দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জিজ্ঞাসাবাদে নির্দোষ দাবির পর আবারো নিজেকে ‘সম্পূর্ণ নির্দোষ’ বলে দাবি করেছেন হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত সোনালী ব্যাংকের সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আতিকুর রহমান।
তার বিরুদ্ধে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তোলা ১৯ অভিযোগের এক লিখিত জবাবে আতিকুর রহমান নিজেকে ১৭ বার ‘সম্পূর্ণ নির্দোষ’ বলে দাবি করার পাশাপাশি অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদান এবং আত্মপক্ষ সমর্থন করে ব্যক্তিগত শুনানির সুযোগ চেয়েছেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ১৪ ডিসেম্বর থেকে ২০১১ সালের ১৬ আগস্ট পর্যন্ত সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ে ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অর্থায়ন’ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আতিকুর রহমান। ওই সময়ে সোনালী ব্যাংকের রূপসীবাংলা (সাবেক শেরাটন) কর্পোরেট শাখায় বৈদেশিক বাণিজ্যে যেসব অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে সেজন্য আতিকুর রহমানকে অভিযুক্ত করে গত ৩ অক্টোবর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে চিঠি পাঠানো হয়। গত ২৩ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর লিখিত জবাব দেন তিনি। আতিকুর রহমানের লিখিত জবাব অর্থ মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করে দেখছে। এদিকে হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদক যে ১১টি মামলা দায়ের করেছে সেসব মামলায় আতিকুর রহমানকেও আসামি করা হয়েছে।
দীর্ঘ সাড়ে চার পৃষ্ঠার লিখিত জবাবে আতিকুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ‘অসত্য’ দাবি করে বলেন, সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির ঘটনা সোনালী বাংক প্রধান কার্যালয় কোনভাবেই জানতো না এবং রূপসীবাংলা শাখা থেকে প্রধান কার্যালয়কে এ বিষয়ে কখনোই জানানো হয়নি। এমন কি ব্যাংকের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অর্থায়ন বিভাগে দায়িত্ব পালনকালে হলমার্ককে অবৈধ ঋণ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে এমন কোনো অভিযোগও তার কাছে আসেনি।
অথচ এ সময়ের মধ্যেই হলমার্ক গ্রুপসহ নামসর্বস্ব আরো কয়েকটি কোম্পানি রূপসী বাংলা শাখা থেকে ঋণের নামে সাড়ে তিন হাজার কোটি আত্মসাৎ করে।
এর সম্পূর্ণ দায় রূপসী বাংলা শাখার তৎকালীন ব্যবস্থাপক আজিজুর রহমানের উপর চাপিয়ে
আতিকুর রহমান দাবি করেন যে, তার দায়িত্বকালে সময়ে রূপসী বাংলা শাখায় বৈদেশিক বাণিজ্যে দায় ছিল মাত্র ৫শ’ কোটি টাকা। তবে হলমার্ক যে প্রক্রিয়ায় টাকা তুলে নিয়েছে সেটাকে ব্যাংকের ওই শাখার দৈনন্দিন কার্যক্রম বলেই উল্লেখ করেন তিনি।
আতিকুর রহমানের পর সোনালী ব্যাংকের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অর্থায়ন বিভাগের দায়িত্ব পান আরেক সাবেক ডিএমডি মইনুল হক।
লিখিত জবাবে আতিকুর রহমান সাবেক ডিএমডি মইনুল হকের উপর দায় চাপিয়ে দিয়ে বলেন, এলসি খোলা, এলসি নিষ্পত্তি ও ইনল্যান্ড বিল পারচেজ ইত্যাদি অন্য একাধিক ব্যাংকের সঙ্গেও হয়েছে। এসব লেনদেন ছিল সোনালী ব্যাংকের দৈনন্দিন কাজ। এসব কাজ প্রধান কার্যালয়ের নয়, ব্যাংকের শাখা পর্যায়ে সম্পন্ন হয়ে থাকে।
হলমার্ক গ্রুপের আওতাধীন যেসব প্রতিষ্ঠান পণ্য আমদানির নামে এলসি খুলেছে সেসব প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য ব্যাংক হিসাব ছিল সোনালী ব্যাংকের একাধিক শাখায়।
শুধু তাই নয়, অন্য আরো ২৫টি সরকারি-বেসরকারি তফসিলি ব্যাংকে এসব ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ছিল। এক্ষেত্রে ভুয়া প্রতিষ্ঠানগুলো এতোগুলো ব্যাংকে কিভাবে হিসাব খুলেছে লিখিত জবাবে এমন প্রশ্নও তুলেছেন আতিকুর রহমান।