জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট

জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট

রাজধানীতে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। কোথাও কোথাও গরু-ছাগলের ভিড় হাটের নির্ধারিত সীমানা ছাড়িয়ে রাস্তায় গিয়ে ঠেকেছে। এরপরও প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে ট্রাকে ভরে গবাদি পশু নিয়ে পাইকাররা রাজধানীতে ছুটে আসছেন। বেচাকেনা এখনো তুঙ্গে না উঠলেও দরাদরি চলছে জোরেশোরেই। বড় গরুর দাম গত বছরের তুলনায় বেশকিছুটা কম হলেও- ছোট গরুর দাম আকাশ ছোঁয়া। রাজধানীর হাট ইজারাদাররা বলছেন, এবারের হাটে ছোট গরুর সরবরাহ অন্য যে কোনো বছরের চেয়ে অনেক কম। সে তুলনায় বেপারিরা বড় গরু আনছেন বেশি। তবে শেয়ারবাজারের ভেল্কি এবং এমএলএমসহ (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং) বিভিন্ন ফটকাবাজির ব্যবসা না থাকার কারণে এসব গরুর চাহিদা কম। কয়েকজনে মিলে কোরবানি দেয়ার জন্য বড় গরু কিনলেও তাদের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। রাজধানীর অধিকাংশ মানুষই ছুটছেন সীমিত সাধ্যের মধ্যে ছোট গরু কিনতে। তাই বেপারিরাও ছোট গরুর দাম হাঁকাচ্ছেন ইচ্ছা মাফিক। তবে বেপারিরা বলছেন, এখনই তারা ছোট-বড় কোনো গরুর দামই চূড়ান্ত করেননি। কারণ হাটে এখন চলছে দর যাচাইয়ের পালা। বেচাবিক্রির পারদ চড়বে বুধ ও বৃহস্পতিবার। শুক্রবারের শেষ সময়ও বড় ধরনের বেচাকেনা হবে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে দাম-দরের হাওয়া বোঝার চেষ্টা করছেন ক্রেতা-বিক্রেতা। রাজধানীর হাটের ইজারাদাররা বলছেন, গরু-ছাগলের আমদানি বেশি হলেও শেষ সময়ে উচ্চমূল্যে বিক্রির আশায় পাইকাররা দাম ছাড়ছেন না। আর ক্রেতারাও বসে আছেন দরপতনের আশায়। তবে গত বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা মনে রেখে শেষ সময়ে গরু-ছাগল কেনার ঝুঁকি না নিয়ে কেউ কেউ আগেভাগেই কোরবানির পশু কেনার চেষ্টা করছেন। ফলে রোববার থেকেই হাটে বেচাকেনা শুরু হয়েছে। রাজধানীর গাবতলী, বনশ্রী, মেরাদিয়া, কমলাপুর, আরমানিটোলা ও হাজারীবাগ কোরবানির পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে- এবার ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা দরের গরু আমদানি হয়েছে বেশি। রয়েছে এক দেড় লাখ টাকা থেকে তিন সাড়ে তিন লাখ টাকার বিশালদেহী গরুও। তবে সব হাটেই ৩০-৩৫ হাজার টাকার গরু খুঁজছেন অধিকাংশ মধ্যবিত্ত ক্রেতা। কিন্তু গত বছরও যে গরু এ দামে বিক্রি হয়েছে এবার বেপারিরা তার দাম হাঁকছেন ৫০-৫৫ হাজার টাকা। পাবনা থেকে এক ট্রাক বড় গরু নিয়ে আফতাবনগর হাটে এসেছেন ব্যবসায়ী আসাদ খান। তিনি বলেন, ট্রাকভাড়া থেকে শুরু করে পথে পথে পুলিশ-সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক নেতাদের চাঁদা নির্ধারণ করা হয় গরুর মাথা গুনে। তাই ছোট গরু আনতে চান না বেপারিরা। চাঁদার টাকা ও ট্রাকভাড়া বাদ দিয়ে বড় গরুতে লাভ কিছুটা বেশি হবে এ আশায় অধিকাংশ বেপারিই এবার বড় গরুর দিকে ঝুঁকেছেন। কিন্তু হাটে এসে টের পেয়েছেন ছোট গরুর চাহিদা এবার অনেক বেশি। আসাদ জানান, ভারত থেকে করিডোর বা চোরাই পথে আসা অধিকাংশ বড় গরু; ছোট গরুর সরবরাহ খুবই কম। খামারিরাও হাটে বড় গরুই বেশি নিয়ে এসেছেন। হাটে যেসব ছোট গরু এসেছে তা অধিকাংশই কৃষকদের পালিত। দিনাজপুর থেকে আসা গরুর পাইকার হাফিজ জানান, গো-খাদ্যের উচ্চমূল্য, ট্রাকের বাড়তি ভাড়া এবং পথে পথে চাঁদাবাজির কারণে গরুর দাম এবার কিছুটা বেশি। তবে চোরাই পথে আসা ভারতীয় গরুর দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে গিয়ে তাদের কিছুটা নিচে নেমেই দর হাঁকতে হচ্ছে। তবে খামারিরা তাদের গরু চড়া দামে বেচার পণ নিয়েই হাটে এসেছেন। হাফিজের ভাষ্য, কোরবানির হাটে গরু বিক্রি না হলেও খামারিরা অন্য যে কোনো সময় গরু বিক্রি করতে পারবেন। তাই তাদের এ ব্যাপারে বেশি তাড়াহুড়ো নেই। কিন্তু পাইকাররা আজকালের মধ্যে এক ট্রিপ গরু বিক্রি করতে পারলে ঈদের আগে আরো এক-দুই ট্রাক গরু এনে বিক্রি করতে পারবেন। তাতে লাভের অংশ কিছুটা বেশিই দাঁড়াবে। তাই গরুপ্রতি দুই চার হাজার টাকা লাভ পেলেই তারা তা ছেড়ে দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ