তিনটি প্রধান শহরে ডিজিটাল টেলিভিশন চালু করার মাধ্যমে অ্যানালগ যুগের সমাপ্তি ঘটাতে যাচ্ছে ভারত।
বুধবার রাতে দিল্লি, মুম্বাই ও কলকাতার ক্যাবল টিভিকে ডিজিটালে রূপান্তরিত করা সম্পন্ন হয়। চেন্নাইও শীঘ্রই এ তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে।
এই পরিবর্তনের ফলে পরবর্তী প্রজন্মের টেলিভিশন প্রযুক্তিতে প্রবেশ করবে ভারত। এর ফলে যেমন উচ্চমানের ছবি দেখা যাবে, তেমনি পাওয়া যাবে প্রযুক্তিগত বিভিন্ন সুবিধা। টেলিভিশন পর্দা ঝিরঝির করা, স্ক্রিন কালো হয়ে যাওয়া ইত্যাদি ত্রুটি চিরকালের মতো বিদায় নেবে। ১০০টি চ্যানেলের বদলে এক হাজার চ্যানেল প্রদর্শন করতে পারবে ক্যাবল টিভি অপারেটররা। গ্রাহকরাও অনেক বেশি চ্যানেল দেখতে পাবেন। পাশাপাশি পাবেন ইচ্ছামতো অতিরিক্ত চ্যানেল বেছে নেওয়া এবং ভিডিও অন-ডিমান্ড (ভিওডি) সুবিধা।
স্যাটেলাইট থেকে পাঠানো ডিজিটাল সিগন্যাল গ্রহণ তা সুষ্ঠুভাবে গ্রাহকদের কাছে দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে ভারতের প্রায় সব ক্যাবল টিভি অপারেটর।
ভারতের অন্যতম বৃহৎ ক্যাবল টিভি প্রতিষ্ঠান টাটা স্কাই-এর প্রধান নির্বাহী হরিত নাগপাল এ ব্যাপারে বলেছেন, “এ আধুনিকায়নের ফলে ফলে ভোক্তারা সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা পাবেন, যার ফলে তাদের টিভি দেখার সার্বিক অভিজ্ঞতাই পালটে যাবে।”
উল্লেখ্য, পৃথিবীর বৃহত্তম টেলিভিশন বাজারগুলোর মধ্যে ভারত অন্যতম। দেশটিতে বর্তমানে ১৫ কোটিরও বেশি মানুষের ঘরে টেলিভিশন আছে, যাদের মধ্যে ২৫ শতাংশ ডিটিএইচ (ডিরেক্ট-টু-হোম) সেবা এবং ৫১ শতাংশ ক্যাবল টিভির সেবা গ্রহণ করেন।
ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক সংশোধনী বিল ২০১১ নামক নতুন আইনে বলা হয়েছে, সকল টেলিভিশন অপারেটরকে অবশ্যই টিভি সিগন্যালকে ‘ডিজিটাল অ্যাড্রেস্যাবল সিস্টেম’ বা ড্যাস নামক সুরক্ষিত একটি পদ্ধতিতে পরিবর্তন করতে হবে।
এর জন্য ব্যবহারকারিদের ‘সেট-টপ-বক্স’ বা এসটিবি নামক একটি ছোট যন্ত্র সংযুক্ত করতে হবে তাদের টেলিভিশনের সাথে। ডিটিএইচ সেবা গ্রহণকারীদের স্যাটেলাইট ডিশ সংযুক্ত করতে হবে। এ যন্ত্রগুলোই ডিজিটাল সিগন্যাল গ্রহণ করে টিভি পর্দায় প্রদর্শন করবে।
৫০০ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই ডিজিটাল পদ্ধতির ফলে ক্যাবল টিভি খাত থেকে সরকারের রাজস্ব উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে মিডিয়া পার্টনার এশিয়া (এমপিএ) নামক একটি সংস্থা। তাদের মতে, অ্যানালগ টিভিতে গ্রাহকদের সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করা যেমন সমস্যা ছিলো, তেমনি সমস্যা ছিলো তাদের অবস্থান নিশ্চিত করে ব্যবহারের উপ সঠিক রাজস্ব আদায় করা। কিন্তু নতুন এ পদ্ধতিতে টপ-বক্সের ভেতর গ্রাহকের নাম-পরিচয় সহ একটি ডিজিটাল কার্ড থাকবে, যার সাহায্যে খুব সহজেই পৃথকভাবে প্রতিটি গ্রাহককে শনাক্ত করা যাবে। নির্দিষ্ট সময়ে কর না দিলে নিজে নিজে সিগন্যাল বন্ধ করে দেবে কার্ডটি। এর ফলে ক্যাবল টিভি খাত থেকে যেমন সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় নিশ্চিত হবে, তেমনি গ্রাহকদের সঠিক সংখ্যা সরকারের জানা থাকবে।
এমপিএ-র তথ্যমতে, পুরনো পদ্ধতিতে আগামী দশ বছরে অন্তত ১১০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাতো ভারত সরকার।
সিএনএনের প্রতিবেদনে জানা যায়, বুধবার বিকালের মধ্যে মুম্বাইয়ের সব টেলিভিশন এবং রাজধানী দিল্লির ৯৫ শতাংশ টেলিভিশন ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিবর্তিত হয়েছে। বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত এ পরিবর্তনের সুযোগ ছিলো।
তবে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা এদিক দিয়ে বেশ পিছিয়ে আছে। সেখানে মাত্র ১৭ শতাংশ ক্যাবল টিভিকে ডিজিটালে পরিবর্তন করা হয়েছে।
চেন্নাইতে এ পরিবর্তনের সময়সীমা সোমবার পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। চাহিদার তুলনায় টপ-বক্সের অপ্রতুলতাই এর জন্য দায়ি বলে জানিয়েছে দ্য হিন্দু পত্রিকা। তারা আরও জানায়, মোট ব্যবহারকারিদের মাত্র ৬২ শতাংশ এ পর্যন্ত ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিবর্তন করেছেন।
২০১৪ সালে মধ্যে টেলিভিশন আধুনিকায়নের এ কাজ সম্পূর্ণভাবে সমাপ্ত হবে বলে আশা করছে ভারত সরকার। তবে এ পরিবর্তন সব গ্রাহকই খুশি মনে নিচ্ছেন না। তারা বলছেন, টপ-বক্স সংযুক্ত করতে ১৮ থেকে ২০ ডলার খরচ করতে হচ্ছে, এবং সরকার কোন বিকল্প উপায় রাখেনি। এতে তারা বাধ্য হচ্ছেন এই টাকা খরচ করতে।
তবে বেশিরভাগ গ্রাহকই এ পরিবর্তনের সমর্থন করে বলছেন, এর ফলে টেলিভিশন থেকে আরও সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন তারা।