খালে ময়লা ফেললে গুনতে হবে জরিমানা : ডিএনসিসি মেয়র

খালে ময়লা ফেললে গুনতে হবে জরিমানা : ডিএনসিসি মেয়র

খালে কেউ ময়লা ফেলেছে এটা প্রমাণিত হলে তাকে জরিমানা গুনতে হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। এ সময় তিনি আরবান রেজিলিয়েন্স এবং রিসার্চের জন্য আগামী অর্থবছরে ৫ কোটি টাকার বাজেট রাখার ঘোষণা দেন।

আজ মঙ্গলবার (২৮ মে) বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ‘অষ্টম আরবান ডায়ালগ-২০২৪’ এর প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন ঘোষণা দেন।

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পথে টেকসই নগরায়ণ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ডায়ালগটি ঢাবির ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগ এবং ২০টি আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কনসোর্টিয়াম আরবান আইএনজিও ফোরামের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হয়।

ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ঢাকার খালগুলো আমরা দখলমুক্ত করেছি। এখন সময় এসেছে খালগুলোকে দূষণমুক্ত রাখার। আমরা নিজের কথা ভেবেই সব খাল মেরে ফেলেছি, আমরা আমাদের কথা ভাবলে সেগুলোকে নষ্ট করতাম না। মানুষ সচেতন না, ময়লা ফেললে জরিমানার ব্যবস্থা করা হলে মানুষের মাঝে কিছুটা সচেতনতা বাড়বে। সিটি কর্পোরেশন থেকে খালের আশেপাশে অনেকগুলো ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। কেউ খালে ময়লা ফেলেছে এটা প্রমাণিত হলে তাদের শনাক্ত করে তাদের জরিমানার আওতায় নিয়ে আসা হবে।

তিনি বলেন, বিশ্বের উন্নত ছয়টি দেশ কার্বন এমিশনের জন্য দায়ী। তাদেরই বিশ্বের সমস্যা দূর করতে এগিয়ে আসতে হবে। তারা যুদ্ধের জন্য যা ব্যয় করছে তার ১০ শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ব্যয় করলেও স্বল্পোন্নত দেশগুলো এত ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। তারা ভালো ভালো সবক দেন কিন্তু তারাই আসলে মূল অপরাধী। বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে বাঁচাতে বড় ফান্ড গঠন করতে হবে।

মেয়র আতিক বলেন, আগামীর ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুন্দর পরিবেশ দিতে আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে। পরিবেশ ঠিক রাখতে আমাদের সচেতন হতে হবে, সুনাগরিক হতে হবে। আমরা দুই বাড়ির মাঝে বা খালে ময়লা না ফেলবো না। পরিবেশ ঠিক রাখতে নিজ বাড়ির পাশে গাছ লাগাবো। এতে আমাদের পরিবেশ ঠিক থাকবে। এ সময় তিনি খাল দখলমুক্ত, দূষণমুক্ত রাখার জন্য সাংবাদিক ও সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান।

ডিএনসিসির কাজ উল্লেখ করে মেয়র আতিক বলেন, আমরা স্মার্ট সিটি কর্পোরেশন গড়তে ২৪টি পার্ক উদ্ধার করেছি, ৫৪টি খাল দখলমুক্ত করেছি। আমাদের ট্যাক্স প্রদানে সমস্যা দূর করতে অনলাইনে করেছি। ট্রেড লাইসেন্স অনলাইনভিত্তিক করেছি। অনলাইনে অভিযোগ প্রদানের ব্যবস্থা করেছি। ‘সবার ঢাকা অ্যাপস’ চালু করেছি যেখানে কেউ সমস্যার ছবি তুলে জানাতে পারবে। ফলে আমাদের লোকেরা সাথেসাথে সেখানে গিয়ে সমস্যা সমাধান করে আসবে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণ করেছি। এডিস মশা দূর করার জন্য অভিযান চালাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।

তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলো আগে পরিকল্পনা গ্রহণ করে তারপর আরবান এলাকা গঠন করে। কিন্তু আমাদের দেশে আগে আরবান এলাকা তৈরি হয় পরবর্তীতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। যদিও বাংলাদেশের ৪০ শতাংশ মানুষ আরবান এলাকায় বসবাস করে। অপরিকল্পিতভাবে শহর গড়ে উঠায় সেখানে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে পারে না। যা বড় রিস্কের তৈরি করে থাকে। তাছাড়া আমাদের সবুজায়ন কমে গেছে, নদী-খাল-বিলের পরিমাণও কমেছে। ফলে প্রতিনিয়ত শহরাঞ্চলের তাপমাত্রা বাড়ছে।

তিনি বলেন, আমাদের শহরাঞ্চলের বাতাসে মিথেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ অনেক বেশি। এমনকি কোভিড শুরুর কয়েক মাস ঢাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও দূষণের পরিমাণ বেশি ছিল। বর্তমান সরকার ‘মাই ভিলেজ মাই টাউন’ সৃষ্টির পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। এর ফলে গ্রামাঞ্চলও শহরের মত সুযোগ সুবিধা থাকবে। ফলে মানুষ মাইগ্রেট কমিয়ে তার এলাকাতেই থাকতে পছন্দ করবে। তাছাড়া সরকার শহরের ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, খাল দখল এবং ডেল্টা প্লানের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের আরবান এলাকাগুলো আবার বসবাসযোগ্য হয়ে উঠবে।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর