কেউ সেজেছে ভুত। কেউবা পরী। কেউ স্পাইডার ম্যান, কেউ ব্যাটম্যান কেউবা সুপারম্যান। কিন্তু একটিতে সবার মিল। প্রত্যেকের হাতেই রয়েছে ব্যাগ বা পাত্র। তাতে ক্যান্ডি চাই। কত শত ক্যান্ডি যে তারা পেলো। কত রকমের ক্যান্ডি। কেউ কেউ ঝোলা ভর্তি করে ফেলেছে ক্যান্ডি। স্যান্ডির পর নিউইয়র্কে এযেনো ক্যান্ডি ঝড়।
হ্যাপি হ্যালোইন উৎসবে মেতেছে নিউইয়র্কের তথা গোটা আমেরিকার শিশুরা। বড়রাও কম যায় না। তারাও রাস্তায় নেমে এসেছে। করছে উৎসব। ছোটরা ক্যান্ডি চাইছে। বড়রা তাদের এগিয়ে দিচ্ছে দোকানে দোকানে। যেনো নিজের শিশুটি কত বেশি ক্যান্ডি পাবে তাতেই তাদের গৌরব।
বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে ছোট ছোট ব্যবসা সবখানেই ক্যান্ডি চেয়ে বেড়াচ্ছে শিশুরা। কোনো কোন স্টোরে দেখা গেলো হরেক রকম ক্যান্ডি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। দুটি চারটি করে শিশু নানা সাজে সজ্জিত হয়ে দোকানে ঢুকছে। কেউ একজন তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে ক্যান্ডি। তাতে বেজায় খুশি শিশুটি বলছে হ্যাপি হ্যালোইন। কে বলবে মাত্র একটি রাত আগে এই নগর ছিলো বিপর্যয়ের। শতাব্দীর সবচেয়ে ক্ষতিসাধন করে দিয়ে গেছে হারিকেন স্যান্ডি। সব ভুলে আমেরিকানরা মেতেছে ক্যান্ডি উৎসবে।
হ্যালোইনের আমেজ দেখা যাচ্ছিলো দিন কয়েক আগে থেকেই। মেট্রো ট্রেন বাসে মেয়েরা হ্যালোইনের সাজে সজ্জিত। সে সাজ নানা রকমের। তবে প্রতিযোগিতা যেনো কে কতো উদ্ভট সাজে সাজতে পারে। এ সাজ দেখার মতো। বর্ণনায় সেসব সাজ আনা সম্ভব নয়।
কি করে এলো এই হ্যালোইন। সে ১৯৫৪ সালের কথা। সেবছর থেকেই ৩১ অক্টোবর হ্যালোইন দিবস উদযাপন করে আসছে আমেরিকার মানুষ। দিনটিকে তারা ভূত তাড়ানো দিবস মনে করে। এটি একটি বিশ্বাস। এই দিকে বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে ঘোরাঘুরি করে ছোট ছোট বাচ্চারা। অনেক ক্ষেত্রেই তারা সাজে ভুত কিংবা ডাইনি। নিজে ভুত সেজে আসল ভুত কিংবা ডাইনিকে তাড়ানোর চেষ্টা আর কি! শিশুদের মন থেকে ভুতের ভয় তাড়ানোই এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য। কমলা রঙের পামকিন কিনে নিয়ে তা কেটে ভুতের সাজ দিয়ে ঘরে ঘরে সাজিয়ে রাখতেও দেখা যায়। অনেক দোকান ও বাড়ির প্রবেশ পথেও দেখা যায় দৈত্য দানব বা ডাইনির মূর্তি বানিয়ে রাখা হয়েছে। মাকড়সার কৃত্রিম জাল বানিয়ে সেখানে একটি ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।
তবে ভুত তাড়ানোর চেয়েও যে কাজটি করে শিশুরা সবচেয়ে মজা পায় তা হচ্ছে ঘরে ঘরে কিংবা দোকানে দোকানে গিয়ে ক্যান্ডি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার সংগ্রহ করা। এসব জায়গায় গিয়ে বাচ্চারা প্রশ্ন করে ‘ট্রিক অর ট্রিট?’ যারা ক্যান্ডি দেবেন তারা বলেন ‘ট্রিট’। বলেই চকোলেট ক্যান্ডি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার তুলে দেন। হাসিমুখে শিশুরা বেড়িয়ে আসে। আবার কোনো কোনো স্থানে গিয়ে তারা ক্যান্ডি না নিয়েই ফেরে।
বুধবার সন্ধ্যায় দুই একটি দোকানে গিয়ে দেখা গেলো প্রবেশ পথেই লেখা রয়েছে “নো ক্যান্ডি হিয়ার!” এসব দোকানে বাচ্চারা ঢুকছেই না। একটি দোকানে দেখা গেলো শিশুরা ঢুকলেই দোকানি বলে দিচ্ছেন নেক্সক উইক! আর তাতে ভগ্ন হৃদয় শিশুদের মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তারপরও মুখে হাসি ছড়িয়ে ‘ওকে’ বলে এগিয়ে যাচ্ছে পরের দোকানে।
হ্যালোইন ডে নিয়ে আগ্রহ সকলেরই। হ্যালোইন ডেতে স্কুলগুলোতেও চলে বিভিন্ন কর্মসূচি। এই দিনে শিশুরা ভুতের সাজে স্কুলেও যায়। সবমিলিয়ে হারিকেন স্যান্ডির আঘাতের একদিন পরে হ্যালোইন ডে উৎযাপনটি বেশ আনন্দেই করলো নিউইয়র্ক তথা আমেরিকাবাসী।