মঙ্গলবার প্রচার হতে পারে ‘ঘেটুপুত্র কমলা’

মঙ্গলবার প্রচার হতে পারে ‘ঘেটুপুত্র কমলা’

তথ্য মন্ত্রণালয়ের আপত্তিকর অংশ বাদ দেওয়া সাপেক্ষে মঙ্গলবার প্রচার হতে পারে নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে শিশুদের কথা ভেবে ঈদের দিন রাতে এই প্রদর্শনী স্থগিত করা হয়।

সবকিছু ঠিক থাকলে চ্যানেল নাইনে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে প্রচার হতে পারে ছবিটি। চ্যানেল নাইনে নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ দেখার সুযোগ পাবেন দর্শকেরা।

হুমায়ূন আহমেদের কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও পরিচালনায় নির্মিত সর্বশেষ ছবি ‘ঘেটুপুত্র কমলা’।

এ বিষয়ে চ্যানেল নাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনায়েতুর রহমান বাপ্পী জানান, আশা করছি মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে ছবিটি দর্শকদের দেখাতে পারবো। তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঈদের আগের দিন চলচ্চিত্রটির প্রচার পেছানোর জন্য অনুরোধ করেন। তাই পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ঈদের দিন রাতে ছবিটি প্রচার করা সম্ভব হয়নি। আমরা এরই মধ্যে ছবি থেকে কিছু অংশ বাদ দিয়েছি। এরপর আর কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়।

হুমায়ূন আহমেদের কাহিনী, চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ছবিটির অন্যতম বিষয়বস্তু কিশোর সমকাম। তার লেখা ‘একজন সৌখিনদার মানুষ’ গল্প থেকে ছবিটির চিত্রনাট্য তৈরি করা হয়েছে।

হুমায়ূন আহমেদ ছবিটি নির্মাণ সময়ে এবং প্রেক্ষাগৃহে বিশেষ প্রদর্শনীর সময়ে দর্শকদের কাছে উল্লেখ করেছিলেন, ছবিটি শিশুদের জন্য নহে, শিশুদের সঙ্গে নিয়ে ছবিটি দেখা নিষেধ।

টেলিভিশন পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এবং হুমায়ূন আহমেদ শিশু-কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ সবারই পছন্দের লেখক, নির্মাতা। ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ টেলিভিশনে প্রচার করলে ছবিটি সবাই মিলে উপভোগ করতে সমস্যা হবে বা পরিবারের সবাই মিলে ছবিটি উপভোগ করতে পারবে না। তাই পারিবারিকভাবে ছবিটি দেখতে যেন কোনো সমস্যা না হয়- সে লক্ষ্যে প্রচারের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট অংশ কর্তন করা হবে। আর আপত্তিকর অংশ সাপেক্ষেই ছবিটি চ্যানেল নাইনে প্রচার করা হবে।

ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় ছবিটি হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত শেষ ছবি। এতে ঘেটুপুত্র কমলার নামভূমিকায় অভিনয় করেছে কিশোর অভিনেতা মামুন। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান, মুনমুন আহমেদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, তমালিকা কর্মকার, প্রাণ রায়, শামীমা নাজনীন, কুদ্দুস বয়াতি, আগুন প্রমুখ।

ছবিটির নৃত্যপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মেহের আফরোজ শাওন। এর প্রধান সহকারী পরিচালক হিসেবে ছিলেন নাট্যপরিচালক জুয়েল রানা।

৮৫তম অস্কার প্রতিযোগিতায় ‘সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র’ বিভাগের জন্য বাংলাদেশ থেকে মনোনয়ন পেয়েছে ‘ঘেটুপুত্র কমলা’।

সিনেমাটির কাহিনীর পঠভুমিতে রয়েছে- রায় দেড়শ বছর আগে হবিগঞ্জ জেলার জলসুখা গ্রামের এক বৈষ্ণব আখড়ায় ঘেটুগান নামে নতুন সঙ্গীতধারা সৃষ্টি হয়েছিল। মেয়ের পোশাক পরে কিছু সুদর্শন কিশোর নাচগান করত। এদের নামই ঘেটু। গান হতো প্রচলিত সুরে, কিন্তু সেখানে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের প্রভাব ছিল স্পষ্ট।

অতি জনপ্রিয় এই সঙ্গীতধারায় নারী বেশধারী কিশোরদের উপস্থিতির কারণেই এর মধ্যে অশ্লীলতা ঢুকে পড়ে। বিত্তবানরা এইসব কিশোরকে যৌনসঙ্গী হিসেবে পাবার জন্যে লালায়িত হতে শুরু করেন।

একসময় সামাজিকভাবে বিষয়টা স্বীকৃতি পেয়ে যায়। হাওর অঞ্চলের বিত্তবান শৌখিন মানুষরা জলবন্দি সময়টায় কিছুদিনের জন্যে হলেও ঘেটুপুত্র নিজের কাছে রাখবেন এই বিষয়টা স্বাভাবিকভাবে বিবেচিত হতে থাকে। আর তাদের স্ত্রীরা ঘেটুপুত্রদের দেখতেন সতীন হিসেবে। মেয়েদের অনুপস্থিতে তাদেরই পোশাক পরে, আলতা নুপুর সহযোগে, জবড়জং মেকাপ-পাউডার লাগিয়ে কিছু রূপবান কিশোর অভিনয় ও নৃত্যগীতিতে অংশ নিতো। এদেরকেই বলা হতো ঘেঁটু। যদিও তাদের গাওয়া নৃত্য ও গীতি ছিল অনেকটাই সাধারণ প্রচলিত ধারার। এখানে অনেকটা রাগ সঙ্গীত ও উচ্চাঙ্গ ধারার সুস্পষ্ট প্রভাব ছিল।

নারীর আদলে একই পোশাক ও সাজসজ্জায় সুদর্শন কিশোরদের উপস্থিতি এই সংগীত ঘরানাকে কলুষিত করে। বিকৃত রুচির জমিদার ও বিত্তবান লোকজন বাইজীর পাশাপাশি এইসব কিশোরদের তাদের লালসা চরিতার্থ করা ও প্রমোদে ব্যবহার করা হতো।

সামাজিকভাবে বিষয়টা অনেক ধিক্কার ও ঘৃণার সাথে দেখা হলেও জোর যার মুল্লুক তার এই নীতির ভিত্তিতে বৃহত্তর হাওর অঞ্চলের বিত্তবান কুরুচিপূর্ণ মানুষ জলবন্দি সময়টায় কিছুদিনের জন্যে হলেও একজন ঘেটুপুত্র নিজের কাছে রাখবে এই বিষয়টা স্বাভাবিক মনে করতে থাকে। শেষে কমলা মারা গেলেও টাকার বিনিময়ে তা চাপা দেওয়া হয়।

এমন এক ঘেটুপুত্রের গল্প নিয়েই হুমায়ুন আহমেদের ‘ঘেটুপুত্র কমলা’।

‘ঘেটুপত্র কমলা’ হবে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যানারে হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত চতুর্থ ও শেষ ছবি। এর আগে তিনি ইমপ্রেস থেকে ‘শ্যামল ছায়া’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’ এবং ‘আমার আছে জল’ নির্মাণ করেছেন। এছাড়া হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত ‘আগুনের পরশমণি’ ও ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবি দুটির স্বত্বও সম্প্রতি গ্রহণ করেছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম।

এর বাইরে জনপ্রিয় এই ঔপন্যাসিকের কাহিনী নিয়ে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় আরো চারটি ছবি নির্মিত হয়েছে। এগুলো হলো ‘দূরত্ব’, ‘সাজঘর’, ‘নিরন্তর’ ও ‘দারুচিনি দ্বীপ’।

বিনোদন