি বছর এজেন্সিপ্রতি সর্বনিম্ন কোটা এক হাজার নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাবের (হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) দাবি, তা ৫০০ করতে হবে। মন্ত্রণালয় বলছে, এই কোটা নির্ধারণ সৌদি সরকারের এখতিয়ার, বাংলাদেশের কোনো হাত নেই। জবাবে হাবের দাবি, গত বছর এ কোটা দুই হাজার হাজার নির্ধারণের পর দরকষাকষি করে ২৫০-এ নামানো হয়েছিল।
এ বছরও কমানো সম্ভব। কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয় সে চেষ্টা করছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিষয়টির সুরাহা না হলে এবারের হজে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা হতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাবের অসন্তোষের মধ্যেই গতকাল রবিবার সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের ২০২৫ সালের হজ চুক্তি সই হয়েছে।
সৌদি আরবের জেদ্দায় রবিবার (১২ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় এই চুক্তি হয়। ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন এবং সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রী তৌফিক বিন ফাওজান আল রাবিয়াহ হজ চুক্তিতে সই করেন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এবার বাংলাদেশ থেকে ৮৭ হাজার ১০০ জন হজ করবেন।
এর মধ্যে ৮১ হাজার ৯০০ জন বেসরকারিভাবে এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে এবং বাকি পাঁচ হাজার ২০০ জন সরকারিভাবে হজ পালন করবেন।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ধর্ম উপদেষ্টা বাংলাদেশি হজ এজেন্সিপ্রতি সর্বনিম্ন হজযাত্রীর কোটা এক হাজার থেকে কমানোর বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য সৌদি হজ ও উমরাহ মন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। কিন্তু সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রী এজেন্সিপ্রতি সর্বনিম্ন হজযাত্রীর কোটা এক হাজারই বহাল রেখেছেন।
জানা গেছে, এবারের হজে সৌদি সরকার এজেন্সিপ্রতি প্রথমে এক হাজার পরে ৫০০ জনের কোটা নির্ধারণ করা হয়। এরই মধ্যে এজেন্সিপ্রতি ন্যূনতম হজযাত্রীর কোটা এক হাজারজন নির্ধারণ করে সম্প্রতি বাংলাদেশকে চিঠি দেয় সৌদি হজ ও উমরাহ মন্ত্রণালয়।
সৌদি সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন এজেন্সিপ্রতি ন্যূনতম হজযাত্রীর কোটা প্রথমে ২৫০ জন ও পরে ৫০০ জন করার বিষয়ে সৌদি হজ ও উমরাহ মন্ত্রীকে দুটি আধা-সরকারি পত্র দেন। কিন্তু সৌদি হজ ও উমরাহ মন্ত্রণালয়ের সুনির্দিষ্ট কমিটির কাছ থেকে হজযাত্রীর কোটা কমানোর বিষয়ে সম্মতি মেলেনি।
এ পরিস্থিতিতে গত ৪ জানুয়ারি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মোকাররম অডিটরিয়ামে হজ পরিচালনাকারী এজেন্সি মালিক ও পরিচালকদের সঙ্গে মতবিনিময়সভা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সভায় হজ এজেন্সি মালিকদের পক্ষ থেকে হজযাত্রীর কোটা কমানোর বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সহযোগিতা কামনা করা হয়। বিষয়টি জানাতে গত ৬ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন ধর্ম উপদেষ্টা। সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা সৌদি হজ ও উমরাহ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক হজ কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে নির্দেশনা দেন।
সর্বনিম্ন হজযাত্রীর কোটা এক হাজারের পরিবর্তে ৫০০ করার দাবি জানিয়ে গত ৯ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে হাব। হাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. মোহাম্মদ ফারুক বলেন, সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী প্রতিটি এজেন্সি ৫০০ জন হজযাত্রী সমন্বয় করে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিল। তবে হঠাৎ করেই সরকার যাত্রী সংখ্যা ৫০০ থেকে বাড়িয়ে সর্বনিম্ন এক হাজার নির্ধারণ করে।
সর্বনিম্ন কোটার এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে এজেন্সিগুলো বড় ধরনের সমস্যায় পড়বে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিতে পড়বেন হজযাত্রীরা। হাব নেতারা বলেন, সৌদি সরকারের এই নিয়ম পরিবর্তন না হলে এবার হজের সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা থেকে বিরত থাকবেন তাঁরা। অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে তাঁরা বলেন, সব কিছুতে পরিবর্তন এসেছে, হজ ব্যবস্থাপনায়ও পরিবর্তন আনতে হবে। নইলে তারা লিড এজেন্সি গঠনকাজে বিরত থাকবেন। দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
ইসলামী ঐক্য জোট ও হাব নেতা মাওলানা ফজলুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এজেন্সিগুলোর হাজি যত কম হবে, সেবা তত ভালো হবে। বিষয়টি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও সম্ভবত বোঝেন না অথবা না বোঝার ভান করছেন। ভারত বা পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা দিলে হবে না। তাদের সব হাজিই সরকারি ব্যবস্থাপনায় যায়। সুতরাং বিষয়টি সৌদি সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নতুন নীতিমালা করতে হবে।’
হাবের সংবাদ সম্মেলনের কয়েক ঘণ্টা পরই সচিবালয়ে হজ ব্যবস্থাপনার সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘হজ এজেন্সিপ্রতি ন্যূনতম হজযাত্রী নির্ধারণ করে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়। আল্লাহর মেহমান হজযাত্রীরা যেন কোনো সংকট কিংবা অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হন, সেটি অবশ্যই আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। আমি হজ এজেন্সি মালিক বা পরিচালকদেরও দু-এক দিনের মধ্যেই সৌদি সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক লিড এজেন্সি গঠনসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’