পুলিশের অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা তদন্তে স্পেশাল টিম মাঠে

পুলিশের অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা তদন্তে স্পেশাল টিম মাঠে

রাজধানীতে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায় খোদ পুলিশ সদস্যরাই জড়িয়ে পড়েছেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হওয়ার সুবাদে চলাচলে বিশেষ সুবিধা পাওয়ায় এই বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্য টাকার নেশায় জড়িয়ে পড়েছেন অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসায়।

রাজধানীতে পরপর দু’টি ঘটনায় অবৈধ অস্ত্রসহ ৪ পুলিশ সদস্য আটক হওয়ার পর বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের।

এদিকে পুলিশ সদর দফতরের এডিশনাল আইজি একেএম শহিদুল হক বলেন, “অস্ত্র উদ্ধারের এ ঘটনার পর মাঠ পর্যায়ে আরো কোন পুলিশ সদস্য জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখতে একটি স্পেশাল টিম তদন্তে মাঠে নেমেছে।”

মহানগর পুলিশের ডিসি (সদর) হাবিবুর রহমান বলেন, “পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার প্রথম দিনে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। এ ঘটনায় যদি আরো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকে তবে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।”

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পুলিশ সদস্যদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা নতুন নয়। বিভিন্ন অপরাধ যেমন খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাসীদের মদত, ঘুষ, মাদকদ্রব্য নিয়ে আটকসহ নানা অপরাধে মাঝেমধ্যেই পুলিশের সম্পৃক্তার অভিযোগ ওঠে।

কিন্তু অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায় পুলিশ সদস্যদের জড়িয়ে পড়ার ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজধানীতে পরপর দু’বার বিপুল সংখ্যক অস্ত্রসহ গুলি উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একই সঙ্গে ভাবিয়ে তুলেছে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের।

মহানগর পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর কাফরুলে উপজাতীয় দুই পুলিশ সদস্য প্রেম চাকমা ও জেনাল চাকমা আটক হওয়ার পর তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্যমতে, অবৈধ অস্ত্র ও গুলিসহ আটক করা হয় এসআই জাহিদ হোসেন ও কনেস্টবল সায়েমকে। পুলিশ এজাহারে এ ঘটনায় আরও অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনকে আসামি করে।
অর্থ্যাৎ এ ঘটনায় আরও পুলিশ সদস্য জড়িত থাকতে পারে এমন আশঙ্কাতেই অজ্ঞাতনামা আরো আসামি করা হয়েছে। আটককৃতদের ৭ দিনের রিমান্ডে এনে গোয়েন্দা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

মঙ্গলবার সকালে পল্টন থানায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাব ইন্সপেক্টর বলেন, “পুলিশ সদস্য হওয়ার সুবাদে কিছুটা বাড়তি সুবিধা ও অতিরিক্ত টাকার নেশায় তারা এই কাজ করতে পারে।”

তিনি বলেন, “একজন পুলিশ সদস্য পোশাক পরে বের হলে তার কাছে কোন ব্যাগ থাকলেও  স্বাভাবিকভাবে অন্য পুলিশ সদস্যরা তাকে চেক করবে না। তারা হয়তো পোশাক পরিহিত অবস্থায় সেগুলো সরবরাহ করতো।”

তিনি আরো বলেন, “পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য ভুলে যারা শুধু টাকার নেশায় এ কাজ করছে তারা জাতির শত্রু। এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা উচিৎ।”

আক্ষেপ করে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “পুলিশ এতো কাজ করার পরও পুলিশের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। নতুন করে অস্ত্র ব্যবসায় জড়িত হওয়ার অভিযোগেও অভিযুক্ত হতে হলো পুলিশকে।”

এ ঘটনায় পুলিশের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুন্ন হবে বলেও মনে করেন তিনি।

এদিকে পুলিশ সদর দফতরের এডিশনাল আইজি (প্রশাসন) একেএম শহিদুল হক বলেন, “অস্ত্র ব্যবসায় পুলিশের সম্পৃক্ততা ও আটকের বিষয়টি পুলিশ সদর দফতর কঠোরভাবে নিয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় রাজধানী ছাড়াও দেশের অন্য কোন স্থানের পুলিশ সদস্যরা জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখতে এরই মধ্যে পুলিশের একটি স্পেশাল টিম তদন্তে নেমেছে।”

তিনি বলেন, “ভাবমূর্তি ক্ষুন্নকারী পুলিশ সদস্যদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।”

অপরদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (সদর) হাবিবুর রহমান বলেন, “গত ২৫ অক্টোবর দুই পুলিশ সদস্য জেনাল চাকমা ও প্রেম চাকমা আটকের পর তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। এই কমিটির সদস্যরা হলেন- মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মারুফ হাসান, ডিসি পিএম (পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট) সাইদুর রহমান ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান।”

তিনি বলেন, “এই তদন্ত টিম এ ব্যাপারে তদন্তকাজ অব্যাহত রেখেছে।”
“আইন অমান্যকারী বা অপরাধী পুলিশ সদস্যদের কোন প্রকার ছাড়া দেওয়া হবে না” বলেও সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করেন তিনি।

বাংলাদেশ