কবুল হজ গুনাহ মাফের নিশ্চয়তা দেয়

কবুল হজ গুনাহ মাফের নিশ্চয়তা দেয়

পবিত্র হজ মহান আল্লাহর এক বড় হুকুম। এটি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। যারা হজে যাওয়ার মতো আর্থিক ও শারিরীকভাবে সামর্থবান তাদের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ।

পবিত্র কোরআন ও হাদীসে এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহুবার উল্লেখ হয়েছে। কাদের ওপর হজ ফরজ- এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,  “মানুষের পক্ষে আল্লাহর উদ্দেশে হজ করা ফরজ-যার পথের সামর্থ্য রয়েছে।” (সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ৯৭)

অর্থাৎ যে ব্যক্তি হজে যাওয়া-আসার খরচ বহনের সামর্থ্য রাখে এবং হজ চলাকালে তার পরিবার পরিজনের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করার মতো সামর্থ্য রাখে তার ওপর পবিত্র হজ পালন করা ফরজ।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরও বলেন, “তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে হজ ও ওমরা পূর্ণ কর”। (সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ১৯৬)

হাদীস গ্রন্থগুলোতে হজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিশদভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। যার ওপর হজ ফরজ তার উচিত তাড়াতাড়ি ফরজ দায়িত্ব পালন করা। তাই রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি হজের নিয়ত করলো, সে যেন (তা পালনে) তাড়াতাড়ি করে। আবু দাউদ, দারেমী।

অর্থাৎ হজ ফরজ হওয়ার পর সে যেন দেরি না করে। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি সে হজ পালনে গড়িমসি করে এবং হজ না করে তাহলে এর জন্য সে দায়ী হবে। যদি এ অবস্থায় সে মারা যায় তাহলে আল্লাহর দরবারে সে ফরজ হুকুম লঙ্ঘনকারী হিসেবে উঠবে।

ইসলামী শরীয়ত মতে প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তি হজ করবে। চাই সে নারী হোক বা পুরুষ। তাই প্রিয় নবীর (সা.) কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েচে, হজ না করে থাকা ইসলামে নেই। (আবু দাউদ)

হজের ফজিলত ও তাৎপর্য সম্পর্কে প্রিয় নবী (সা.) আরও বলেছেন, হে মানব মণ্ডলী! তোমাদের প্রতি হজ ফরজ করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা হজ করবে। (মুসলিম)

হজের বিনিময়ে মহান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দার গুনাহগুলো মাফ করে দেন। রাসুল (সা.) পবিত্র হজ পালনকারীর ফজিলত এভাবেই বর্ননা করছেন- তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশে হজ করেছে এবং তাতে কোনো অশ্লীল কথা বলেনি বা কোনো অশ্লীল কাজ করেনি সে হজ হতে ফিরে সেদিনের মতো, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল। অর্থাৎ তার সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। (বুখারী, মুসলিম)

হজ করতে গিয়ে যদি কেউ মারা যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার হজ কবুল করে নেন। তাকে উত্তম বিনিময় দান করেন, পুরস্কৃত করেন।

এই ব্যক্তি হজ না করেও হজের সওয়াব লাভ করবে। কারণ, সে যখন ঘর থেকে বেরিয়েছিল তখন হজ করার নিয়তে বের হয়েছিল। কিন্তু হায়াত না থাকায় তার সে সৌভাগ্য হয়নি। তাই হজ না করলেও আল্লাহ পাক তাকে তার নিয়তের কারণে এই সওয়াব দান করবেন। অনুরূপভাবে ওমরার উদ্দেশে বের হয়ে ওমরা পালনের আগে কেউ মারা গেলেও সে ওমরাকারীর মর্যাদা পাবে। হাদিসে হজকারীকে আল্লাহর যাত্রীদল বলা হয়েছে।

প্রিয় রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর যাত্রী হলো তিন ব্যক্তি। গাজী, হাজী ও ওমরাকারী। (নাসায়ী, বায়হাকী)

হজকারীর ফজিলত ও তাৎপর্য বোঝাতে গিয়ে রাসুল (সা.) একবার সাহাবাদের বললেন, যখন তুমি কোনো হাজীর সাক্ষাৎ পাবে তাকে সালাম দেবে, মুসাফাহা করবে এবং তাকে অনুরোধ করবে তিনি যেন তোমার জন্য আল্লাহর কাছে মাফ চান- তার ঘরে প্রবেশের পূর্বে।  কারণ, হাজী হলো গুনাহ থেকে পবিত্র ব্যক্তি। (মুসনাদে আহমদ)

এই হাদিস দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম যে হজ সম্পন্নকারী ব্যক্তি আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয়। তার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি সে যার জন্য সুপারিশ করবে তাও কবুল করে নেওয়া হয়।

ইসলামের এই মহান হুকুম যেভাবে সামর্থ্যবান পুরুষের ওপর ফরজ তেমনি সামর্থ্যবান নারীদের ওপরও ফরজ। আমাদের সমাজে অনেক নারী এমন রয়েছেন যারা হজে যাওয়ার মতো সামর্থ্য রাখে। অথচ তারা এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় না। যা নিতান্তই দুঃখজনক।

মুসলমান হিসেবে আমাদের মনে রাখতে হবে, নামাজ রোজা যেমন সবার ওপর ফরজ, পবিত্র হজও সামর্থ্যবানদের ওপর ফরজ। চাই সে নারী হোক বা পুরুষ। তবে হজ করার জন্য নারীদের ওপর শর্ত হচ্ছে, তারা মাহরাম পুরুষের সঙ্গে যাবে। একা একা বা অন্য (যার সঙ্গে বিয়ে জায়েজ) পুরুষের সঙ্গে যাবে না। মাহরাম পুরুষ বলা হয় সেসব পুরুষকে যাদের সঙ্গে দেখা দেওয়া জায়েজ। যেমন, স্বামী, বাবা, আপন ভাই, আপন চাচা-মামা, ছেলে ইত্যাদি।

নারীদের সফরে মাহরাম পুরুষের আবশ্যকতা ঘোষণা করে রাসুল (সা.) বলেন, কোনো নারী যেন একদিন একরাত্রির পথ ভ্রমণ না করে কোনো মাহরামের সঙ্গে ব্যতিত। (বুখারী, মুসলিম)

নারীরা দূরে কোথাও সফরে গেলে নিরাপত্তার বিষয়টি যেহেতু সর্বাগ্রে বিবেচনায় নিতে হয় তাই তাদের সঙ্গে মাহরাম পুরুষের উপস্থিতি জরুরি বলে ঘোষিত হয়েছে। তাই হজের সফরেও মাহরাম পুরুষের সঙ্গে যেতে হবে।

বর্তমানে অনেক নারী মাহরাম ছাড়াই হজে যায়। যা মোটেও শরীয়ত সম্মত নয়। মেয়েদের হজ করা জেহাদ করার মর্যাদা রাখে।

কেউ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ না করলে তার জন্য রয়েছে কঠিন পরিণতি। নবী করীম (সা.) এ বিষয়ে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। এরশাদ হচ্ছে, যাকে পথের সামর্থ্য অথবা অত্যাচারী শাসক অথবা গুরুতর রোগ বাধা দেয়নি, তবু সে হজ না করে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছে- সে ইহুদী হয়ে মরুক বা নাসারা হয়ে মরুক (তাতে ইসলামের কিছু যায় আসে না)। (দারেমী)

প্রিয় নবীর (সা.) মুখে এ ধরনের শক্ত কথা-ই বলে দেয় হজ না করলে কি পরিমাণ গুনাহ হয়। মহান আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে পবিত্র হজ করার তৌফিক দান করেন। (আমীন)

ইসলামী জগত