জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মুছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কনের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবিতে আমরণ অনশনে বসার আশি ঘণ্টা পর উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন ভেঙেছেন ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক এনাম ও রিয়াজুল ইসলাম।
রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাত নয়টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার পাদদেশে উপস্থিত হয়ে দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে ডাবের পানি পান করার মধ্য দিয়ে অনশন ভাঙ্গেন ছাত্রলীগ নেতা এনাম ও রিয়াজুল। এসময় উপাচার্য আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির সিন্ডিকেট সভায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।
দাবিগুলো হলো- বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবমাননাকারীদের অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা, বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় আইনে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, আট দিন পার হলেও জড়িতদের ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা বিষয়ে তদন্ত করা।
এ সময় অনশনে থাকা ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক এনাম বলেন, আমি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি বঙ্গবন্ধুকে অবমাননাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং একটা পরিষ্কার বার্তা যেন আসে বঙ্গবন্ধুকে অমান্য করে কেউ পার পাবে না। আমি একটা দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে চাই। উপাচার্য আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন ২০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য সিন্ডিকেট সভায় বিষয়টি উত্থাপন করবেন এবং তাদের শাস্তি নিশ্চিত করবেন। তবে যদি দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা দেখতে না পাই আমি আবার অনশনে বসবো। শুধু আমি না, ছাত্রলীগ সভাপতি নিজে বলেছেন, আরো কঠিন পদক্ষেপে যাবেন।
অপরাধীদের শাস্তির বিষয়ে তিনি বলেন, আমি চাই তাদেরকে যেন অন্তত সাময়িক বহিষ্কার করে বা যেভাবেই হোক দৃশ্যমান একটা পদক্ষেপ যেন নেওয়া হয়। সেটাই আমার চাওয়া, বাকি সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেট নেবে।
উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য সিন্ডিকেটে সভায় বঙ্গবন্ধুর দেয়ালচিত্র মুছে দেওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করে ওই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে অনশনকারীরা। যদিও সেটা তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ওপর নির্ভর করছে। তবুও আশা করছি, আগামী সিন্ডিকেট সভায় এই বিষয়টি উত্থাপন করে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবো।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুর একটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার পাদদেশে অবস্থান নিয়ে আমরন অনশন শুরু করেন শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনাম। পরে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে তার সাথে যোগ দেন শাখা ছাত্রলীগের উপ-শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত, গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবনের দেয়ালে পূর্বে আঁকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মুছে একটি গ্রাফিতি অঙ্কন করে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের একাংশের নেতাকর্মীরা। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণকাণ্ডের প্রতিবাদে এ গ্রাফিতি অঙ্কন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। গ্রাফিতিতে একটি নারীর অবয়ব, ছয়টি মাথার খুলিসহ একটি পতাকা আঁকা হয়। এর পাশেই লিখা হয় ‘ধর্ষণ ও স্বৈরাচার থেকে আজাদী’। এছাড়া গ্রাফিতির নিচে ছাত্র ইউনিয়নের নাম লিখা হয়। নারীর অবয়বের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পূর্বের প্রতিকৃতি মুছে ফেলার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা করা হয়েছে দাবি করে অনশনে বসেন শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনাম। তবে এ ঘটনায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।