আগুন দেওয়া হয় ট্রেনের ভেতর থেকে : ডিএমপি কমিশনার

আগুন দেওয়া হয় ট্রেনের ভেতর থেকে : ডিএমপি কমিশনার

মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের ভেতরে যারা ছিল তারাই আগুন দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, প্রথমে একটি সিটে আগুন দেওয়া হয়। সেই আগুন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে চারদিক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
আজ মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ট্রেনে নাশকতায় আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাজধানীর বনানী কাকলী এলাকার কাছে এলে ‘জ’ বগিতে যাত্রীরা আগুন দেখতে পায়। এ সময় অনেকে জানালা দিয়ে অনেকে দরজা দিয়ে নামতে পারলেও নামতে না পারায় চারজন জীবিত পুড়ে মারা গেছে। তাদের মধ্যে এক মা ও তার সন্তান ইয়াসিনকে শনাক্ত করা গেছে। বাকি দুজনকে শনাক্ত করা যায়নি। আমাদের সিআইডি এক্সপার্ট ডিএমপি সবাই তাদের পরিচয় শনাক্তে একসঙ্গে কাজ করছে। তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়ার মতো কোনো অবস্থা নেই। তাদের ডিএনএ সংরক্ষণ করা হচ্ছে, যাতে পরবর্তী সময়ে তাদের শনাক্ত করা যায়।
কমিশনার আরও বলেন, এ ঘটনায় পুলিশের সব ইউনিট কাজ করছে। যারা এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে নাশকতার সঙ্গে যুক্ত তাদের খুঁজে বের করার জন্য। আপনারা জানেন একটি রাজনৈতিক দলের লোকজন কিছুদিন ধরে হরতাল-অবরোধের নামে মানুষের জীবন ও সম্পদ ধ্বংস করে চলছে। সেই প্রক্রিয়ারই একটি অংশ হিসাবে প্রাথমিকভাবে পুলিশ এটি মনে করে।
শনাক্ত মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে কি না, সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, এই মরদেহ দুটির পোস্টমর্টেম না। যেহেতু আগুনে পোড়া এটি দৃশ্যমান।রেলওয়ে পুলিশের মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এই নাশকতার দায় আপনি কার বলে মনে করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই যারা অবরোধ করছে, হরতাল করছে তারাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এটি আমাদের কাছে স্পষ্ট। এর আগে যারা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আপনারা দেখেছেন কয়েকদিন আগে গাজীপুরে রেললাইন কেটে ফেলে দুর্ঘটনার মাধ্যমে একজনকে হত্যা করা হয়েছে, আমি এটাকে হত্যাই বলব। এই ঘটনাটি যারাই ঘটিয়েছে তারা হরতাল-অবরোধকারীর অংশ বলেই মনে করি। শুধু একটি অংশ নয়, এটি কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্তেই তাদের যারা অনুসারী আছে তাদের যারা লেলিয়ে দেওয়া লোকজন আছে তারাই এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে।
এখানে তো রেল পুলিশ ছিল তাদের কোনো গাফিলতি আছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত চলছে। একজন আহত ব্যক্তি যিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন তার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, যারা আগুন দিয়েছে তারা ট্রেনের ভেতরেই ছিল। তিনি দেখেছেন সিটের ভেতরেই প্রথম তারা আগুন দেয়। পরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। যে যেভাবে পেরেছে ছোটাছুটি করছে কেউ দরজা দিয়ে কেউ জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে বের হতে পেরেছে। যেহেতু তখন ভোর ছিল তখন অনেকেই ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। আমরা দেখেছি একজন মা নাদিরা আক্তার পপি তার তিন বছরের সন্তান মা ছেলেকে জড়িয়ে ছিল, ছেলে মাকে জড়িয়ে ছিল ওই অবস্থাতেই পুড়ে মারা গেছে তারা। মা ছেলেকে নিয়ে হয়ত বাঁচার অনেক চেষ্টা করেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের আর বাঁচতে পারেনি।
বাসে যে অগ্নিকাণ্ড ঘটছে বা ট্রেনে যে অগ্নিকাণ্ড ঘটছে সে বিষয়ে আপনারা নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা জানেন এর আগে যারা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তারা কেউই রেহাই পায়নি। তাদেরকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এই ঘটনাও যারা ঘটিয়েছে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

আইন আদালত শীর্ষ খবর