কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ১৯৭তম পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সকাল ১০টায় ঐতিহাসিক এ ঈদগাহে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে ইমামতি করেন জেলা শহরের বড় বাজার মসজিদের ইমাম মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ।
এবার শোলাকিয়া ঈদগাহের ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়ানোর নির্ধারিত ইমাম বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা ফরীদ উদ্দিন মাসউদ আসেননি।
রেওয়াজ অনুযায়ী, জামাত শুরুর আগে মুসল্লিদের সংকেত দিতে শর্টগানের ছয়টি ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। তিনটি জামাত শুরুর ৫ মিনিট আগে, ২টি ৩ মিনিট আগে এবং শেষটি জামাত শুরুর ১ মিনিট আগে ছোড়া হয়।
বড় ঈদগাহ, বড় জামাত। বেশি মুসল্লির সঙ্গে জামাত আদায় করলে দোয়া কবুল হয়-এমন আকর্ষণে সকাল থেকেই এ ঈদ জামাতে নামাজ আদায়ের জন্য কিশোরগঞ্জ ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে এসেছেন লাখ লাখ মুসল্লি।
এছাড়াও দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের ঈদগাহ মাঠে আসার সুবিধার্থে ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে দুইটি স্পেশাল ট্রেন যাতায়াত করে।
ঈদের নামাজ শেষে মোনাজাতে মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি-কল্যাণ ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন-শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, কিশোরগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ রাসেল শেখ, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ, শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু রাসেল প্রমুখসহ সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও সুধীজন।
ঈদগাহ ময়দানকে ঘিরে গড়ে তোলা হয় বিভিন্ন স্তরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিশোরগঞ্জ শহর এবং আশপাশের এলাকায় বাড়ানো হয় গোয়েন্দা নজরদারি। বিজিবি, র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ১ হাজার ১০০ সদস্য দিয়ে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয় শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানকে। এছাড়াও সিসি ক্যামেরা, ড্রোন ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে ঈদগাহের ভেতর ও বাইরের এলাকা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হয়।
এদিকে, ঈদগাহ ময়দানে উন্মুক্ত প্রবেশপথে স্থাপিত আর্চওয়ে দিয়ে মুসল্লিরা শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে ঈদগাহে প্রবেশ করেন। এর আগে তিন দফা মেটাল ডিটেক্টরে সবার দেহ তল্লাশি করা হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে মুসল্লিদের ছাতা বা কোনো ধরনের ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। শুধু জায়নামাজ নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয় তাদের।
স্থানীয়দের মতে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদের জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’, এরপর ধীরে ধীরে সেই ‘সোয়া লাখিয়া’ পরিচিত হয়ে ওঠে শোলাকিয়া নামে।