ভোর হয়েছে নিউইয়র্কে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই সানিসাইড, উডসাইড এলাকায় দু-চারটি গাড়ি চলতে দেখা গেছে। দুই একজন করে মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছেন কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে। রাস্তার কোনায় কোনায় কফি শপ, খাবারের দোকানও কিছু কিছু খুলেছে।
২৪ ঘণ্টার ফার্মেসি সিভিএস সোমবার রাতে বন্ধ দেখা গেলেও খুব ভোরেই তারা আবার খুলেছে। কফিশপ থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়িতে উঠতে উঠতে বাংলাদেশি ট্যাক্সি ড্রাইভার নজরুল বলছিলেন, ‘‘ধারণা করছি, আজ (মঙ্গলবার) পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’’
তবে মেট্রো রেল এখনো চালু হয়নি। ফোর্টি স্ট্রিটের সাবওয়েতে গিয়ে দেখা গেছে, এখনো লালফিতায় আটকানো রয়েছে সাবওয়ের প্রবেশপথ। সে কথাই বলছিলেন রোন্টারিও নামের এক পথচারী। কাজের জন্য যেতে তিনিও ঘর থেকে বের হয়েছেন। সেখানেই দেখা আরেক বাংলাদেশি টুটুলের সঙ্গে। টুটুল বললেন, ‘‘সাবওয়ে হয়তো দুই দিনেও খোলা সম্ভব হবে না। কারণ, যেসব এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে সেখান থেকে পানি সরানোর পর তা আবার চলাচল উপযোগী করতে সময় লাগবে।’’
টুটুল বলেন, যে ভয়াবহ ঘটনা কাল (সোমবার) রাতে ঘটে গেছে, কেবল নিউইয়র্ক বলেই এত কম প্রাণহানি ঘটেছে। বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশে এমন ঘটনায় হাজার হাজার প্রাণহানি ঘটতে পারতো।’’
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নিউইয়র্ক সিটিতে ‘বড় বিপর্যয়’ ঘটে গেছে বলে উল্লেখ করেছেন।
স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যায় ১৪ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস আর স্যান্ডির করাল ছোবলে লণ্ডভণ্ড নিউইয়র্কসহ আশপাশের এলাকার প্রায় ৬০ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। এর ফলে সোমবার রাতে ভূতুড়ে অন্ধকারে ডুবে থাকে পুরো এলাকা। জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে তাদের দানবের মতো জাপটে ধরে থাকে অন্ধকার। নগরের এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে খাবি খেতে হয় উদ্ধার কর্মীদের।
বেসরকারি হিসেবে, স্যান্ডির আঘাতে নিউইয়র্কসহ আশপাশের এলাকায় এ পর্যন্ত ১৬ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। কেবল নিউইয়র্কেই প্রাণহানি হয়েছে ৬ জনের।
এদিকে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় নবজাতকসহ রোগীদের প্রায় ৪০টি অ্যাম্বুলেন্সে করে নিরাপদ হাসপাতালে সরিয়ে নেওয়া হয়।
নিউইয়র্কের বেলেভিউ হাসপাতালের বেজমেন্টও পানিতে প্লাবিত হয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। সেখান থেকে রোগীদের নিরাপদে নিকটস্থ হাসপাতালে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটনের ১৪ স্ট্রিটের থেকে নিচে ব্যাটারি পার্ক পর্যন্ত নিম্নপূর্বাঞ্চল ও নগরের মধ্যাঞ্চলের (ডাউনটাউন) ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ব্যাটারি পার্ক সিটি এলাকা কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ডাউনটাউনের ৭টি সাবওয়ে টানেল (ভূগর্ভস্থ রেলপথ) স্যান্ডির আঘাতে ইস্ট রিভার থেকে উপচে পড়া জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে। নদীর নিচ দিয়ে যাওয়া সুড়ঙ্গ পথ ব্রুকলিন ব্যাটারি টানেলেও পানি ঢুকে পড়েছে।
প্রচণ্ড ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে।
উল্লেখ্য, হারিকেন স্যান্ডির আঘাতে রেকর্ড গড়া ১৩/১৪ ফুট উচ্চতায় পানির ঢেউকে ৫০ বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনা বলে বর্ণনা করেছেন নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কোমো। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহে কন এডিসন কর্তৃপক্ষ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এতো ব্যাপক হারে বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনাকে নিউইয়র্কের ইতিহাসে এই প্রথম বলে উল্লেখ করেছে।
তবে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে কতো দিন সময় লাগবে সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না তারা। স্যান্ডির ছোবলজনিত বিপুল এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কতো সময় লাগবে তা তাদেরও জানা নেই ।