মনে হচ্ছে ক্ষমতায় আওয়ামীলীগ আর সরকার চালাচ্ছে বিএনপি-জামাত মাহবুব-উল-আলম খান

মনে হচ্ছে ক্ষমতায় আওয়ামীলীগ আর সরকার চালাচ্ছে বিএনপি-জামাত মাহবুব-উল-আলম খান

একের পর এক ঘটনা, দুর্ঘটনা, ঘটন, অঘটন নানাবিধ কর্ম ও অপকর্মে সারাদেশ তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। সরকারের শেষ পর্যায়ে এমনসব অনাকাঙ্খিত কর্মকান্ড কাম্য নয়। নানাবিধ এই ঘটনায় কোন শক্তি, কি শক্তি কাজ করছে বোধগম্য হচ্ছে না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আছে বলেই কি এহেন ষড়যন্ত্র? একাত্তুরের পরাজিত শক্তি, ৭৫ এর জনক হত্যার সুবিধাভোগীরা, ২৫ ফেব্র“য়ারীর বিডিআর হত্যাকারীরা, ২০০১-২০০৬ এর অপশক্তি, ২১ আগষ্ট এর গ্রেনেড হামলাকারীরা এখন অত্যন্ত তৎপর, সরব। ফকা মিয়ার বাচ্চারা, চখা মিয়ার বাচ্চারা, জামাত দালালের বাচ্চারা, যুদ্ধাপরাধীদের দোসররা এখন তালে বেতালে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। তারা বলছে আওয়ামীলীগ তথা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকলে দেশে এহেন অবস্থা হয়। প্রকৃতপক্ষে ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার পর ঐ হত্যার আসল সুবিধাভোগীরা, সাথে ১৯৭১ এর পরাজিত শক্তি একসাথে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ জাতির জনককে হত্যা করেও ক্ষান্ত হয়নি। এদেশের জনগণের উপর নিয়ে যাচ্ছে নিষ্ঠুরভাবে। জাতির জনক সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন করে মহানুভবতা দেখিয়েছেন। কিন্তু সে ক্ষমা যুদ্ধাপরাধী ও কতিপয় ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য ছিল না। এগার হাজারের উপর এহেন অপরাধীর বিচার চলছিল। পাকিস্তানে আটক লক্ষ লক্ষ বাঙালীকে রক্ষা ও আন্তর্জাতিক চাপে সেদিন কতিপয় পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী ও দালালের বিনিময় হয়েছিল। কয়েক লক্ষ বাঙালরি প্রাণ বাঁচানো একটি কঠিন কাজ ছিল। বঙ্গবন্ধুকে সে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছিল। কিন্তুু এদেশের দালাল ও ঘাপটি মেরে থাকা কুচক্রীরা, ষড়যন্ত্রীরা, জাতির জনককে হত্যার অপেক্ষায় ছিল। ১৯৭৫ এ তারা পরাজয়ের প্রতিশোধ নিল। তারপর হতেই শুরু হলো পাকিস্তানী ধারার রাজনীতি। সামরিক শাসকেরা এভাবেই তাদের ক্রিয়াকান্ড শুরু করে। দালাল আইন তুলে দিয়ে যুদ্ধাপরাধী ও রাজকার দাললদের পুনর্বাসন করা হয়। জনক হত্যার আসল ও প্রকৃত সুবিধাভোগী জিয়াউর রহমান একে একে সকল দালাল ও যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন করলেন। অথচ এরা সাধারণ ক্ষমার আওতার বাইরে ছিল। ক্ষমতা গ্রহণ করে রাষ্ট্রের অর্থে রাজনৈতিক দল গঠন করলেন। তিনি বললেন গড়হবু রং হড় ঢ়ৎড়নষবস. ও রিষষ সধশব ঢ়ড়ষরঃরপং ফরভভরপঁষঃ ভড়ৎ ঃযব ঢ়ড়ষরঃরপরধহং.  সেই হতে রাজনীতিকে কলুষিত করার সকল প্রক্রিয়া শুরু হলো। কোমলমতি ছাত্রদের হিজবুলবহরে করে ভ্রমণে নিয়ে তাদের হাতে অস্ত্র ও অর্থ তুলে দিয়ে ছাত্র রাজনীতিকেও কলুষিত করা হলো। দেশ ও জাতির সর্বনাশের জন্য এই সামরিক স্বৈরশাসক সকল প্রকার অশুভ চিন্তা চেতনা নিয়ে অগ্রসর হলো। ইতিহাসের মীরমদন ও মোহনলাল চরিত্রের কর্ণেল জামিল, কর্নেল হুদা, মে. জে. খালেদ মোশাররফ ও কর্ণেল তাহেরসহ শতশত মুক্তিযোদ্ধা সেনানী ও দেশপ্রেমিক নাগরিকদের হত্যা করা হলো। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষদের খতম করাই ছিল জিয়ার উদ্দেশ্য। কত হাজার হাজার প্রাণ এভাবে অকালে ঝরে গেছে কে জানে। অথচ তিনি ২৭ মার্চ ১৯৭১ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন বা করানো হয়েছিল চট্টগ্রামে জেষ্ঠ্য সেনা কর্মকর্তা হিসেবে। দুর্ভাগ্য একজন চেতনার মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে এহেন কর্মকান্ড সম্ভব কি? প্রকৃত পক্ষে জিয়া সেদিন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ঘোষণা পাঠ করেছিলেন পরিস্থিতির চাপে। তিনি যাচ্ছিলেন সোয়াত জাহাজ হতে পাকিস্তানী অস্ত্র খালাসের জন্য। পথে মেজর রফিক, অলি, শওকত অন্যান্যরা তাকে বাধা দেয়। বিদ্রোহে বাধ্য করান। মুজিব নগর সরকার গঠনের পর সারাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। জিয়ার নামে “জেড” ফোর্স গঠিত হয়। এভাবেই তিনি মুজিব নগর সরকারের একজন সেনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান। খালেদা জিয়া তার সঙ্গী হননি। তিনি ঢাকা কেন্টনমেন্টে যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানী বাহিনীর আতিথেয়তায় আয়েশেই থাকেন। তাকে বারবার আহ্বান সত্ত্বেও তিনি যেতে রাজী হননি।

বিগত বাজেট অধিবেশনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছেন। এতে উহা স্পষ্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭১ এ যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানীদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। মাননীয় প্রতিমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে কর্ণেল বেগ নামে এক সেনা কর্মকর্তার জিয়াকে প্রেরিত একটি পত্রের উল্লেখ করেন। ইংরেজীতে লিখা ঐ পত্রের মর্মার্থ হলো আমরা তোমার কর্মকান্ডে খুব খুশী, শীঘ্রই নতুন দায়িত্ব পাবে। তোমার পরিবারের জন্য কোন চিন্তা করনা। তোমার স্ত্রী ও সন্তানগণ অত্যন্ত সুখে আছে। তোমাকে মেজর জলিলের ব্যাপারে আরো সাবধান থাকতে হবে। কর্ণেল বেগ, পাক আর্মি, ২৯ মে ১৯৭১। তাহলে বুঝুন ইতিহাসের এই মীরজাফরের আসল চরিত্র। গত ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর রামু, উখিয়া, পটিয়া ও টেকনাফে কয়েকটি এলাকায় বৌদ্ধ পল্লীতে যে জঘন্য ঘটনা ঘটানো হয়েছে এর নিন্দা জানানোর ভাষা কারো জানা নেই। কোন সভ্য মানুষের দ্বারা এহেন বর্বরতম কর্মকান্ড ঘটানো সম্ভব নয়। এই মর্মান্তিক ঘটনার তদন্ত চলছে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের প্রেক্ষিতে তদন্তে বেরিয়ে আসছে আসল চিত্র। কতিপয় হামলাকারী সনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে জামাত ইসলামী, শিবির, মাদ্রাসা ছাত্র ও রোহিঙ্গা নেতা, জঙ্গীরা আছেন। তদন্তের সাথে সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে ফেসবুকে পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননার ছবি যুক্ত করার খবর প্রচারের পর প্রথম প্রতিবাদ মিছিল হয় রাত সাড়ে নয় টায়। মিছিল শেষে সমাবেশ হয়। এতে নাগরিক উন্নয়ন কমিটি ও বিভিন্ন দলের লোকজন বক্তব্য রাখেন। থানার অফিসার্স ইন- চার্জ নজিবুল ইসলামও বক্তব্য রাখেন। কক্সলাইনের গাড়ি ভাড়া করে হামলাকারীদের আনার আয়োজন করে স্থানীয় জামাত নেতা। ঘটনার প্রতিবাদে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ বিক্ষোভ শুরু করলেও পরের ঘটনা তাদের হাতে থাকেনি। প্রতিবাদ মিছিল শেষে এর সুযোগ গ্রহণ করে জামাত ও রোহিঙ্গা জঙ্গীরা। বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে, প্রার্থনালয়ে হামলায় জামাত, শিবির, বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, রোহিঙ্গা জঙ্গী ও নানাবিধ অশুভ শক্তি পরিকল্পিতভাবে এই ধ্বংস-যজ্ঞে অংশ গ্রহণ করে। জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শীপইয়ার্ডের জামাতী শ্রমিক সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের শ্রমিকদের মন্দিরে আক্রমন ও হামলার সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত। কক্সবাজার ও নাইকিংছড়ির একাধিক মাদ্রাসা ছাত্ররা হামলা ও ধ্বংসে অংশ গ্রহণ করে। এভাবে এদেশের হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে ধ্বংস করা হয়েছে। এর পেছনে মূল হোতা জামাত, ও রোহিঙ্গা জঙ্গী। বিএনপি তার অঙ্গ সংগঠন তাদের সাথে হাত মিলিয়েছে। একটাই উদ্দেশ্য সরকারের তথা দেশের ভাবমূর্তিকে বিনষ্ট করা। বৌদ্ধ সম্প্রদায় অত্যন্ত নিরীহ ও শান্তি প্রিয় মানুষ। এদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে তাদের উপাসনালয় জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শত বছরের সম্প্রীতিকে, ঐতিহ্যকে কুঠারাঘাত করা হলো। কোন সভ্য মুক্তমনের দেশপ্রেমিক মানুষের জন্য এহেন কর্মকান্ড কাম্য নয়। যে অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটানো হলো এর তদন্ত করে দায়ী ও দোষীদের বের করে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তি প্রদান এদেশের জনগণের দাবী। সরকারকে এ ব্যাপারে দ্রত কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে।

ইতোমধ্যে বিভিন্ন দল, সংগঠন, স্বরাষ্টমন্ত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এইসব নিঃস মানুষদের পক্ষে দাড়িয়েছেন। সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আশা করি সরকার দ্রুত এই অশুভ শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে দেবেন। বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ, ধর্মনিরপেক্ষতার দেশ। হাজার বছরের এই সখ্যতাকে ধরে রাখতে হবে। কতিপয় রোহিঙ্গা, জামাত ও পাকিস্তানী প্রেতাত্মাও তাদের দোসরদের অশুভ কর্মকান্ডে এই বন্ধন ছিন্ন হতে পারেনা। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এই শক্তি মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর নানাবিধ ষড়যন্ত্র এই সরকারকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সরকার গঠনের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ২৫ ফেব্র“য়ারী ২০০৯ বিডিআর হত্যা দিয়ে এই ষড়যন্ত্রের শুরু। সরকার অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে উহা সামাল দিয়েছে। সেদিন বিরোধী দলীয় নেত্রী তিন দিন নিখোঁজ ছিলেন। এই রহস্য জনগণ জানতে চায়। দীর্ঘ তিন বছর ধরে একের পর এক ষড়যন্ত্র চলছে। সম্প্রতি দিনাজপুর ও হবিগঞ্জে জনসভায় বিরোধী দলীয় নেত্রী ম্যাডাম খালেদা জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে চরম বিষোদগার করে বক্তব্য রেখে কান ঝালাপালা করে ফেলেছেন। যত প্রকার অশ্লীল বক্তব্য আছে সবই উদগীরণ করেছেন। বর্তমান সরকারকে বিশ্বচোর ও এরশাদকে বিশ্ববেহায়া বলে আনন্দের ঢেকুর তুলেছেন। তার চলনে বলনে মনে হচ্ছে এখনই ক্ষমতা পেয়ে গেছেন। বর্তমান সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে এমন সব বক্তব্য রেখেছেন তা শুনে তার নিজের লোকরাও লজ্জা পেয়েছেন। তিনি যখন বলেন বর্তমান সরকার প্রধান ও তার সন্তানগণ ইত্যাদিরা দুর্নীতিবাজ তখন মনে হয় চোরের মার এত বড় গলা একেই বলে। এ কাজ তো তার সন্তানদ্বয়, ভাইবোন, তাদের ছেলে-মেয়ে নিকট আত্মীয় স্বজন, দলীয় লোকজন যেভাবে করেছেন, এহেন লুটপাট বিশ্ব সৃষ্টির পর হতে আজতক পৃথিবীতে যত সরকার এসেছে ও গেছে তেমন করার রেকর্ড আছে বলে জানা নেই। বিশেষ করে ২০০১-২০০৬ এর জোট সরকার যে দুর্নীতি, দখল, লুটপাট, হত্যা, সন্ত্রাস, সম্পদ পাচার, ধর্ষণ ও নানাবিধ অপকর্ম করেছে এর নজির পৃথিবীতে আর নেই। রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান তারা একে একে ধ্বংস করেছিল। এগুলি সহনীয় পর্যায়ে আনতে সরকারকে হিমসিম খেতে হচ্ছে। ছাত্রদের চরিত্র হনন করেছে জিয়াউর রহমান। জিয়া তাদের টেন্ডারবাজি, অস্ত্রবাজি ও নানাবিধ কু-কর্মকান্ডে প্রলোভিত করেছে। এরশাদকে বিশ্ববেহায়া বলা খালেদা জিয়ার মুখে শোভা পায়না। তিনি তার কাছ হতে কত সুবিধা নিয়েছেন তা-কি ভুলে গেছেন? কিসের লালসায় তিনি এরশাদের নিকট হতে এত সুবিধা নিলেন বোধগোম্য নয়। তিনি নিজে এবং তার সন্তানদের জন্য সরকারী কোষাগার হতে কত টাকার সম্পদ নিয়েছেন তাকি তার স্মরণে নেই। বাংলাদেশ সরকার হতে তিনি দুইটি বাড়ি নিয়েছেন এবং হোসাইন মোঃ এরশাদই তাকে দিয়েছেন। অথচ কোন নিয়মেই একজন দুইটি বাড়ি পেতে পারেননা। অন্যায়ভাবে প্রদত্ত কেন্টনমেন্টের সেনাবাহিনীর বাড়ি আদালত সেনাবাহিনীকে ফিরিয়ে দিয়েছে। এই বাড়ির জন্য তিনি আইন আদালত করে হেরে গিয়ে অবশেষে ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন? এই দুঃখে ও ক্ষোভে তিনি কেঁদেছেন, হরতাল পর্যন্ত করেছেন। মানুষের লোভ ও লালসা কত বিচিত্র। তার এত সম্পদ থাকার পরও গুলশানের বাড়িটি এখনো রেখেছেন ও ভাড়া দিয়েছেন। অথচ শেখ রেহানাকে প্রদত্ত ধানমন্ডির বাসার বরাদ্দ তিনি বাতিল করেছেন এবং থানা করে থানার উদ্বোধন পর্যন্ত একজন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী করেছেন। এহেন মনমানসিকতা পৃথিবীতে বিরল। অবশ্য বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর শেখ রেহানা তাঁকে প্রদত্ত ঐ বাড়িটি পুলিশবাহিনীকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। লোভ থাকলে শেখ রেহানা উহা রাখতে পারতেন। খালেদা জিয়া নিজে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা জরিমানা দিয়ে অপ্রদর্শিত আয়ের মানে চুরির টাকার কর দিয়েছেন। সৌদি আরব ভ্রমনের সময় শত সুটকেস ভর্তি সম্পদ পাচার করেছেন। তার সন্তান, নিকট আত্মীয়রা মানিলন্ডারিং ইত্যাদির জন্য বিদেশী আদালতে সাজাপ্রাপ্ত। এফবিআইএসে স্বাক্ষ্য দিয়ে যায়; এহেন শত অপকর্মের পরও তিনি যদি বলেন বর্তমান সরকার বিশ্বচোর তাহলে তিনি নিজেকে কি উপাধি দেবেন। এভার তার উপরই ছেড়ে দেওয়া যায়। তাকে বিশ্ব ডাকাত বা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ চোর ডাকাত উপাধি দেওয়া যায় কিনা তিনি বিবেচনা করতে পারেন। কেননা তিনি, নিজের সন্তানগণ, নিকট আত্মীয় স্বজন নামে বেনামে কত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছেন তার তালিকা দিয়ে শেষ করা যাবেনা। শুধু কোকো, ডান্ডি, খাম্বা কোম্পানিইনা এমন ডজন ডজন আছে। পক্ষান্তরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সন্তানগণ কি তা এ দেশের জনগণ জানেন ও দেখছেন। তাঁর ছেলেমেয়ে দুজনই শিক্ষা দীক্ষা জ্ঞান গরিমায় আদর্শ মানুষ হয়েছেন। তারা বিদেশে আয় করেন নিজের মেধা দিয়ে, জ্ঞান দিয়ে। তারা যা আয় করেন তা তাদের বৈধ আয়। খালেদা জিয়ার    সন্তানদের মতো অবৈধ আয় নয়। অতএব একজন সৎ মানুষকে গালিগালাজ, অপবাদ দেয়া অনৈতিক কাজ।

প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছে খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য নির্ভেজাল মিথ্যা। বর্তমান আমলে ঘাপটি মেরে থাকা খালেদা নিজামীর ভাবদর্শীয়রাই বেশি পদোন্নতি পেয়েছে। এটা তার না জানার কথা নয়।তার আমলে প্রশাসনকে তিনি কি করেছেন তাকি ভূলে গেছেন? ১৯৯২ সনে গণপদোন্নতি সময় তিনি জুনিয়র কর্মকতাদের পদোন্নতি দিয়ে শতশত সিনিয়রকে বাদ দিয়েছেন। জেষ্টতা, যোগ্যতার ও সব গুনাবলী থাকা সত্বেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সৎ , দক্ষ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের বাদ দিয়েছেন। এহেন অন্যায় ইতোপূর্বে কোন সরকার করেনি। এ দৃস্টান্তও খালেদার জিয়াই করেছেন। একটি সরকার কত জঘন্য হতে পারে ১৯৯১ -১৯৯৬ এর সরকার উহার প্রমান। তারপর আবার ২০০১সনে সালসা নির্বাচনে ক্ষমতা গ্রহন করে যত প্রকার অন্যায়, অবিচার, অনিয়ম ইত্যাদি আছে তা সবই প্রয়োগ করেছেন। দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, স্বাধীনতার মূল্যবোধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা সংস্কৃতি সবই ধ্বংস করা হয়েছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গুলি পঙ্গ করা হয়েছে। তাদের দলীয়করণে দেশ প্রায় অকার্যকর হয়ে যায়। ক্ষমতা গ্রহণ করে ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগাম হাতে নিয়ে প্রশাসন, পুলিশ, সামরিক, বেসামরিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্র হতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী কর্মকর্তাদের চাকুরি হতে বিনা কারণে অকালীন অবসর প্রদান শুরু করেন। এভাবে হাজার হাজার কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বিতাড়িত করে ও বছরের পর বছর ওএসডি করে রেখে, পদোন্নতি বঞ্চিত করে রাষ্ট্রের প্রশাসনকে মেধাশূন্য ও অদক্ষ করে ফেলেন। পছন্দের কর্মকর্তাদের দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে উপসচিব হতে সচিব পদে পদোন্নতি প্রদান করে প্রশাসনকে হযবরল অবস্থায় ফেলা হয়। একজন চাকুরিজীবীর জন্য জেষ্ঠ্যতা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অনেক প্রয়োজন। অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের এভাবে বিতাড়িত করা কোন দেশপ্রেমিক সরকারই করতে পারেনা। যোগ্য অভিজ্ঞ আমলা ছাড়া প্রশাসন সুষ্ঠু গতিতে চলতে পারেনা। সুশাসন গড়ে উঠতে পারে না। অস্ত্রের জোরে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক সরকার, সামরিক ভাবদর্শের সরকারের পক্ষেই এহেন অপকর্ম করা সম্ভব। অকালে চাকুরিহারা এমন সব কর্মকর্তাগণ বছরের পর বছর কষ্ট, অভাব অনটনে কাটিয়ে অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। চাকুরি জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা নিয়ে যখন এদের সচিব হওয়ার কথা তখনই এদের চাকুরিচ্যুত করা হয়। এ এক হৃদয় বিদারক হৃদয়হীনতা, নির্মম নিষ্ঠুরতা, জঘন্যতম অন্যায়। ভুক্তভোগী সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের পক্ষে এ অন্যায়ের বিচার দাবী করছি। এ অন্যায়ের, অবিচারের জবাব তাকে দিতেই হবে। খালেদা এখন বলে বেড়াচ্ছেন তিনি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা করেছেন সুযোগ পেলে আবার শাস্তি দেবেন। এই যদি একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর   চিন্তা ও চেতনা হয় তাহলে জনগণ যাবে কোথায়? প্রশাসনকে এভাবে কলুষিত করে বিতর্কিত করে তিনি কি লাভ করেছেন? জনগণ তাকে চরমভাবে বিতাড়িত করেছে ২০০৮ এর নির্বাচনে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আমার আকুল আবেদন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার মূল্যবোধ, সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতা হোক তোমাদের চলার পথের পাথেয়।

রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও পটিয়ায় যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেল সুষ্ঠু তদন্তের মধ্যে আসল দোষীদের বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে ভুক্তভোগী জনগণের মনে আস্থা ফিরিযে আনা জনগণের দাবী। কুচক্রীরা যে সর্বনাশ করেছে এই ক্ষত কবে শেষ হবে জানিনা। অহিংসা পরম ধর্ম বৌদ্ধধর্মের সারমর্ম, জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর; শাশ্বত এই বানীর প্রবক্তাগণ তোমাদের কাছে আমরা সারাদেশবাসী লজ্জিত। আমাদের ক্ষমা করো। কতিপয় ঘৃন্য ইতর জাতীর মানুষের ধ্বংসে আমরা বাধা দিতে পারিনি। সরকারের প্রতি আবেদন স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গাফিলতীর জন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক। সমাবেশ মিছিল শেষে রাত বারটায় কিভাবে ট্রাক ভর্তি লোকজন এসে এই ধ্বংসযজ্ঞ চালাল উহা বোধগম্য নয়। প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দ বাহিনী কেন যথাসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি? জনপ্রতিনিধি হিসেবে স্থানীয় সংসদ সদস্য অবশ্যই এর দাঁয় এড়াতে পারেননা। এই ভয়াবহ নৃশংতার জবাব সকলকে দিতে হবে। শেয়ার বাজার কেলেংকারি, হলমার্ক গ্র“পের অর্থ আত্মসাৎ, ডেসটিনি ঘটনা, সাগর-রুনি হত্যা ঘটনা, রেলের দূর্নীতি ইত্যাদি বিষয়ে সরকারের দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। এই সাথে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি না করতে পারলে জনগণ বিমূখ হবেন। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে বিগত ২০০১-২০০৬ এর লুটেরা সরকার সহজ মওকা পেয়ে যাচ্ছে। সরকারের নীতি-নির্ধারণীগণকে এসব বুঝতে হবে, অনুধাবন করতে হবে এবং এর বিহিত ব্যবস্থা নিতে হবে। মন্ত্রীসভা আরো দুবছর আগে পরিবর্তন করত: দক্ষ ও অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের অন্তর্ভূক্তিকরণ জরুরী প্রয়োজন ছিল। সময় চলে গেলে পস্তাতে হবে। আগন্তুক উপদেষ্টাদের কর্মকান্ডে দেশবাসী বিরক্ত। এদের দ্বারাই সরকারের ভাবমূর্তি বেশী ক্ষতি হচ্ছে। অতএব এইসব বিতর্কিত উপদেষ্টা ও কতিপয় মন্ত্রীদের বাদ দিলে সরকারের ভাবমূর্তি অনেক উজ্জ্বল হবে। প্রশাসনকে যদি প্রথমেই ঢেলে সাজানো যেত তাহলে আজকের হযবরল হতনা। জনপ্রশাসন উপদেষ্টার নিকট প্রশ্ন বিগত জোটআমলে নিগৃহীত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত কর্মকর্তাগণকে কেন কাজে লাগানো হলনা? পক্ষান্তরে বিতর্কিত কতিপয় লোককে কেন উপদেষ্টা করা হলো? জানিনা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের ভাবমূর্তি দিনদিন নষ্ট হোক এই ষড়যন্ত্রই পেছনে কাজ করেছে? পদ্মাসেতুর অর্থায়ন নিয়ে জটিলতার জন্য এইসব উপদেষ্টা বেশি দায়ী। মন্ত্রীসভা হতে এই মুহুর্তে কতিপয় অনভিজ্ঞ, অদক্ষদের ও আগন্তুক উপদেষ্টাদের  বাদ দেওয়া অতীব প্রয়োজন। আগামী এক বছরে সরকার তার প্রতিশ্র“ত কাজ কতটুকু সম্পন্ন করতে পারবেন জানিনা। বিরোধী দল সরকারের অপরিনামদর্শীতা, অতিকথন, বাজে কথন ও অপ্রয়োজনীয় কথনের জন্য তাদের ২০০১-২০০৬ এর দু:শাসনের কথা জনগণকে ভুলিয়ে দিতে পারছেন। বিরোধী দলের সৌভাগ্য কতিপয় সরকারী দলীয় লোকের কর্মকান্ড তাদের অপকর্ম ভুলাতে সহায়তা করছেন। কাউকে আঘাত করে কথা বলা উচিৎ নয়। কথাবার্তা বলতে হবে বিচক্ষনতার সাথে, চাতুর্যের সাথে, আচার আচরণে শালীন হতে হবে। নেতাকর্মীগণ রাষ্ট্রনায়কোচিত আচরণ করবেন উহাই কাম্য। সকল মানুষকে সম্মান দিতে হবে। মানুষের ভালবাসা, শ্রদ্ধা অর্জন করতে হবে। রামু, উখিয়া ও পটিয়ার ঘটনায় প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। সরকার এসব বুঝতে পারছেন কিনা জানিনা। এই দায়িত্বহীনতা বা স্যাবটেজের জন্য এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তাই মনে হচ্ছে ক্ষমতায় আওয়ামীলীগ আর সরকার চালাচ্ছে বিএনপি-জামাত। এখনো সময় আছে প্রশাসনকে ঢেলে সাজিয়ে গতিশীল করে একাত্তুরের চেতনায় এগিয়ে যেতে হবে আগামী এক সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য। অর্জিত সফলতাকে ধরে রেখে জরুরী অঙ্গীকার গুলি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। রাষ্ট্রনায়কোচিত আচার আচরণে, কর্মকান্ডে জনগণকে উদ্ভাসিত করতে হবে। অনাহুত কথা বলা হবে বোকামী ও ভাবমূর্তি নষ্ট। জাতির জনকের অসমাপ্ত কাজকে বাস্তবায়িত করে জনগণের মুখে ফুটাতে হবে অনাবিল হাসি। আগামী নির্বাচন হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির লড়াই। গড়তে হবে একাত্তুরের দালাল, যুদ্ধাপরাধী, জামাত শিবির, রাজাকার, আলবদর মুক্ত বাংলাদেশ। এ লড়াইয়ে জিততে হবে, জিততে হলে গত তিন বছরের ভুল হতে শিক্ষা নিয়ে, শোধরিয়ে এগিয়ে যেতে হবে সাবলীল গতিতে। নৌকার পালে লাগাতে হবে সুবাতাস। বসন্তের হাওয়ায় সর্ব ব্যর্থতা, গ্লানি ঘুচিয়ে গড়ে উঠুক এক সুখী, সমৃদ্ধশালী, আধুনিক ও ডিজিটাল বাংলাদেশ।
(লেখক সাবেক সচিব)

পাঠক মতামত