বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে রোববার তিনটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতসহ অন্যান্য বিভিন্ন খাতে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ চুক্তি তিনটি স্বাক্ষরিত হয়। তিনটি চুক্তির মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি ছাড়াও রয়েছে একটি সমঝোতা স্মারক চুক্তি (এমওইউ) এবং একটি অবকাঠামোগত চুক্তি।

অথনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা ছাড়াও বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে চীন সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে এবং অবকাঠামো চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে সহজ শর্তে ঋণ দেবে বলে জানা গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে।

বাংলাদেশ সফররত চীনা প্রতিনিধি দলের সদস্য ও চীনের বাণিজ্য বিষয়ক ভাইস মিনিস্টার ঝিয়াং জেংগেল এবং বাংলাদেশ পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদ এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আবুল কালাম আজাদ  প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চুক্তিগুলোতে স্বাক্ষর করেন।
এর আগে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির স্ট্যান্ডিং কমিটির পলিটব্যুরোর সদস্য লি চ্যাংচুনের নেতৃত্বে সফররত চীনা প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংগে তাঁর কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কেন্দ্রীয় কমিটির উচ্চ পর্যায়ের এ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব জোরদারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে জ্বালানি, কৃষি ও অবকাঠামোগত খাতের উন্নয়নে চীনকে আরো বেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বকে বাংলাদেশ অধিক গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন, আঞ্চলিক যোগাযোগে সহায়তার মাধ্যমে এই সম্পর্ককে আরো জোরদার করা সম্ভব।

প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব রয়েছেন সিপিসির কেন্দ্রীয় কমিটির পলিটব্যুরোর স্থায়ী কমিটির সদস্য লি চ্যাংচুন। সিপিসির ৯ জন শীর্ষ ব্যক্তির মধ্যে পঞ্চম ব্যক্তি তিনি। ৬৪ সদস্যের চীনা প্রতিনিধি দল গত ২০ অক্টোবর বিকেলে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন।

প্রতিনিধিদলে রয়েছেন- কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী ওয়াং জিয়ারুই, শিক্ষামন্ত্রী ইয়াং গুইরেন, সংস্কৃতি মন্ত্রী কাই বু,  বেতার , চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন বিষয়ক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী কাই ফুচাও, সংবাদমাধ্যম ও প্রকাশনা বিষয়ক ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী লিউ বিন ঝি ও বাণিজ্য বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী জিয়াং জেংওয়েল।

শেখ হাসিনা বলেন, এ অঞ্চলের একটি পুরাতন রাজনৈতিক দল হিসেবে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে তাঁর দলের চমৎকার সম্পর্ক বিদ্যমান। পাশাপাশি এ দুই রাজনৈতিক দলই আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য এক সঙ্গে কাজ করতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ সময় ১৯৫৩ ও ১৯৫৭ সালে  বঙ্গবন্ধুর চীন সফরের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে স্থাপিত হওয়া সম্পর্কের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘ওই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে দেশ দুটির সম্পর্ক এগিয়ে যাচ্ছে।’

শেখ হাসিনা এক চীন নীতির প্রতি তাঁর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এ ব্যাপারে দুই দেশই অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে বিভিন্ন বৈশ্বিক ইস্যুতে একত্রে অবস্থান নেয়।

বাংলাদেশ থেকে অধিক পণ্য আমদানির জন্য চীনের ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে প্রতিনিধিদলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “ঢাকা কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, ওষুধ, যোগাযোগ এবং অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে চীনের অধিক বিনিয়োগকে স্বাগত জানাবে।”

এ সময় প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিধিদলের সামনে কমিউনিটি স্বাস্থ্য সেবা, খাদ্য উৎপাদন, শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের  অর্জিত সাফল্যের কথা তুলে ধরেন।

চীনা প্রতিনিধিদলের প্রধান পাগলা পানি শোধনাগারের সম্প্রসারণ এবং সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সহযোগিতার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দেন।

তিনি বলেন, ‘চীন সরকার সে দেশে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুবিধার্থে বৃত্তি দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ পাশাপাশি তিনি দু’দেশের মধ্যে অধিকতর রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

চীনের প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্ব ও ভিশন ২০২১ এবং তাঁর নেতৃত্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি চীনা প্রতিনিধিদল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সংগেও সাক্ষাত করেন।  সাক্ষাৎকালে লি চ্যাংচুন জানান, বাংলাদেশকে ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চীন সব ধরনের, বিশেষ করে অবকাঠামো, বাণিজ্য বিনিয়োগ ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে সহায়তা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বৈঠককালে রাষ্ট্রপতি চীনা প্রতিনিধিদলকে এই সফরের জন্য স্বাগত জানান এবং চীনকে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করেন।

মায়ানমার হয়ে ঢাকা-কুনমিং সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা হলে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক এক নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি দেশের অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে চীন সরকারের আরো সহায়তা কামনা করেন।

এক চীন নীতিতে’ বাংলাদেশের বিশ্বাসের কথা পুনর্ব্যক্ত করে রাষ্ট্রপতি গত সাড়ে তিন দশক ধরে বাংলাদেশের উন্নয়নে অব্যাহত সহায়তার জন্য চীন সরকার ও সেদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এছাড়া সাহিত্যে নোবেল পাওয়ার জন্য চীনা লেখক মো ইয়ানকে প্রতিনিধি দলের মাধ্যমে অভিনন্দন জানান তিনি।

এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গেও wj চ্যাংচুনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসময় চীনা নেতা ও তার প্রতিনিধি দলের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, চ্যাংচুন বাংলাদেশ ও চীনের সহযোগিতায় বেশ কিছু কৃষি, পানি ব্যবস্থাপনা, তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত প্রকল্পে কাজ করার প্রস্তাব দেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি কুনমিন পরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন, কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে বহু টানেল বিশিষ্ট সড়ক, সোনাদিয়া দ্বীপে গভীর সমুদ্র বন্দর, দোহাজারি-কক্সবাজার রেলওয়ে লিঙ্ক ইত্যাদি প্রকল্পে চীনের সহযোগিতা কামনা করেন।

রোববার সকালে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনকালে জাদুঘরে সংরক্ষিত কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মাও সেতুংয়ের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ছবি দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন চ্যাংচুন। এসময় তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশের পাশাপাশি সত্য ইতিহাসকে সংরক্ষিত করার জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ