মুসলিম জাহানের শান্তির প্রয়োজনে, মুসলমানদের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের নিমিত্তে, ইসলাম ও মুসলিম জাতির মর্যাদা বৃদ্ধিকরণার্থে মুসলিম জাহানের ঐক্য পূর্বশর্ত। ইসলাম ও মুসলিম জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য অতীব জরুরি। আর এর জন্য প্রয়োজন একটি বিশ্ব সম্মেলনের, যা অনুষ্ঠিত হবে এমন স্থানে যেখানে শুধু এক আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী, রাসূলে কারিম (সা.)-এর অনুসারী এক কোরআনের অনুগামী মুসলিম চিন্তানায়করাই উপস্থিত থাকবেন। সেই কাজটি অত্যন্ত কঠিন হলেও মহান আল্লাহতায়ালা অনেক সহজ করে দিয়েছেন হজের বিধান বাস্তবায়নের মাধ্যমে। হজের সময়ে পৃথিবীর আল্লাহপ্রেমিক প্রতিনিধিরা ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে সমবেত হয়ে থাকেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, এখানেই জান্নাত থেকে বের হওয়ার পর আদি পিতা হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.)-এর পুনঃমিলন হয়েছিল, তারা এক অন্যের পরিচয় পেয়েছিলেন সেখানেই। তাই এর নামকরণ করা হয়েছিল আরাফাত। দিগন্তব্যাপী মরুভূমির এ ময়দানে আরাফাতে যেন বিশ্বের সব মুসলিম সমবেত হলেও তার বক্ষে অভাব হবে না স্থানের। আল্লাহতায়ালা কর্তৃক অত্যন্ত বৈজ্ঞানিক পন্থায় আহূত এ বিশ্ব মুসলিম সম্মেলনের মাধ্যমে মুসলিম জাতির ঐক্য স্থাপন সম্ভব হতে পারে। মুসলিম জাহানের যাবতীয় কলহ-বিবাদ-বিসম্বাদ দূরীভূত হতে পারে এ মহাসম্মেলনের মাধ্যমে। মুসলমানদের সোনালি যুগে অর্থাৎ সারা পৃথিবীর এক-চতুর্থাংশ যখন মুসলমানদের করতলগত ছিল, হজরত ওমর (রা.)-এর মতো মহামনীষীরা যখন মুসলিম জাতির নেতৃত্বের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন, তখন ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানেই সমগ্র মুসলিম জাহানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান করা হতো। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। মুসলিম জাতির ভাগ্য বিপর্যয় ঘটেছে, তারা আল্লাহ ও রাসূলের মহান শিক্ষা থেকে বহু দূরে সরে গেছে, তাই সুদিনের স্থলে দুর্দিন এসেছে। আজও আরাফাতের ময়দানে দুনিয়ার মানুষ একত্রিত হয় কিন্তু একে অন্যের সঙ্গে মনের কপাট খুলে মেশে না, তদুপরি যারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান পেশ করতে পারে, তারা বড় বেশি এই ঐতিহাসিক সম্মেলনে উপস্থিত হন না। ফলে মুসলিম জাহানের ঐক্য স্থাপিত হয় না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হজের একটি বিরাট উদ্দেশ্য এভাবে যাতে ব্যাহত না হয় সেই চিন্তায় কাজ করার তৌফিক নসিব করুন। আমিন।