ঈদের পর প্রথম হাটেই এ অঞ্চলের বৃহত্তম চামড়ার মোকাম রাজারহাটে চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে। মঙ্গলবার প্রথম হাটবারে বাজারে চাহিদার তুলনায় যোগান কম থাকায় ভালো দাম পেয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল জানান, মঙ্গলবার সবমিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজার গরু ও ২০ হাজার ছাগলের চামড়ার বেচাকেনা হয়েছে রাজারহাটে। এতে হাত বদল হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা।
তবে মঙ্গলবারের তুলনায় শনিবার ‘বড় হাট’ হওয়ায় আগামী শনিবারের জন্যও অনেক ব্যবসায়ী অপেক্ষা করছেন। ওইদিন আরও বেশি চামড়া বেচাকেনার আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
রাজধানী ঢাকার পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাটে মঙ্গলবার দিনভর চামড়া বিকিকিনি হয়েছে।
এদিন হাট ঘুরে দেখা গেছে, সূর্য ওঠার আগে থেকেই এ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার চামড়া ব্যবসায়ীরা নসিমন, করিমন, পিকআপ ভ্যানসহ বিভিন্ন বাহনে করে চামড়া নিয়ে জড়ো হতে থাকেন হাটে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরগরম হয়ে ওঠতে শুরু করে চামড়ার বাজার।
রাজারহাট চামড়া বাজারের ইজারাদার ও ব্যবসায়ী শেখ হাসানুজ্জামান হাসু জানান, মঙ্গলবারের হাটে ক্রেতার তুলনায় বিক্রেতা ছিল কম। হাটে চামড়ার আমদানিও তুলনামূলক কম। এ কারণে প্রথম হাটে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ভালো দাম পেয়েছেন।
গত বছর চামড়া বাজারে ধসের কারণে এবার প্রথম হাটে অনেকেই চামড়া না তুলে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
এদিন গরু, ছাগল মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার চামড়ার বেচাকেনা হয়েছে রাজারহাটে। সে হিসেবে টাকার পরিমাণে তা প্রায় ৫ কোটি টাকার মতো।
হাট ঘুরে দেখা গেছে, এদিন গরুর ভালো চামড়া বিক্রি হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। নিম্নমানের চামড়া বিক্রি হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৪০/৫০ টাকা দরে। ছাগলের চামড়া ভালোমানের বিক্রি হচ্ছে ৩শ টাকা পর্যন্ত। আর নিম্নমানের চামড়া ৮০ থেকে একশ টাকাও বিক্রি হচ্ছে।
রাজারহাটে চামড়া বিক্রি করতে আসা যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া এলাকার নিমাই দাস জানান, তিনি হাটে ৫টি চামড়া নিয়ে এসেছিলেন। বড় চামড়া ১৫/১৬শ টাকা এবং ছোট চামড়া ১ হাজার থেকে ১২শ টাকায় বিক্রি করেছেন।
যশোর শহরের চামড়া ব্যবসায়ী সাঈদ আহমেদ নাসির শেফার্ড জানান, তিনি ৬০ থেকে ৭৫ টাকা বর্গফুট দরে প্রায় ৪শ চামড়া কিনেছেন। বাজারে চামড়ার দাম বেশ ভাল বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সদরের এড়েন্দা-দত্তপাড়া থেকে চামড়া বিক্রি করতে আসা সুধীর দাস জানান, গত বছর তিনি ২৪ হাজার টাকা লোকসান দিয়ে ছিলেন। এবার হাটে দাম ভালো। এ কারণে খরচ খর্চা বাদ দিয়ে লাভ থাকবে বলে তিনি আশাবাদী।
নাটোর থেকে যশোরের রাজারহাটে চামড়া কিনতে আসা ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম মিলন জানান, তিনি মূলত ছাগলের চামড়া কিনছেন। ২শ ৮০ থেকে ৩শ টাকা দরে দুপুরের মধ্যেই তিনি হাজার খানেক চামড়া কিনেছেন। বাজার এবার বেশ ভালো বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
হাটের সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল জানান, গতবারের লোকসানের কারণে এবার প্রথম হাটে অনেকেই চামড়া আনেননি। আবার ট্যানারি মালিকরা দাম বেধে না দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত ঢাকায় কি দরে চামড়া বিক্রি করতে পারবেন তা নিয়েও আতঙ্ক রয়েছে।
তিনি আরও জানান, আগামী শনিবার মূল হাট বসবে। এখানকার আড়ৎদাররা চামড়া স্টক করে রেখেছেন। যে কারণে হাটে সেভাবে চামড়ার সমাগম হয়নি।
তবে প্রশাসনের নজরদারির কারণে এবার এখনও চামড়া পাচার হয়নি উল্লেখ করে তিনি এ নজরদারি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।