সীমান্তের ওপারে কছিম উদ্দিনের মাজার জিয়ারত করতে পারলেন না বাংলাদেশিরা

সীমান্তের ওপারে কছিম উদ্দিনের মাজার জিয়ারত করতে পারলেন না বাংলাদেশিরা

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে দরবেশ কছিম উদ্দিন মাজার জিয়ারত উপলক্ষে বিজিবি-বিএসএফের টহল জোরদার করা হয়েছে। ভারতীয় ভূখণ্ডে মাজারটির অবস্থান হওয়ায় সে দেশটির নারী-পুরুষরা কছিম উদ্দিনের মাজার জিয়ারতে অংশ নিয়েছেন। তবে পারেননি বাংলাদেশি ভক্তরা। কছিম উদ্দিনের ৭৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বিকেল পর্যন্ত বাংলাদেশি ভক্তরা ফিরে গেছেন দলে দলে।

জানা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের কুটিচন্দ্রখানা নাখারজান সীমান্তের ওপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ থানার মনাইটারী সেউটি-৩ ও নাখারজান সীমান্তের শূন্যরেখায় প্রায় দেড় শ বছর পূর্বে আরব থেকে আসা দরবেশ কছিম উদ্দিন ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য আস্তানা গাড়েন। ধর্ম প্রচারের এক পর্যায়ে তার মৃত্যু হয়। নির্জন ওই এলাকায় তাকে দাফন করা হয়। তার মৃত্যুর পর থেকে সীমান্তের দুই পাড়ের মানুষ প্রতিবছরের ১০ জানুয়ারি তার মৃত্যু দিবস পালন করে আসছে।
সেখানে এই দিনে ওরস, দোয়া ও আলোচনাসভা করা হয়।

সেখানে ৬ শতক জমির ওপর নির্মাণ করা হয় তাঁবু। সীমান্তের শূন্যরেখায় মাজারটি হওয়ায় বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে বসবাসকারীদের যৌথ আয়োজনে এই দিনটি পালন করা হয়। জিয়ারতের পাশাপাশি এই দিনে দুই দেশের আত্মীয়-স্বজনদের মিলনমেলাও হয়ে যায়।
সেই আশায় এবারও লোকজন মাজারের পাশে জড়ো হন। তবে বিএসএফের বাধায় সেখানে যেতে পারেননি বাংলাদেশিরা।

লালমনিরহাট জেলার বড়বাড়ী এলাকা থেকে উজ্জালা রানী ও মনভোলা চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমাদের চাচাতো ভাই ভারতের কোচবিহারের দিনহাটা শহর থেকে নিধু চন্দ্র ও বিমুল চন্দ্র এসেছিল জিয়ারত করতে। হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়েছে। আশা করেছিলাম মেলায় দেখা হবে।
অনেক আশা করে এসেছিলাম, তাদের সাথে কুশল বিনিময় করে পরিবারের সংবাদ জানব। কিন্তু দেখাও হলো না, মাজারের মানতও দিতে না পেরে ফিরে যাচ্ছি।’

একই কথা জানান কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা থেকে আসা সাইদুল ইসলাম ও হবিবর রহমান। তারা বলেন, ‘আমরা জানি প্রতিবছর এখানে মেলা ও দরবেশ কছিম উদ্দিনের মাজার জিয়ারত হয়। নো-ম্যানস ল্যান্ডে কছিম উদ্দিনের মাজার জিয়ারত ও মেলা একসাথে হওয়ায় ভারতের আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা হয়। সুখ-দুঃখের আলোচনা হতো জিয়ারত উপলক্ষে। সেটা এবার আর বিজিবি-বিএসএফের টহল জোরদারের কারণে হয়নি। এখন ফিরে যাচ্ছি।’

নাখারজান সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মালেক, রফিকুল ও এনামুল হক জানান, তাদের বাড়ির পাশে দরবেশের মাজার হলেও এবার মানত করতে পারেননি। উভয় দেশের বসবাসকারীদের মাধ্যমে জাঁকজমকভাবে ওরস পালন হতো। এলাকায় বসতো মিলনমেলা। দুই দেশের জিনিসপত্র বিক্রি হতো মেলায়। আত্মীয় স্বজনদেরও দেখা হতো। কিন্তু দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কঠোর নজরদারি থাকায় এ বছর কোনো বাংলাদেশি যেতে পারেননি। অনেক লোকজন দূর-দূরান্ত থেকে এসে ফিরে গেছে।

দরবেশ কছিম উদ্দিনের জিয়ারত কমিটির ভারতীয় অংশের সভাপতি আব্দুল জলিল মিয়া জানান, বিএসএফের বাধার কারণে এ বছর বাংলাদেশি প্রবেশ নিষেধ রয়েছে। সকাল থেকে বিকাল সাড়ে ৫টার মধ্যে মাজার জিয়ারতসহ সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সময় বেঁধে দিয়েছে বিএসএফ।

এ প্রসঙ্গে লালমনিহাট ১৫ বিজিবির ব্যাটালিয়নের অধীন গংগারহাট বিজিবি ক্যাম্পের টহলরত ন্যান্স নায়েক ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভারতীয় ভূখণ্ডে কছিম উদ্দিনের মাজার হওয়ায় বাংলাদেশিদের জিয়ারত স্থানে যাওয়ার সুযোগ নেই। এ জন্য আমরা সকাল থেকে দিনব্যাপী টহল জোরদার করেছি।’

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর