বিরোধি দলীয় নেতা খালেদা জিয়া তাঁর সপ্তাহব্যাপী ভারত সফরের তৃতীয় দিনে সাক্ষাৎ করলেন নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদের সঙ্গে।
এদিন অবশ্য রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি এবং ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার কথা ছিল। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে এ বৈঠকের সময়সূচি চূড়ান্ত হয়নি।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে ঐতিহাসিক হায়দরাবাদ হাউসে সালমান খুরশিদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক হয়েছে। এরপর খালেদা জিয়ার সম্মানে মধ্যাহ্নভোজ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। খালেদা জিয়া তাঁর সফর সঙ্গীদের নিয়ে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।
এর আগে সকালে তাঁর হোটেল জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশংকরের সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। রাত ৮টায় পুরান দিল্লির লালকেল্লায় যাওয়ার কথা রয়েছে তাঁর।
সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়অ। ওই বৈঠকে খালেদা জিয়া বলেন বাংলাদেশের মাটি কোনদিনই ভারতের কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ব্যবহার করতে পারবে না।
উল্লেখ্য, বিএনপি ক্ষমতাসীন থাকাকালে ভারত সরকার বরাবরই খালেদা সরকারের বিরুদ্ধে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ও বিদেশি সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দানের অভিযোগ করে গেছে।
ভারত সফরের দ্বিতীয় দিনে খালেদা জিয়া মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করেন।
বিরোধীদলীয় নেতা সোমবার দুপুরে নয়া দিল্লির ৭ নম্বর রেস কোর্স সড়কে মনমোহন সিংয়ের সরকারি বাসভবনে বৈঠকে বসেন।
পাশাপাশি তিনি মনমোহন সিংকে বলেন, দুই দেশের সীমান্তে সাধারণ মানুষ হত্যাকাণ্ড বন্ধ না হলে তা দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
খালেদা জিয়া ভারত সরকারের আমন্ত্রণে এক সপ্তাহের সফরে রোববার নয়াদিল্লি যান। এদিনই তিনি লোকসভায় বিরোধীদলীয় নেতা বিজেপি দলীয় সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর দুই নেতা একান্তে কিছু সময় কথা বলেন।
শমসের মবিন বলেন, “আমাদের নেতা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নিশ্চয়তা দিয়েছেন, বিএনপি সরকারে থাকলে ভারতের বিরুদ্ধে কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বা জঙ্গি বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে পারবে না।
সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতা নিরসনে খালেদা জিয়া একসঙ্গে কাজ করারও আগ্রহ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের আর এক বছর বাকি। এর আগে খালেদা জিয়ার ভারতে এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিএনপির প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও ভারতকে একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে। অবশ্য ভারতের কয়েকজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে গ্রেফতার করায় নয়াদিল্লি ও ভারতের সংবাদ মাধ্যমগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের কাজের প্রশংসা করেছে।
শমসের মবিন বলেন, মনমোহন সিং আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী নয়, জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে এমন সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলবে।
মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকে শমসের মবিন ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, সাবেক পররাষ্ট্র উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবেক কূটনীতিক সাবিহ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে ছিলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব পুলক চ্যাটার্জি ও পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাই।
এ বৈঠক শেষে মনমোহন সিংয়ের দেয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। এ সময় বিজেপি নেতা ও সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী এল কে আদভানী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশীদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার, প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি, আবুল হাসেম খান চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননসহ বেশ কয়েকজন রাজনীতিক ও পার্লামেন্ট সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
খালেদা জিয়া বৈঠক শেষে হোটেল তাজ প্যালেসে ফিরে যান। শমসের মবিন সেখানে বৈঠকের বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।
শমসের মবিন বলেন, খালেদা জিয়া বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ও সন্ত্রাসদের দমনে ভারতের সঙ্গে বিএনপিেএকত্রে কাজ করতে চায়। বিরোধীদলীয় নেতার এরকম আগ্রহে মনমোহন সিং তাকে ধন্যবাদ জানান।
এছাড়া সার্কের মাধ্যমে সন্ত্রাস দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব বলেও খালেদা জিয়া মনে করেন।
সীমান্ত হত্যা বন্ধ,অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণে গঠিত যৌথ কমিশনে বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করা, বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস, বিরোধপূর্ণ সীমান্ত সীমানা নির্ধারণসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলেচনা হয়।
উষ্ণ ও আন্তরিক, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে বলে শমসের মবিন উল্লেখ করেন ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে খালেদা জিয়া বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্কের যে বাতাবরণ গড়ে উঠেছে, তিনি আশাবাদী তা আগামীতে দুই দেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখবে।
এর জবাবে মনমোহন সিং বলেন, গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায় আমাদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। আপনার সঙ্গে আগামীতেও আরো কথা বলার সুযোগ হবে।
খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করে তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
মনমোহন সিং খালেদা জিয়াকে বলেছেন, ভারতের স্বার্থে বাংলাদেশে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেখতে চায় নয়াদিল্লি।
শমসের মবিন চৌধুরী বিরোধপূর্ণ সীমানার বিষয়ে বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেছেন, ল্যান্ড বাউন্ডারি অ্যাগ্রিমেন্টের জন্য কিছু অগ্রগতি হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে এজন্য তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
মনমোহন সিং-এর সঙ্গে বৈঠকে খালেদা জিয়া আশা প্রকাশ করেন, মহাত্মা গান্ধীর রাজনৈতিক আদর্শ স্মরণ করে সেই আদর্শের উত্তরসূরী হিসেবে ভারত তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে।
মঙ্গলবার বিকালে খালেদা জিয়া ভারতের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এই সফরে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ও কংগ্রেসপ্রধান সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও তার বৈঠকের কথা রয়েছে।
আজমীরে সুফি সাধক হজরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি (রহ.) মাজার জিয়ারতও বিরোধীদলীয় নেতার কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে। সফর শেষে আগামী ৩ নভেম্বর তিনি দেশে ফিরবেন ।
সর্বশেষ ২০০৬ সালে খালেদা জিয়া ভারত সফরে যান। সেবার তিনি গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে প্রতিবেশী দেশটিতে এটাই তার প্রথম সফর।
সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় নয়াদিল্লির ৭নং রেসকোর্সে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাসভবনে এই বৈঠক হয়।
ভারত সরকারের আমন্ত্রণে এক সপ্তাহের সফরে রোববার দুপুরে নয়াদিল্লি যান বিএনপি চেয়ারপার্সন। এদিন বিকেলে ভারতের লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকে সীমান্তে হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ জানান খালেদা।
খালেদা জিয়া ভারতের বিরোধীদলীয় নেতাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। সুষমা স্বরাজ আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন।
এদিন সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকের পর সন্ধ্যায় হোটেলে বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে দেখা করতে আসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাই।