পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদনে বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত বা বিভ্রান্ত করতে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ডিএসই’র।
এরই মধ্যে কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে ডিএসই যেসব অনিয়ম শনাক্ত করেছে সে সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়ে কোম্পানি সচিব বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ।
ডিএসই’র ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করতে আর্থিক প্রতিবেদনে ভুল তথ্য সরবরাহ করেছে। গত ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানির অর্থিক প্রতিবেদনে নিট সম্পদ মূল্যসহ কয়েকটি বিষয়ে কারসাজি করেছে কোম্পানিটি।
নিট সম্পদ মূল্যে কারসাজি : প্রতিবেদনে কোম্পানির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) দেখানো হয়েছে ১৭ দশমিক ৩৯ টাকা। সম্পদ মূল্য নির্ধারণে ৩৫ কোটি ৬৪ লাখ ২৪ হাজার ৬৫৮টি ওয়েটেড এভারেজ শেয়ার সংখ্যা বিবেচনা করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েটেড এভারেজ শেয়ার সংখ্যা শুধুমাত্র শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) নির্ধারণে বিবেচনা করা হয়। শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য নির্ধারণে লেনদেনযোগ্য শেয়ার (ওয়েটেড এভারেজ) সংখ্যা বিবেচনা করা যায় না।
কোম্পানি যেহেতু বুক ভ্যালু মেথডে তালিকাভুক্ত তাই নিয়ম অনুযায়ী নিট সম্পদমূল্য নির্ধারণে নিট ইক্যুইটিকে মোট শেয়ার সংখ্যা (আউটস্ট্যান্ডিং শেয়ার সংখ্যা) দিয়ে ভাগ করতে হবে। কোম্পানির আউটস্ট্যান্ডিং শেয়ার সংখ্যা ৪৪ কোটি ১০ লাখ। সুতরাং এ নিয়ম অনুযায়ী কোম্পানির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ০৫ টাকা।
চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রতিবেদনে শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য ৩ দশমিক ৩৪ টাকা বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। যা বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করে এবং কোম্পানির শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়ে ওঠে।
চলমান দায় ও পুরাতন দায়ে কারসাজি : কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে চলমান দায় (কারেন্ট লায়াবিলিটি) অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বা কমিয়ে দেখানো হয়েছে। পুরাতন দায় (নন-কারেন্ট লায়াবিলিটি) অতিমূল্যায়িত করা হয়েছে বা অতিরঞ্জিত করা হয়েছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের ১৫ নম্বর ধারায় কোম্পানির ইজারা দায় (লিজ লায়াবিলিটি) দেখানো হয়েছে ২৪০ কোটি ১৫ লাখ ৮৩ হাজার ৮৫৭ টাকা। এ তথ্য ভুল বলে মনে করে ডিএসই।
উড়োজাহাজ ক্রয়ে কারসাজি : প্রতিবেদনের ২.০১ ধারায় বলা হয়েছে, গত অর্থ বছরে অতিরিক্ত উড়োজাহাজের জন্য কোম্পানির ব্যয় হয়েছে ২১৪ কোটি ১৬ লাখ ৬৯ হাজার ৯৬৯ টাকা। প্রতিবেদনের এ তথ্যে সন্দেহ প্রকাশ করেছে ডিএসই।
এজন্য কোম্পানি সচিবের কাছে উড়োজাহাজ বিক্রেতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য, ইজারা চুক্তি, মূল্যসহ বিক্রিত পণ্যের তালিকা, ব্যাংক হিসাব, মুদ্রা বিনিময়ের হার এবং ইঞ্জিনিয়ারের কাছ থেকে পাওয়া সার্টিফিকেট ডিএসইতে জমা দিতে বলেছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া, কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে মুনাফা, সম্পদ এবং দায় বিভিন্নভাবে অবমূল্যায়ন বা অতিমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ডিএসই।
অবশ্য ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে কোনও অফিসিয়াল মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।