রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কোনঠাসা শিবির নেতা কর্মীরা ঈদের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে আবারো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা শুরু করেছে। নানা কুট কৌশল খাটিয়ে প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগকে ঘায়েল করে একক আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছে তারা।
সাম্প্রতিক সময় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের প্রতিরোধের মুখে তারা প্রকাশ্য অবস্থান নিতে না পারায় চোরাগোপ্তা হামলার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে।
রাবি ছাত্রলীগ নেতা মাহবুব আলম রতনের উপর হামলার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত দুই শিবিরকর্মীকে রিমান্ডে নেওয়ার পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ এবং আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তি থেকে এমনই সব চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে, দীর্ঘদিন ধরেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির নেতা-কর্মীদের খুব একটা দেখা যায় নি। তবে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে শিবির নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যেই ক্যাম্পাসে যাওয়া-আসা শুরু করেন।
চলতি বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সামনে রেখে উদ্যমী হয়ে ওঠে শিবির কর্মীরা। নবীন শিক্ষার্থীদের সামনে নিজেদের শক্ত অবস্থান জাহির করতে শিবির নেতাকর্মীরা গত ২ অক্টোবর ক্যাম্পাসে শো ডাউন দেওয়ার সময় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তুমূল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তবে প্রকাশ্যে ছাত্রলীগের অস্ত্রের মহড়ার মুখে শেষ পর্যন্ত তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
এ অবস্থায় প্রকাশ্য অবস্থান না নিলেও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা চোরাগোপ্তা হামলার পথ বেছে নিয়েছে বলে ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা দাবি করছে। ওই সংঘর্ষের পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ মহানগরের একাধিক স্থানে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা চোরাগোপ্তা হামলার শিকার হয়।
সর্বশেষ গত ২৪ অক্টোবর রাজশাহী মহানগরের সাহেব বাজারে সন্ত্রাসী হামলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শের-ই-বাংলা হল ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক মাহবুব আলম রতন গুরুতর আহত হলে তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সশস্ত্র হামলার জন্য ছাত্রশিবিরকে দায়ী করে ছাত্রলীগ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আহমেদ আলী বলেন, “ছাত্রশিবির ক্যাডাররা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে। আমাদের নেতা কর্মীদের হত্যার উদ্দেশ্য কুপিয়ে আহত করছে। রতনের ঘটনাও এ ঘটনার ধারাবাহিকতা।”
তিনি বলেন, “গত ২ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-শিবিরের সংঘর্ষের পর রতনকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছিলো। শিবিরের হুমকির প্রেক্ষিতে ওই সময় থেকে সে বাড়িতে থাকতে পারতো না, তালাইমারী এলাকায় তার বোনের বাসায় থেকে তাকে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। কিন্তু মহানগরের সাহেব বাজার এলাকায় তাকে একা পেয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে আহত করা হয়েছে।”
অন্যদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি আশরাফুল আলম ইমন রতনের ওপর হামলার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোন ধরনের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, “সব ঘটনায় শিবিরকে জড়িয়ে ছাত্রলীগ নেতারা ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে।”
তবে ওই ঘটনায় বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ ২৫ অক্টোবর মোস্তাফিজুর রহমান ও ফারুক হোসেন নামে দু’জনকে গ্রেফতার করে। মোস্তাফিজুর রহমান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এবং ফারুক রাজশাহী কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তারা দুজনই সক্রিয় শিবির কর্মী। ছাত্রলীগ নেতা রতনের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
পুলিশের একটি সূত্র বাংলানিউজকে জানান, জিজ্ঞাসাবাদে তারা হামলার কথা স্বীকার করেছে। রিমান্ড শেষে গতকাল সোমবার তাদের রাজশাহীর অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালতে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেয়। শিবির কর্মীদের এই স্বীকারোক্তির পর শিবিরের চোরাগোপ্তা হামলা মিশনের বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়।
তবে ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগরের বোয়ালিয়া মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সেলিম রেজা বাংলানিউজকে জানান, জবানবন্দিতে তারা কি বলেছে এই মুহূর্তে বলা সমুচিত হবে না।
তিনি আরও বলেন, “আদালত থেকে কাগজ পাওয়ার পরই তা বলা যাবে।”