ঢাকা, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : ফিলিস্তিন সঙ্কটের দ্বি-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানের জন্য বাংলাদেশের অবিচল অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরতার অবসানে সিদ্ধান্তমূলক ও সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
মিশরের রাজধানী কায়রোতে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের সময় তিনি একটি বিশেষ অধিবেশনে বলেন, ‘আমরা সকল পক্ষ ও অঞ্চলের বাইরের স্টেকহোল্ডারদেরকে ইসরাইলি বাহিনীর চালমান বর্বরতা বন্ধ করার জন্য সিদ্ধান্তমূলক ও সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
এখানে প্রাপ্ত এক বার্তায় বলা হয়, ‘গাজা ও লেবাননে মানবিক সংকট ও পুনর্গঠন চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ে বিশেষ এ অধিবেশনটি অনুষ্ঠিত হয়।’
অধ্যাপক ইউনূস তাঁর বক্তৃতায় বলেন, তারা এমন এক সময়ে একত্রিত হয়েছেন যখন অধিকৃত গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ১৪ মাস ধরে ইসরাইলি আগ্রাসন ও বর্বর গণহত্যা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই বর্বরতা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব হবে না।’
ড, ইউনূস, ‘কম করে বললে, দীর্ঘদিন ধরে মেনে চলা আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি, আইন ও কনভেনশনের প্রতি ইসরাইলের নির্লজ্জ অবজ্ঞা আমরা চরম হতাশার মধ্যে আছি।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, লেবাননে যেভাবে বিরোধ ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে আরও এটি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে এবং এটি সমগ্র অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক ও দীর্ঘমেয়াদি পরিণতি বয়ে আনতে পারে, যা কেবল অর্থনীতি নয়, বৈশ্বিক সমাজ ও রাজনীতিকে প্রভাবিত করবে।
তিনি বলেন, ‘কায়রো থেকে আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই ও বোনদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে, তাদের ইতিহাসের এই অস্তিত্বের সঙ্কটের সময়ে আমাদের ঐক্য ও অটুট অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে বরাবরই ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে দৃঢ়ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় ইসরাইল পরিচালিত অব্যাহত অবৈধ দখলদারিত্ব এবং সহিংস দমন-পীড়নের নিন্দা জানিয়েছি। আমরা এ সঙ্কটের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের মাধ্যমে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনে শান্তি ও সম্প্রীতিতে পাশাপাশি বসবাস করার মতো একটি ন্যায্য ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পক্ষে অটল আছি।’
২০০৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. ইউনূস বলেন, ফিলিস্তিনকে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭-এর পূর্ববর্তী সীমানার ভিত্তিতে একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন ও কার্যকর রাষ্ট্র হিসাবে আবির্ভূত হতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা গত ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের সামনেও এ বিষয়ে বিশদভাবে বর্ণনা করেছি। আদালত অবশেষে ইসরাইলের দখলদারিত্বকে তাদের মতামতে অবৈধ বলে উল্লেখ করেছে।’
এই বছরের ও সেইসাথে ২০০৪ সালে দেয়া মতামত তাদের যৌথ ঘোষণায় গুরুত্বপূর্ণ আইনি ভিত্তি প্রদান করে।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশীরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা হেলাফেলার যোগ্য নয়। প্রতিটি ফিলিস্তিনির জীবন গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, এটা এমন কোনো বিষয় নয় যা শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য উদ্বেগজনক, বরং এটি একটি সর্বজনীন বিষয় যেখানে মানুষের মর্যাদা পরীক্ষার সম্মুখীন।
তিনি বলেন, ‘এটি দুর্বলদের রক্ষায় সার্বজনীন অঙ্গীকারের একটি বিষয়। দৃঢ়তার সাথে তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, লেবাননসহ সমগ্র অঞ্চলে প্রায় ৬০ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক ও প্রবাসী পেশাজীবী রয়েছেন যারা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
তিনি বলেন, গাজা, পশ্চিম তীর ও লেবাননে গণহত্যা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের সামিল।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দায়ীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। এ কারণেই, গত নভেম্বরে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে দাঁড়িয়ে মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধের দ্রুত তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
তিনি একটি কার্যকর দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে বলেন, জবাবদিহিতার বিষয়ে এই ধরনের কর্মকাণ্ড অপরাধীদেরকে ভবিষ্যতে আরও নৃশংসতা ঘটানোর ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে।
নোবেল শান্তি বিজয়ী আরও বলেছেন, মানবিক হস্তক্ষেপ ছাড়াও, গাজা, পশ্চিম তীর ও লেবাননের পুনর্গঠনের চিন্তাভাবনাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সময় এসেছে।
তিনি উলে¬খ করেন, জাতিসংঘ সতর্ক করেছে যে, ইসরাইলের বোমা হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ৪০ মিলিয়ন টন ধ্বংসস্তূপ অপসারণ করতে কমপক্ষে ১৫ বছর সময় লাগতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা ধারণা করতে পারি যে, ধ্বংসস্তূপে ১০,০০০ জনেরও বেশি মৃতদেহ থাকতে পারে। এসব ধ্বংসস্তূপ অ্যাসবেস্টস দ্বারাও দূষিত।’
তিনি ফিলিস্তিন ও লেবাননে পুনর্গঠনের ব্যয়ের আনুমানিক প্রাক্কলনসহ একটি প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য ডি-৮ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা এর মাধ্যমে সম্পদ সংগ্রহের জন্য আন্তর্জাতিক কৌশল প্রণয়নের জন্য চাপ দিতে পারি।’
অধ্যাপক ইউনূস ডি-৮ সম্মেলনের সময় গাজা ও লেবাননে মানবিক সংকট ও পুনর্গঠন চ্যালেঞ্জের ওপর এই বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করার জন্য মিশর সরকারের প্রশংসা করেন।
অধিবেশনে অন্যান্যের মধ্যে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি যোগ দেন।