তত্ত্বাবধায়কের পক্ষে ৪৪ শতাংশ দল, বিপক্ষে ২৬ শতাংশ

তত্ত্বাবধায়কের পক্ষে ৪৪ শতাংশ দল, বিপক্ষে ২৬ শতাংশ

নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন ইস্যুতে ডাকা সংলাপে সব দলকে এক সুরে বাঁধতে পারেননি রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান।

গত ২২ ডিসেম্বর থেকে চলতি জানুয়ারির ১২ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ সংলাপে অংশ নেওয়া ২৩টি দলের মধ্যে ৪৪ শতাংশই মূল এজেন্ডা ‘ইসি গঠন’ এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুন:প্রবর্তনের জোর দাবি তুলেছে। অপরদিকে ২৬ শতাংশ দল মহাজোট নেতা আওয়ামী লীগের সুরে সুর মিলিয়ে অবস্থান নিয়েছে তত্ত্বাবধায়কের বিপক্ষে।

এর বাইরে আরো ৩০ শতাংশ রাজনৈতিক দল নির্ধারিত এজেন্ডার বাইরে কোন ইস্যুই আলোচনায় তোলেনি।

সংলাপে বিএনপিসহ দশটি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রপতির কাছে ইসি গঠনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি তুলেছে। আবার আওয়ামী লীগসহ ৬টি রাজনৈতিক দল কড়া অবস্থান নিয়েছে তত্ত্বাবধায়কের বিপক্ষে।

কিছু রাজনৈতিক দল আবার নির্ধারিত এজেন্ডার বাইরে না গিয়ে ইসি গঠনে দিয়েছে নানা মত। তবে বেশিরভাগে রাজনৈতিক দলই ইসি নিয়োগে একটি নির্দিষ্ট আইন ও বিধি প্রণয়নে রাষ্ট্রপতিকে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে সার্চ কমিটি গঠন ও প্রয়োজনে অধ্যাদেশ জারির প্রস্তাবও তুলেছে কেউ কেউ।

আওয়ামী লীগসহ তত্ত্বাবধায়কের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া দলুগলো হলো-সাম্যবাদী দল, তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), ইসলামী ঐক্যজোট ও গণতান্ত্রিক ইসলামী ঐক্যজোট।

তত্ত্বাবধায়কের দাবি না তুলে নির্ধারিত এজেন্ডায়ই আলোচনা চালিয়েছে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ইনু, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (জেপি-মঞ্জু), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও ইসলামিক ফ্রন্ট।

আর আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দিনের মিত্র বলে বিবেচিত বাংলাদেশের কম্যুউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ অনুসারে আরও দু’দফা নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হলে সেটা ভালো হবে বলে জানিয়ে এসেছে রাষ্ট্রপতির কাছে।

অপরদিকে সংলাপের নির্ধারিত এজেন্ডায় আলোচনায় উৎসাহ না দেখিয়ে মূলত তত্ত্ববধায়কের দাবিই তুলে এসেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।

তাদের অনুসরণ করেছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি-পার্থ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বিকল্প ধারা, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), গণফোরাম।

আওয়ামী লীগ

১২ জানুয়ারি বঙ্গভবনের ক্যাবিনেট হলে জিল্লুর রহমানের সঙ্গে আলোচনা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি যে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন আমরা তা মেনে নেবো।’

রাষ্ট্রপতি গঠিত পরবর্তী নির্বাচন কমিশনের প্রতি সব রাজনৈতিক দলের আস্থা থাকবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘সংবিধানে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া একক ক্ষমতা অনুসারে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।’

‘দেশের ইতিহাসে এটি হচ্ছে এ ধরনের প্রথম উদাহরণ, যা গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় খুবই ইতিবাচক’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আশা করি রাষ্ট্রপতির এ ধরনের উদ্যোগ আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।’

সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি নতুন কোন আইনের প্রস্তাব করলে জাতীয় সংসদ অবশ্যই তা গ্রহণ করবে।’

তবে রাষ্ট্রপতি কোন ধরনের অবাস্তব আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করবেন না বলে তিনি দৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ‘সরকার গঠনের মতো নির্বাচন কমিশন গঠনও একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এটি শূন্য রাখার কোনো সুযোগ নেই।’

আশরাফ বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে নির্বাচন কমিশন অবশ্যই গঠন করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এখনো বর্তমান সরকারের মেয়াদ আরো দুই বছর রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মতো অনেক নির্বাচনের প্রয়োজন পড়বে।’

বিএনপি

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দলের ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ১১ জানুয়ারি বঙ্গভবনের কেবিনেট কক্ষে সকাল ১১টা থেকে এক ঘণ্টা স্থায়ী সংলাপে অংশ নেন।

আলোচনা শুরুর আগে রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও প্রতিনিধিদলকে আন্তরিক অভ্যর্থনা জানিয়ে সংলাপে যোগ দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানান।

এ বৈঠকে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি আশা করি আপনাদের মতামত নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে বিএনপি চেয়ারপার্সন বঙ্গভবনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের জানান, তার দল আজ বিএনপি কার্যালয়ে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক সাংবাদিক সম্মেলন ডাকবে।

পরে দুপুরে সংবাদ সম্মেলন ডেকে দলটি সংলাপ ফলপ্রসূ হয়নি মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতিকে সবার আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি জানায়।

জাতীয় পার্টি (এরশাদ)

২২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ শেষে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নতুন নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগে কোনো নাম প্রস্তাব করিনি। তবে, আমরা এ ব্যাপারে একটি সার্চ কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই।’

জাসদ (ইনু)

জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু সংলাপ শেষে বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগে রাষ্ট্রপতিকে নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ার জন্য বিধি-বিধান করার পরামর্শ দিয়েছি। আমরা অনধিক ১০ সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠনের কথা বলেছি।’

তিনি বলেন, ‘এই সার্চ কমিটি সম্ভাব্য নির্বাচন কমিশনারদের নামের তালিকা তৈরি করে তা সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটিতে পাঠাবে। সংসদীয় কমিটি সার্চ কমিটির তালিকা থেকে নাম চূড়ান্ত করে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে।’

‘সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির পাঠানো সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ইনু বলেন, ‘বিভিন্ন সাংবিধানিক পদে কর্মরত বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা সার্চ কমিটির সদস্য হতে পারবেন।’

জাসদ সভাপতি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি তাদের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে বলেছেন- রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দিতে হলে কিছু স্থায়ী বিধি-বিধান থাকা প্রয়োজন।’

জাতীয় পার্টি (মঞ্জু)

রাষ্ট্রপতির সংলাপে ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) সংবিধানে বর্ণিত বিদ্যমান প্রক্রিয়ায় পরবর্তী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে বলে অভিমত দিয়েছে।

সংলাপ শেষে জেপি সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমান প্রক্রিয়া অনুযায়ী গঠিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে আমি ৫টি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি, অতএব আমি বলতে পারি না যে এই প্রক্রিয়া অকার্যকর।’

জেপি সভাপতি বলেন, ‘তবে নির্বাচন কমিশন সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংলাপের কোন বিকল্প নেই।’

ওয়ার্কার্স পার্টি

২৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সংলাপে ওয়ার্কার্স পার্টি প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য সংবিধানের ১১৮ ধারার আওতায় আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দেয়।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে আমরা একটি সার্চ কমিটি গঠন ও অর্ডিন্যান্স জারির প্রস্তাব করেছি।’

মেনন আরো বলেন, ‘আমরা প্রধান বিচারপতি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের মত সাংবিধানিক পদে নিয়োজিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নাম সংসদের কার্য-উপদেষ্টা কমিটিতে পাঠাবে। কমিটি এর ওপর শুনানি ও এর ভিত্তিতে নামের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করবে। রাষ্ট্রপতি এই সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশন ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন।’

মেনন জানান, তারা নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন প্রণয়ণে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার, অন্যথায় অধ্যাদেশ জারির পরামর্শ দিয়েছেন।

সিপিবি

২৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিও (সিপিবি) নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়নের পক্ষে মত প্রকাশ করে।

সংলাপ শেষে সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনারদের প্রত্যেক মেয়াদে নিয়োগের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে আমরা রাষ্ট্রপতিকে আনুরোধ করেছি।’

সিপিবি সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘শুধু নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের বিষয়েই নয়, আগামী নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে সংলাপে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেছি।’

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতিকে বলেছি- নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে পেশী শক্তি, কালো টাকা ও প্রশাসনের প্রভাব বিস্তার বন্ধ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে জনগণ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল বলেই দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ অনুসারে আরও দু’দফা নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হলে, সেটা ভালো হবে।’

রাষ্ট্রপতির সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে সেলিম বলেন, ‘সাংবিধানিক পদাধিকারীদের সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের জন্য তার দল রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

প্রস্তাবনা অনুসারে, অনুসন্ধান কমিটি সম্ভাব্য নির্বাচন কমিশনারদের নামের তালিকা সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটিতে পাঠাবে।

ওই সংসদীয় কমিটি প্রস্তাবিত নামগুলোর মধ্য থেকে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে, তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে।

পরে, রাষ্ট্রপতি তাঁর সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে ওই সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন।

সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনী ইস্যুতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও সংলাপ অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)  রাষ্ট্রপতির সংলাপে নির্বাচন কমিশন গঠনের চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

সংলাপ শেষে বেরিয়ে এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতিকে বলেছি-যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা হয় তাহলে আমরা নতুন নির্বাচন কমিশনারদের নাম প্রস্তাব করবো।’

তিনি জানান, তারা রাষ্ট্রপতিকে বলেছেন- দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা প্রয়োজন।

অলি বলেন, ‘নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে আমরা রাষ্ট্রপতির প্রতি আহবান জানিয়েছি।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের জন্য সুনির্দিষ্ট একটি আইন থাকা উচিত।’

তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য প্রতি পাঁচ বছরে একবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বসার কোনো মানে হয় না।’

তিনি জানান, আইনগত কাঠামোর আওতায় একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিতামূলক ও গ্রহণযোগ্য পন্থায় নির্বাচন কমিশনার, সরকারি কর্মকমিশনের সদস্য ও উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের জন্য একটি শক্তিশালী কমিটি গঠনের জন্য তারা রাষ্ট্রপতিকে আহবান জানিয়েছেন।

ইসলামিক ফ্রন্ট

ইসলামিক ফ্রন্ট নির্বাচন কমিশনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে ১২ জনের নাম প্রস্তাব দিয়েছে।

সংলাপ শেষে ইসলামিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা জয়নাল আবেদীন জুবায়ের সাংবাদিকদের বলেন, ‘একজন নারীসহ নির্বাচন কমিশনকে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট করতে হবে।’

সৈয়দ মোহাম্মদ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদীর নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি দল সংলাপে অংশ নেন।

তাদের প্রস্তাবিত নামগুলো হচ্ছে- অ্যাপিলেট ডিভিশনের বিচারপতি এম আবদুল ওয়াহাব মিয়া এবং নাজমুন আরা সুলতানা, পিএসসি’র চেয়ারম্যান এটি আহমেদুল হক চৌধুরী, এনবিআর চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ, চেয়ারম্যান অব হিউম্যান রাইটস কমিশন ড. মিজানুর রহমান খান, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. শা’দাত হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, দৈনিক ইনকিলাবের নির্বাহী সম্পাদক রুহুল আমিন খান, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসাইন, ইসির জয়েন্ট সেক্রেটারি জেসমিন টুলি ও ঢাকা নিসারিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কফিল উদ্দিন সরকার।

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর মতামত ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিতে পারেন।’

সাম্যবাদী দল

রাষ্ট্রপতির সংলাপে গত ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল আগামী সাধারণ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী অন্তর্বতী সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছে।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আর প্রয়োজন নেই। কারণ, ইতিমধ্যেই এই পদ্ধতি গ্রহণযোগ্যতা, নিরপেক্ষতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা হারিয়েছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইন প্রণয়ন ও নতুন নির্বাচন কমিশনারদের খুঁজে বের করার জন্য সার্চ কমিটি গঠনেরও প্রস্তাব করেছি।’

তিনি বলেন, ‘এই সার্চ কমিটিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে আহ্বায়ক ও প্রধান বিচারপতি, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান, মহাহিসাব নিরীক্ষক, একজন মিডিয়া প্রতিনিধি ও একজন শিক্ষাবিদকে সদস্য করা যেতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমার দল দেশে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী ও প্রাতিষ্ঠানিক করার ওপর গুরৃত্ব আরোপ করছে।’

গণফোরাম

বছরের প্রথম দিনই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয় গণফোরাম। দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেন এ সংলাপে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পুনর্বিবেচনা করে আরো দুই মেয়াদের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বহাল রাখার পক্ষে মত প্রকাশ করেন।

সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা এখনও বিদ্যমান। আমরা মনে করি, আদালতের রায় অনুসারে দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়া প্রয়োজন।’

দেশের প্রখ্যাত সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী সংক্রান্ত পুরো রায় এখনও পাওয়া যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘আদালতের আংশিক রায় অনুসারে পরবর্তী দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির অধীনে হওয়া উচিত।’

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘একটি সুনির্দিষ্ট আইনের অধীনে কিছু বিধি-বিধানের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের পক্ষে আমরা মত প্রকাশ করেছি।

তিনি বলেন, খসড়া আইনটি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার (নিয়োগ বিধি) আইন-২০১১’ নামে পাশ করা যেতে পারে।

খসড়া আইন অনুসারে, প্রধান ও অন্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সম্ভাব্য ৯ জনের নাম প্রস্তাব করার জন্য একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে।

বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট

বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট (বিআইওজে) সংবিধান অনুযায়ী নিজের পছন্দমতো পরবর্তী প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের প্রতি আহ্বান জানায়।

দলের চেয়ারম্যান মিজবাহুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বিদ্যমান আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে তার পছন্দ মতো পরবর্তী সিইসি নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব করেছি।’

তিনি বলেন, ‘৪ নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২ জন এবং প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট অপর ২ জনের নাম প্রস্তব করতে পারে।

জাতীয় পার্টি (বিজেপি)

নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের ব্যাপারে মতামত দিয়েছে বিজেপি।

বঙ্গভবনের কেবিনেট কক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপের পর বিজেপি সভাপতি ব্যারিস্টার আন্দলিব রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনপ্রবর্তনের বিষয়টি সমাধান করতে রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জানিয়েছি।’

বিজেপি সভাপতি বলেন, ‘দেশের নির্বাচন কমিশন দলীয় সরকার ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সর্বদা ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘এখানে নির্বাচন কমিশনকে আলাদা কোন প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখার কোন সুযোগ নেই।’

ব্যারিস্টার আন্দালিব বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দেন। তবে জিল্লুর রহমান বলেন- তিনি সংবিধানের বাইরে কিছুই করতে পারবেন না।’

বিজেপি সভাপতি দেশের গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে ডেকে এ বিষয়ে আন্তরিক আলোচনা করায় রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (আইএবি) সংলাপে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহালে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানায়।

আইএবি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আদালতের রায়ের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির মনোযোগ আকর্ষণ করেছি। ওই রায়ে আদালত পরবর্তী দু’টি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের অভিমত দেন।’

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (কেএসজেএল)

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের প্রতি সংলাপের আহবান জানায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ(কেএসজেএল)।

‘কেএসজেএল’-এর সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতিকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানিয়েছি।’

তিনি জানান, তার দল নির্বাচন কমিশনকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করার আহ্বান জানিয়েছে।

নতুন নির্বাচন গঠন প্রসঙ্গে হাবিবুর রহমান জানান, তার দল প্রধান বিচারপতিসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক পদে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছে।

প্রস্তাব অনুযায়ী সার্চ কমিটি প্রধান ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নাম পার্লামেন্টারি বিজিনেস কমিটির কাছে পাঠাবে।

পার্লামেন্টারি কমিটি একটি সংযুক্ত তালিকা চূড়ান্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে।

হাবিবুর রহমান বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি ওই তালিকা থেকে প্রধান ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন।’

তিনি জানান, তার দল পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে কিছু নাম পাঠাবে।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলও নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছে।

৪ জানুয়ারির সংলাপ শেষে বাসদ সভাপতি বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতিকে বলেছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ অনুষ্ঠানের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি দরকার।’

তিনি জানান, তার দল প্রধান ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিতে সম্পূরক আইন প্রবর্তনের প্রস্তাব করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনারের সংখ্যা বাড়িয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ৮ জন করার প্রস্তাব করেছি এবং তাদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি।’

বাসদ সভাপতি বলেন, ‘সার্চ কমিটি ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি ৮ জন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দিতে পারেন।’

খালেকুজ্জামান বলেন, ‘৮ নির্বাচন কমিশনার সিদ্ধান্ত  নেবে তাদের মধ্যে কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হবেন।’

তরিকত ফেডারেশন

বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অন্তর্বতী সরকার গঠন ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে অভিমত দিয়েছে।

সংলাপ শেষে ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশার মাইজভান্ডারি সাংবাদিকদের বলেন,  ‘সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ৫ সদস্য, প্রধান বিরোধীদল বিএনপি’র ৩ জন, জাতীয় পার্টির (এরশাদ) ২ জন ও নিবন্ধিত প্রতিটি রাজনৈতিক দলের একজন করে সদস্য নিয়ে অন্তর্বতী সরকার গঠনের দাবি জানানো হয়েছে।’

নজিবুল বাশার বলেন, ‘সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।’

নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে তিনি সাংবিধানিক পদের দায়িত্ব প্রদানের জন্য একটি সার্চ-কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)

বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) পরিবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনে সংবিধানের ১১৮ ধারার আওতায় একটি সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের পক্ষে মত দিয়েছে।

ন্যাপের মহাসচিব অ্যাডভোকেট এনামুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট আইন থাকা প্রয়োজন। যার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনের পরবর্তী প্রধান ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে সকল রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে একটি বিশেষ আইন প্রণয়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিকল্প ধারা

বিকল্পধারা বাংলাদেশ আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের পক্ষে মত দিয়েছে।

দলের সভাপতি প্রফেসর ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতিকে বলেছি যে জনসাধারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনর্বহাল চায়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতিকে সংবিধানের ১৫তম সংশোধনী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রকাশের পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছি।’

ইসি গঠনের ব্যাপারে বিকল্পধারা সভাপতি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাব হল, আগে সংবিধানের ১৫তম সংশোধনী সংসদে বাতিল করতে হবে। এরপর সংসদ সরকারের শেষ সময়সীমা পর্যন্ত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ বৃদ্ধির অধ্যাদেশ জারি করবে।’

বি চৌধুরী বলেন,‘ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পর তারা (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) নতুন ইসির পরবর্তী প্রধান ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবে।’

গণতান্ত্রিক ইসলামী ঐক্যজোট

রাষ্ট্রপতির সংলাপে গণতান্ত্রিক ইসলামী ঐক্যজোট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অবৈধ উল্লেখ করে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই রাজনৈতিক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে।

দলের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মাসুদুর রহমান বিক্রমপুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা অবাধ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন কমিশন গঠনে আমরা বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অপর কমিশনারদের পুনঃনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশনারদের পুনঃনিয়োগের জন্য প্রয়োজনে নতুন আইন করা যেতে পারে।

খেলাফত আন্দোলন ও খেলাফত মজলিশ

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপের দশম দিনে মঙ্গলবার সবার আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের পক্ষে মত দেয় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ।

সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য এর কোন বিকল্প নেই বলেও রাষ্ট্রপতিকে জানিয়ে দেয় তারা।

খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফির নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সকাল ১১টায় বঙ্গভবনের কেবিনেট হলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়।

সংলাপ শেষে খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মোহাম্মদ জাফরুল্লাহ খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনদাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করা প্রয়োজন। কারণ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।’

তিনি বলেন, ‘ আমরা পরবর্তী প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী ও মোস্তফা কামাল আব্বাসী এবং এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) জামাল উদ্দিনের নাম প্রস্তাব করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতিকে তাঁর পছন্দ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছি। এছাড়া অপর চার নির্বাচন কশিশনারের একটি রাষ্ট্রপতি, একটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, একটি বিএনপি এবং অপরটি দেশের আলেমদের পছন্দ অনুযায়ী নিয়োগ করার দাবি জানিয়েছি।’

এরপরই খেলাফত মজলিশের আমির প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়।

সংলাপে খেলাফত মজলিশও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি জানায়।

সংলাপ শেষে হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনের চেয়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা অধিক প্রয়োজনীয়।’

তিনি বলেন, ‘আমার দল সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালে রাষ্ট্রপতিকে উদ্যোগ গ্রহণ এবং নির্বাচন কমিশনকে পর্যাপ্ত জনবল ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে আরো শক্তিশালী করার প্রস্তাব দিয়েছে।’

রাজনীতি শীর্ষ খবর