ইনজুরি সময়ে জাহিদ হাসান এমিলির গোলে মোহামেডানকে হারিয়ে প্রথম বারের মতো ফেডারেশন কাপের ফাইনালে উঠেছে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। পিছিয়ে পড়েও দ্বিতীয়ার্ধে ১০ জনের পরিণত হওয়া শেখ রাসেল ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছে সাদা-কালোদের।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মোহামেডান ও শেখ রাসেলের সেমিফাইনাল ম্যাচটি ঘিরে গ্যালারিতে ১০ থেকে ১২ হাজার দর্শকের সমাগম হয়। উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে শুরুতে বল-দখলের লড়াইয়ে শেখ রাসেলের চেয়ে এগিয়ে ছিলো মোহামেডান। ছয় মিনিটেই গোলও পেয়ে যায় তারা। স্বদেশি মোস্তফা ইব্রাহিমের লব থেকে বক্সমুখে বল পেয়ে ঠান্ডা মাথায় শেখ রাসেল গোলরক্ষক বিপ্লবকে পরাস্ত করেন ঘানার ফরোয়ার্ড ওসাই মরিসন। ২৭ মিনিটে ব্যবধান বাড়িয়ে নিতো পারতো সাদা-কালোরা। কিন্তু সোহেল রানার থ্রুতে বক্সে ইব্রাহিমের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি। বিরতির আগে শেখ রাসেল গোলপরিশোধের সহজ সুযোগ হাতছাড়া করে ৩১ মিনিটে। হাইতিয়ান স্ট্রাইকার সনির নোরদের শট পোস্টমুখে রক্ষণভাগ খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে ফিরে আসার মুমূর্তে ফিরতি শট নেন মামুনুল। কিন্তু গোলরক্ষক মামুন খান দক্ষতার সঙ্গে সেটি গ্লাভসে নেন।
দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ায় শেখ রাসেল। মাঝমাঠে প্রাধান্য বিস্তার করে একের এক এক আক্রমণ গড়ে তুলে রাসেল। ৫১ মিনিটে মামুনুলের ফ্রিকিক পোস্টে লেগে ফিরে আসলে আবারও গোলবঞ্চিত হয় তারা। উজ্জীবিত রাসেল মোহামেডানের ওপর চাপ অব্যাহত রেখে ৫৯ মিনিটে গোল আদায় করে নেয়। ডানপ্রান্ত থেকে জাহিদ হোসেনের ক্রসে থেকে নিশানাভেদ করে দলকে সমতায় ফেরান মরক্কোর আবু কাসেম।
৭৬ মিনিটে জাহিদ লাল কার্ড (দ্বিতীয় হলুদ কার্ড) পেলে ম্যাচে অচলাবস্থা দেখা দেয়। মামুনুল মোহামেডানের সোহেল রানাকে ট্যাকল করেন। সোহেল রানা মাঠে পড়ে যাওয়ায় জাহিদ বল নিয়ে ওই খেলোয়াড়ের গায়ে মারলে রেফারি তাকে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখান। ফলে মাঠে উত্তেজনা দেখা দেয়। রেফারির সঙ্গে বচসা ও হাতাহাতিতে লিপ্ত হওয়ায় রাসেলের এক কর্মকর্তাকে ডাগআউট থেকে বহিষ্কার করা হয়। নয় মিনিট বন্ধ থাকার পর আবার খেলা শুরু হয়। একজন কম নিয়েও শেখ রাসেল সমানতালেই মোহামেডানের বিপক্ষে লড়ে যায়। ইনজুরির সময়েও ম্যাচের ফলাফল ১-১ থাকায় অতিরিক্ত সময়ে গড়ানোর সম্ভাবনা দেখা দেয়। কিন্তু শেষ মিনিটে শেখ রাসেলকে নাটকীয় জয় উপহার দেন এমিলি। মামুনুলের কর্নারে এমিলির জোরালো হেড জাল কাঁপাতেই উৎসবে ফেটে পড়ে শেখ রাসেল গ্যালারি।
ম্যাচশেষে শেখ রাসেল কোচ মারুফুল হক বলেন, ‘পাসিং ফুটবল খেলতে চেয়েছি আমরা। প্রথমার্ধে সেটা না পারলেও দ্বিতীয়ার্ধে ছেলেরা সেটা পেরেছে। তবে প্রথমার্ধে অনাকাংখিত গোল হজম করতে হয় আমাদের। দ্বিতীয়ার্ধে দলকে উজ্জীবিত করতে চেষ্টা করেছি। ছেলেদের বলেছি, তোমরাই দেশসেরা। সেভাবেই নিজেদের প্রমাণ করতে হবে। বিশেষ করে জাহিদকে আমি আলাদাভাবে মোটিভেট করেছি। কারণ জাহিদ এমন একজন খেলোয়াড় যে চাইলে একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। সেটা কাজে দিয়েছে।’
অন্যদিকে মোহামেডান কোচ সাইফুর বারী টিটু বলেন, ‘ডিফেন্সের ভুলের কারণে হারতে হয়েছে আমাদের। ইয়াসিনের ভুলে প্রথম গোল হজম করতে হয়। শেখ রাসেল ১০ জনের দল হওয়ার পর আমাদের কৌশল পাল্টেছিলাম। আরও অ্যাটাকিং খেলতে চেয়েছি। সেজন্য মোবারকের পরিবর্তে রবিনকে মাঠে নামাই। কিন্তু রবিনের কাছে যেটা প্রত্যাশা ছিলো সেটা সে দিতে পারেনি।’
এদিকে ম্যাচ হেরে ক্ষুব্ধ মোহামেডান সমর্থকদের হাতে লাঞ্চিত হন সাইফুল বারী টিটু। দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার সুযোগে কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল সমর্থক মাঠে ঢুকে পড়ে টিটুর ওপর চড়াও হয়।