বিবিএস-এর ১৮ কোটির ৫ জরিপে ভ্রমণ ব্যায় ৯ কোটি!

বিবিএস-এর ১৮ কোটির ৫ জরিপে ভ্রমণ ব্যায় ৯ কোটি!

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) শিল্প ও সেবা খাতের পাঁচটি জরিপ পরিচালনার জন্য ১৮ কোটি ৬৫ লাখ ৩০ হাজার টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বরাদ্দের প্রায় অর্ধেক ৯ কোটি টাকাই ভ্রমণ ও পরিবহনের জন্য এবং মূল কার্যক্রম অর্থাৎ জরিপে ব্যয় হবে ৯২ লাখ টাকা বা মাত্র ৫ শতাংশ।

জানা গেছে, দেশব্যাপী সব উৎপাদনমুখী শিল্প, কুটিরশিল্প, পাইকারি ও খুচরা বাণিজ্য, হোটেল ও রেস্তোরাঁ ব্যবসার একটি হালনাগাদ জরিপ পরিচালনা করবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। বিবিএসের পরিসংখ্যান ও তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ (এসআইডি) প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ১৮ কোটি ৬৫ লাখ ৩০ হাজার টাকার শিল্প ও সেবা খাতের জরিপ শীর্ষক প্রস্তাবটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি অনুমোদন করেছে।
বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর।

এদিকে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর শুরু হওয়া দেশব্যাপী অর্থনৈতিক শুমারির কাজ চলমান থাকায় শিল্প ও সেবা খাতের বিভিন্ন উপখাতের ওপর আলাদা জরিপ পরিচালনা কতটা যৌক্তিকথ- সেই প্রশ্ন তুলেছেন পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা। বিগত সময়ে রাজস্ব বাজেটের অধীনে পরিচালিত জরিপের জন্য একটি আলাদা প্রকল্প নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

নথিতে দেখা গেছে, সম্মানি এবং বিনোদন ব্যয় ধরা হয়েছে মোট ব্যয়ের ৪ দশমিক ৪ শতাংশ বা ৮২ লাখ টাকা।
প্রতি মাসে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা যানবাহন ভাড়াবাবদ ৩৬ মাসে ব্যয় করা হবে ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের ২ দশমিক ৭০ শতাংশ। প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ৫ শতাংশ সেমিনার, ভেন্যু ভাড়া, প্রচারণা এবং বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যয় করবে বিবিএস।

সবচেয়ে বেশি ৮ কোটি ৭৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা ভ্রমণ এবং পরিবহনের জন্য ব্যয় করা হবে, যা বরাদ্দের ব্যয়ের ৪৭ শতাংশের বেশি।
প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয় হবে ২ কোটি ৫৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা, যা প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ১৪ শতাংশ।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এবং সফটওয়্যারে ব্যয় হবে প্রায় ১ কোটি টাকা।

কার্যক্রমের মূল উপাদান অর্থাৎ জরিপ পরিচালনার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯২ লাখ ১০ হাজার টাকা, যা প্রকল্প ব্যয়ের মাত্র ৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

বিবিএসের একজন উচ্চপদস্থ সাবেক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘গাড়ি, পরিবহন এবং ক্রয়ের মতো ক্ষেত্রে ব্যয়বৃদ্ধির সুযোগের সুবিধা নিতে রাজস্ব বাজেটের আওতায় প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।’

সূত্র জানায়, প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় এ ধরনের প্রকল্প বিবিএসের রাজস্ব বাজেটের অধীনে বাস্তবায়নের সুপারিশ করেন পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা। জবাবে বিবিএস কর্মকর্তারা সভায় আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের পরে প্রকল্পে বর্ণিত জরিপগুলো প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হবে এবং রাজস্ব বাজেটের অধীনে নিয়মিত পরিচালিত হবে।
প্রকল্পটির লক্ষ্য এবং কার্যক্রমের দিক থেকে চলমান অর্থনৈতিক শুমারি প্রকল্প যেন ঢাকা না পড়ে এ বিষয়ে সতর্ক অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা।

বিবিএস বলেছে, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মান শিল্প শ্রেণিবিভাগের (আইএসআইসি) সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা বাণিজ্য এবং হোটেল ও রেস্তোরাঁ খাতে স্বতন্ত্র শিল্প শ্রেণিবিভাগ প্রয়োগ করা হয়। জরিপটি খাতগুলোর জন্য হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রণয়ন এবং প্রকাশের জন্য পরিচালিত হবে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিবিএস সর্বশেষ হোটেল ও রেস্তোরাঁ জরিপ পরিচালনা করে ২০২১ সালে। সর্বশেষ পাইকারি ও খুচরা বাণিজ্য জরিপ পরিচালিত হয় ২০২০ সালে এবং উৎপাদন শিল্পের ওপর জরিপ হয় ২০১৯ সালে।

বিবিএস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একটি সমন্বিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিছু গুরুত্বপূর্ণ জরিপ পরিচালনার জন্য প্রকল্পটি শুরু করা হয়েছে। যদিও এই জরিপগুলো আগে রাজস্ব বাজেটের অংশ ছিল, তবে নিয়মিতভাবে পরিচালিত হতো না। জরিপগুলোর স্বীকৃত গুরুত্বের কারণে এখন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান, শ্রমশক্তি জরিপ এবং পারিবারিক আয় ও ব্যয় জরিপের মতো নিয়মিত জরিপ রাজস্ব বাজেটের মাধ্যমে পরিচালনা করা উচিত। প্রকল্প কর্মকর্তার অফিসের সাজসজ্জা, প্রকল্প কর্মকর্তাদের জন্য যানবাহন, পরামর্শদাতা সংস্থা এবং ক্রয়ের কারণে প্রকল্পগুলোতে অতিরিক্ত ব্যয় হয়।

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর