ইসরায়েল ও দক্ষিণ আফ্রিকা বৃহস্পতিবার থেকে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে মুখোমুখি হচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ফিলিস্তিনের গাজায় ‘গণহত্যার অপরাধে’ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলা দায়ের করেছে। তবে ইসরায়েল দক্ষিণ আফ্রিকার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ৮৪ পৃষ্ঠার আবেদনে গাজায় অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধে ইসরায়েলকে নির্দেশ দিতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। প্রেটোরিয়া শুক্রবার ওই আদালতে করা মামলার আবেদনে গাজায় ইসরায়েলের কর্মকা-কে ‘গণহত্যামূলক’ বলে উল্লেখ করেছে। কারন ইসরায়েল উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ, জাতিগত ও জাতিগোষ্ঠী ধ্বংস করছে।
গাজায় ফিলিস্তিনিদের হত্যাসহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং মানুষের জীবন বিপর্যস্ত করে তোলা হয়েছে বলেও মামলার আবেদনে বলা হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা গাজা ও দখল করা পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের কর্মকান্ডকে তাঁর দেশে ১৯৯৪ সালে অবসান হওয়া শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুর বর্ণবাদ শাসনের জাতিগত বিভাজনের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার ভাষ্য, ইসরায়েলের আচরণ, বিশেষ করে ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘন করে দেশটি। এ জন্য দ্রুত শুনানির আহ্বান জানানো হয়েছে। মামলার আবেদনে কনভেনশনের অধীনে ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা, গুরুতর ও অপূরণীয় ক্ষতি থেকে রক্ষা করে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আদালতের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এদিকে ক্ষুব্ধ ইসরায়েল দক্ষিণ আফ্রিকার এ অভিযোগ দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরাইল সরকারের মুখপাত্র ইলন লেভি দক্ষিণ আফ্রিকার করা এ মামলার বিরুদ্ধে লড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে এ অভিযোগকে অযৌক্তিক বলে বর্ণনা করেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্দেশ বলেছেন, না, আমরা না, নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছে হামাস।
এ পরিপ্রেক্ষিতে হেগের পিস প্যালেসে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের গ্রেট হল জাস্টিসে উভয় দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা মুখোমুখি হচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত, যেটিকে বিশ্ব আদালতও বলা হয়। এটি একটি জাতিসংঘের দেওয়ানি আদালত। যা দেশগুলোর মধ্যে বিরোধের বিচার করে। এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) থেকে আলাদা, যা যুদ্ধাপরাধের জন্য ব্যক্তিদের বিচার করে থাকে। জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইসরায়েল উভয় দেশ এই আদালতের আওতাধীন।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস ইসরায়েলে আকস্মিক বড়ো ধরনের হামলা চালানোর পর ইসরায়েল গাজায় পাল্টা নির্বিচারে হামলা শুরু করে এবং হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার করেছে।
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ২২ হাজার ৭২২ জন প্রাণ হারিয়েছে। তাদের অধিকাংশ নারী ও শিশু।