‌‌‌‌সংশোধিত কোম্পানি আইন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে!

ঢাকা: বিদ্যমান কোম্পানি আইনে নতুন ধারা সংযোজন করে বেসরকারি কোম্পানিতে যেকোনো সময় প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার সংশোধনী প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে এর সঙ্গে একমত নন দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনেরা।

তারা বলছেন, বাংলাদেশে আইনের অপব্যবহারের নজির অনেক। তাই আইনে নতুন ধারা সংযোজনের সিদ্ধান্তের আগে সংশ্লিষ্ট সব মহলের মতামত নেওয়া দরকার ছিল।

সোমবার মন্ত্রিসভায় সংশোধনী প্রস্তাবটি পাস হওয়ার পর বাংলানিউজকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান, ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, এম হাফিজউদ্দিন খান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

ড. আকবর আলি খান
তিনি বলেন, “আইনের ধারায় কী বলা আছে তা আগে জানতে হবে। তবে যে প্রেক্ষাপট থেকে বিষয়টি সামনে এসেছে তার জন্য এই সিদ্ধান্ত হয়তো ঠিক হতে পারে। কিন্তু সার্বিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এ নিয়ে আরো ভাবার দরকার আছে।”

ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম
বেসরকারি কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে ডেসটিনি গ্রুপের ঘটনায়। তবে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রেক্ষাপট থেকে এমন একটি সিদ্ধান্ত কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা ভাবতে হবে। বাংলাদেশে আইনের অপব্যবহারের অনেক নজির আছে। অনেক ক্ষেত্রে আইন সঠিকভাবে ব্যবহার হয় না। এখানে ভয় আছে। তবে যারা অসাধু ব্যবসায়ী তাদের জন্য একটি সতর্কীকরণ বার্তা হতে পারে আইনের এই নতুন ধারা। তবে এটি চূড়ান্ত করার আগে আরো আলোচনা করে নেওয়ার দরকার।”

এম হাফিজউদ্দিন খান
তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা মনে করেন, আইনে এই ধারা সংযোজন করার আগে, এটি নিয়ে ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সব মহলের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। এরপর এটি মন্ত্রিসভায় নিলে ভালো হতো। কারণ এতে বেসরকারি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে আতংক বাড়বে। আইন করার আগে আরো সর্তকতা দরকার ছিল। কারণ আমাদের দেশে আইনের অপব্যবহারের অনেক ঘটনা আমরা দেখেছি।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ
সাবেক এই গভর্নর বলেন, “ঢালাওভাবে আইনে এই ধারা সংযোজন ঠিক হলো না। সতর্কতার সঙ্গে এটি চূড়ান্ত করা দরকার। কারণ ব্যবসা চালাবে এর অংশীদাররা, এটাই স্বাভাবিক। এখন সরকারের সঙ্গে বিরোধ অথবা রাজনৈতিক কারণে যদি কোনো কোম্পানি দখলে নেওয়ার জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে তা হবে অন্যায়। সরকার যদি আইনটি চূড়ান্ত করতে চায়, তবে এর মধ্যে শর্ত দেওয়া উচিত ছিল। যাতে ভালো কোনো কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়,  ক্ষমতার অপব্যবহার না হয়। শর্ত থাকতে হবে, কোন সময় প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে সরকার। এর আগে অবশ্যই ওই প্রতিষ্ঠানকে সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে। দেখতে হবে, প্রতিষ্ঠান জনস্বার্থবিরোধী কিছু করছে কিনা। আবার শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ নষ্ট করছে কি না তা-ও দেখা দরকার।“

প্রসঙ্গত, মূলত ডেসটিনি গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগের জন্য কোম্পানি আইন, ১৯৯৪-এ নতুন ধারা সংযোজন করা হচ্ছে। সংসদ অধিবেশন না থাকায় এখন অধ্যাদেশ জারি করে তা করা হবে। এই ধারায় নিযুক্ত প্রশাসকের কোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত কোনো ব্যক্তি আদালতে যাওয়ারও অধিকার পাবেন না। প্রশাসক যে সব পদক্ষেপ নেবেন তা “সরল বিশ্বাসে করেছেন“ বলে ধরে নেওয়া হবে।

মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের জন্য তৈরি করা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, ডেসটিনি গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক বসানোর জন্য মূলত কোম্পানি আইনে এ সংযোজনটি করা হচ্ছে। বর্তমানে জাতীয় সংসদের অধিবেশন না থাকায় ‘কোম্পানি আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০১২’ নামে একটি অধ্যাদেশ জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

 

অন্যান্য অর্থ বাণিজ্য বাংলাদেশ শীর্ষ খবর