নাম মালুম, কিন্তু পুরো বেমালুম হয়ে গেছেন: সাকাচৌ

নাম মালুম, কিন্তু পুরো বেমালুম হয়ে গেছেন: সাকাচৌ

রোববার মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানিতে কিছু কিছু ঘটনার অবতারণা হয়েছে।যার বেশিরভাগই করেছেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নিজেই। সুযোগ পেয়েই কথা বলার চেষ্টা ছিল তার।

তারই কয়েকটি চিত্র:

নাম মালুম, কিন্তু পুরো বেমালুম

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানিতে অংশ নিতে গেলে রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলী জেয়াদ আল মালুমকে উদ্দেশ্য করে কাঠগড়ায় থাকা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার স্বভাবসুলভভাবে বলে ওঠেন,‌ নাম মালুম, কিন্তু পুরো বেমালুম হয়ে গেছেন।

অভিযোগ গঠনের শুনানিতে অংশ নিয়ে ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দেরি করায় এ উক্তি করেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।

উল্লেখ্য, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ওই সময় করা অপরাধের ধারা বুঝাতে গিয়ে ইংরেজি এ অক্ষরের পরিবর্তে বাংলা ক অক্ষর ব্যবহার করায় ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারক একেএম জহির আহম্মেদের প্রশ্নের মুখে পড়েন রাষ্ট্রপক্ষের নিযুক্ত কৌসুলী জেয়াদ আল মালুম।

তখন ট্রাইবুনালের অপর বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর জানতে চান এটা তারা কেন করেছেন।

এসময় আত্মপক্ষ সমর্থনে প্রসিকিউটর মালুম কিছু বলতে গেলে বিচারক তাকে বলেন, আপনি কি মফস্বলের উকিল। মফস্বল থেকে এলে কিছু বলার ছিলো না। আপনিতো ঢাকায় প্র্যাকটিস করেন। এটা আপনার জানার কথা।

তখনই সাকা চৌধুরী বলে ওঠেন, নাম মালুম, কিন্তু পুরো বেমালুম হয়ে গেছেন।

ধন্যবাদ পেলেন আইনজীবী বদিউজ্জামান

শুরু থেকে সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী তার পক্ষে কোনো আইনজীবী নিয়োগ না করায় সরকার এমডি বদিউজ্জামানকে তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করেন।

রোববার এম বদিউজ্জামান সাকা চৌধুরীকে মামলা হতে অব্যাহতি চেয়ে করা আবেদনের শুনানি করতে চাইলে কাঠগড়ায় দাড়ানো সাকা ট্রাইবুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের উদ্দেশে বলেন, ওটা আপনার জুনিয়র, আমার কেউ না।

কিন্তু এম বদিউজ্জামান তার সাবমিশন শেষ করার পরে বিচারপতি একেএম জহির আহম্মেদ সাকা চৌধুরীকে লক্ষ্য করে বলেন, আপনি কি এই আইনজীবীকে পারফেক্ট মনে করছেন। আপনার তো এই আইনজীবীকে নিয়ে আপত্তি ছিলো। সেটা কি এখনো আছে।

সাকা এসময় বিচারপতিদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনি আমাকে প্রশ্ন না করলেও আমি অনুমতি নিয়ে এ কথাটি বলতাম। ‌আই অ্যাম ফাইন উইথ দিস ইয়ং ম্যান। আমি এই আইনজীবীকে খুবই ধন্যবাদ জানাই। আমি তার আবেদনে মুগ্ধ হয়েছি।

এসময় বিচারক জহির আহম্মেদ বলেন, আই অ্যাম ইম্পপ্রেসড অলসো। সে অনেক ভালো সাবমিশন রেখেছে। তবে সাকা চৌধুরীর ব্যক্তিগতভাবে আইনজীবী নিয়োগ করায় ট্রাইবুনাল তাকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

বিচারক আইনজীবী বদিউজ্জামানকে সাকা চৌধুরীর আইনজীবী হিসেবে কাজ করার সময়ের বিল করার কথাও বলেন।

আমি সাকা চৌধুরীর প্রেতাত্মা

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের নিযুক্ত আইনজীবী এমডি বদিউজ্জামান মামলার শুনানিতে বলেন, জাস্ট নাউ অ্যাই অ্যাম নট অ্যাডভোকেট অব বদিউজ্জামান, অ্যাই অ্যাম প্রেতাত্মা অব সাকা চৌধুরী।

তিনি তার তার বক্তব্যে বলেন, ১৯৭৯সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত মোট ৬বার চট্টগ্রামের রাউজান, রাংগুনিয়া এবং ফটিকছড়ি এলাকার জনগণ তাদের প্রতিনিধি হিসেবে ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করেছেন।

১৯৭১সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষে নিজস্ব স্বাধীন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে হিসেবে তিনি এ মামলার অপরাধী হতে পারে না। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে আহত হয়ে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন। তিনি নিজ হাতে কোনো অপকর্ম করেনিনি। এমনকি পাকিস্তান বাহিনীর কোনো সহযোগী বাহিনীর সংঙ্গে জড়িত ছিলেন না। শুধুমাত্র পিতার রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে পূত্র এ মামলার অপরাধী হবে এটা হতে পারেনা।

ন্যায় বিচারের স্বার্থে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানান তিনি।

চিফ প্রসিকিউটর ধরা পড়েছেন!

ট্রাইবুনালের এজলাস কক্ষে আইনজীবী-সাংবাদিক এবং দর্শনার্থীদের মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হলেও রোববার আদালতের কার্যক্রম চলাকালে চিফ প্রসিকিউটির গোলাম আরিফ টিপুর মোবাইল ফোন উচ্চস্বরে বেজে ওঠে।

এসময় ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক হাসিমুখে বলে ওঠেন, চিফ প্রসিকিউটর ধরা পড়েছেন। কিছু সময় পুরো আদালত কক্ষ হাসিতে মেতে উঠলেও সাংবাদিকদের অনেকেরই জিজ্ঞাসা, যারা নিজেরাই নিয়ম তৈরি করেন, তারাই যদি নিয়ম ভংগ করেন তাহলে নিয়ম বানানোর দরকার কি। আইন সবার জন্য প্রযোজ্য। সাংবাদিকদের বাধ্য করা হয় ফোন নিচে রেখে যেতে। সেখানে চিফ প্রসিকিউটরের ক্ষেত্রে এ নিয়ম কেনো প্রযোজ্য নয়।

 

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর