বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভাড়া করা বোয়িং ৭৪৭ সময়মতো জেদ্দা পৌঁছায়নি। আর এ কারণে প্রথম ফিরতি হজ ফ্লাইটের ৫৮২ জন হাজীকে দেশে ফিরতে হয়েছে দুর্ভোগ সঙ্গী করে।
সৌদি আরবে জেদ্দার স্থানীয় সময় ৬টা ২০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়ার কথা ছিল বিমানের প্রথম ফিরতি হজ ফ্লাইটের। কিন্তু ফ্লাইট বিলম্ব যার নিত্য সঙ্গী সেই বিমানে ব্যতিক্রম হবে; না হয়নি। চার ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়ে হাজীদের নিয়ে দেশে আসে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, সুষ্ঠুভাবে হজ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমান ভাড়া করেছিল বোয়িং ৭৪৭ জাম্বো জেট। এভিকো এয়ার থেকে ভাড়া করা উড়োজাহাজটি ফিরতি হজ ফ্লাইটের শুরুতেই দুর্ভোগে ফেলে হাজীদের। হজ ফ্লাইট পরিচালনা শেষে এভিকোর উড়োজাহাজটি ফিরে গিয়েছিল ফ্রান্স। সেখান থেকে উড়োজাহাজটি যায় জেদ্দায়। কিন্তু এখানেই বাধে গোল। সময়মতো উড়োজাহাজটি জেদ্দায় পৌঁছাতে পারেনি। যে কারণে চার ঘণ্টা বিলম্বে দেশে ফিরতে হয় হাজীদের।
মঙ্গলবার সংবাদ মাধ্যম কর্মীদের বিমান থেকে জানানো হয়েছিল, ব্যালটি হাজীদের বহনকারী বিমানের প্রথম ফিরতি হজ ফ্লাইটটি (বিজি-০৩৮) বুধবার দুপুর ৩টা ১৫ মিনিটে ৫৮২ জন হাজী নিয়ে ঢাকা এসে পৌঁছবে। পরবর্তী সময়ে জানানো হয়, ৬টা ২০ মিনিটে ফ্লাইট আসবে। শেষ পর্যন্ত তা ঢাকায় অবতরণ করে ৭টা ২০ মিনিটে।
বুধবার সন্ধ্যায় যখন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রথম ফিরতি হজ ফ্লাইট অবতরণ করে বিমানমন্ত্রী ফারুক খান হাজীদের বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। তবে মন্ত্রীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে একটু এগিয়ে যাওয়া হাজীদের দেশে ফেরার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে পাওয়া গেল তিক্ত সব অভিজ্ঞতা।
চট্টগ্রামের হাফেজ আবদুল খালেক বললেন, “আমাদের বলা হয়েছিল ফ্লাইট ছাড়বে সকাল ৬টা ২০ মিনিটে। এরপর সকাল ৭টা, ৯টা -এভাবে শেষ পর্যন্ত ফ্লাইট ছাড়ে সকাল ১০টা ২০ মিনিটে। দেশে আসার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেদ্দা বিমানবন্দরে বসে থাকতে হয়েছে। কেউ কোনো খোঁজ নেয়নি।
আরেক হাজী ঢাকার মো: ইউসুফও বললেন, “রাত ৯টায় জেদ্দা বিমানবন্দরে আসি। ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় অপেক্ষা শেষে বিমানে উঠতে পারি।”
কুমিল্লার এনামুল হক হজ করেছেন ছেলে আনোয়ার বারীকে নিয়ে। তিনি বললেন, “ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেছি। অথচ বিমানের কাউকে পাশে পাইনি। কেউ ছিল না আমাদের কথা শোনার জন্য। অনিশ্চিয়তার মধ্যেই রাতভর কোনো রকমে বসে কাটিয়েছি।”
আনোয়ার বলেন, “জেদ্দা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা চেকিং শেষ করতেও অনেক সময় নষ্ট হয়েছে।”
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী শওকত আলী বলেন, “৪ জন অতিরিক্ত যাত্রী- যারা বিমানের কর্মী তারা বোর্ডিং পাস নিয়ে উড়োজাহাজে ওঠে পড়েছিলেন। এজন্য তাদের বিমান ছাড়তে দেরি হয়।”
তবে যাত্রীদের অনেকেই জানতেন না- বিমানের ভাড়া করা বোয়িং ৭৪৭ এর কারণে হাজীদের এ দুর্ভোগ।
উড়োজাহাজটি সময়মতো জেদ্দা না পৌঁছানোর বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেন বিমানের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাদ্দেক আহমেদ। মন্ত্রী ফারুক খানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মোসাদ্দেক আহমেদ বলেন, “সৌদি কর্তৃপক্ষের কারণেই এ দেরি। জেদ্দায় হাজার হাজার হাজীকে আনতে বহু এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ অপেক্ষা করে। সব প্রক্রিয়া শেষ করতে ওদের অনেক সময় লেগে যায়। যে কারণে সময়মতো ফ্লাইট ছাড়া খুব কঠিন হয়ে যায়।”
বিমানের ফিরতি হজ ফ্লাইট কার্যক্রম শেষ হবে ৩০ নভেম্বর। এ বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ১০ হাজার ৫৭৩ জন যাত্রী হজে গিয়েছেন। ফিরতি ফ্লাইটের ৫৪ হাজার ১৭৯ জন হাজীকে বিমান জেদ্দা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসবে। এজন্য (ডেডিকেটেড ও শিডিউল) বিমান ১৩৬টি ফ্লাইট পরিচালনা করবে।