আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের সিদ্ধান্ত আজ

আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের সিদ্ধান্ত আজ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ডলার ছাড়ের প্রস্তাব আজ মঙ্গলবার সংস্থাটির বোর্ড সভায় উঠবে। বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় ওয়াংশিটনে অবস্থিত আইএমএফ কার্যালয়ে এই সভা হওয়ার কথা রয়েছে। প্রস্তাব অনুমোদন হলে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করা হবে।
এর আগে চলতি বছরের গত ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফ এর কাছ থেকে ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার ছাড় করেছিল।
গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাবে অনুমোদন দেয় আইএমএফের পর্ষদ। ঋণের শর্ত অনুযায়ী সাত কিস্তিতে ৪২ মাসে এ ঋণ পাওয়ার কথা রয়েছে। ঋণের গড় সুদের হার ২ দশমিক ২ শতাংশ।
এদিকে আইএমএফের বোর্ড সভায় বাংলাদেশের ঋণ প্রস্তাবের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কারও ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থছাড়ের প্রস্তাব উঠছে বলে জানা গেছে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আলোচ্য প্যাকেজে দুই ধরনের ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে বর্ধিত ঋণ সহায়তা বা বর্ধিত তহবিল (ইসিএফ অ্যান্ড ইএফএফ) থেকে পাওয়া যাবে ৩৩০ কোটি ডলার। রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় পাওয়া যাবে ১৪০ কোটি ডলার। ২০২৬ সাল পর্যন্ত এ ঋণ কর্মসূচি চলাকালীন বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধরনের শর্ত পরিপালন ও সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।
ঋণ পাওয়ার জন্য আইএমএফ বাংলাদেশকে কোয়ান্টিটেটিভ পারফরম্যান্স ক্রাইটেরিয়া (কিউপিসি) বা পরিমাণগত কর্মসক্ষমতার মানদণ্ড, ইন্ডিকেটিভ টার্গেটস (আইটি) বা নির্দেশক লক্ষ্য এবং স্ট্রাকচারাল বেঞ্চমার্ক (এসবি) বা কাঠামোগত মাপকাঠি পূরণের শর্ত দিয়েছে। এর মধ্যে নিট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (এনআইআর), প্রাইমারি ব্যালান্স ও এক্সটার্নাল পেমেন্টস এরিয়ার্স সংক্রান্ত শর্তগুলো কিউপিসির আওতাভুক্ত।
সূত্র জানায়, নিট রিজার্ভ-সংক্রান্ত শর্ত এখনো পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। নির্দেশক হিসেবে কর রাজস্ব, সামাজিক খাতে সরকারের ব্যয় ও সরকারের মূলধনি বিনিয়োগ সংক্রান্ত কিছু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল আইএমএফ।
অন্যদিকে লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাজস্বও আহরণ করতে পারেনি এনবিআর।
আইএমএফের শর্তে গত জুনের মধ্যে কর-জিডিপির অনুপাত দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ, বিপিএম৬ অনুসারে রিজার্ভের হিসাবায়ন, বাজারভিত্তিক বৈদেশিক মুদ্রার দর নির্ধারণ, ব্যাংকের পাইলট রিস্কভিত্তিক নজরদারির কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের তথ্য প্রকাশের কথা বলা হয়েছিল।
এ ছাড়া জুলাইয়ের মধ্যে সুদহারে করিডোর পদ্ধতি গ্রহণেরও শর্ত দিয়েছিল সংস্থাটি। শর্ত ছিল সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংসদে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধন ও ফাইন্যান্স কোম্পানি আইনের খসড়া জমা দেওয়ারও। এছাড়া সেপ্টেম্বর শেষে জলবায়ু ও সবুজ উদ্যোগকে সংহত করতে টেকসই সরকারি কেনাকাটার নীতি গ্রহণ ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের শর্ত ছিল। ঋণ কর্মসূচিতে চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে জ্বালানি পণ্যের দাম সমন্বয়ে সময়ভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি নির্ধারণেরও শর্ত দেওয়া হয়।
আইএমএফের এশীয় ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে গত ৪ থেকে ১৯ অক্টোবর বাংলাদেশে সংস্থাটির রিভিউ মিশন সম্পন্ন হয়। মিশন শেষে এক বিবৃতিতে রাহুল আনন্দ বলেন, প্রথম কিস্তির রিভিউ সম্পন্ন করার জন্য যেসব নীতি গ্রহণ প্রয়োজন, সেসব বিষয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আইএমএফ কর্মকর্তাদের বৈঠকে ঐকমত্য হয়েছে। আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় কাঠামোগত সংস্কারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ উল্লেখযোগ্য সংস্কার করেছে। কিন্তু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বিদ্যমান ঝুঁকি এবং বিশ্বব্যাপী আর্থিক খাতে ক্রমাগত সুদহার বৃদ্ধির সম্মিলিত প্রভাবে সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। এর ফলে চাপে পড়েছে স্থানীয় মুদ্রা টাকার বিনিময় হার ও বৈদেশিক মুদ্রার মজুত। এ অবস্থায় স্বল্পমেয়াদি নীতি অগ্রাধিকারে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, নাজুক জনগোষ্ঠীর ওপর এসব অর্থনৈতিক দুর্বিপাকের প্রভাবকে সহনীয় করা এবং বহিস্থ প্রভাবকের অভিঘাত মোকাবিলায় সহনশীলতা তৈরিতে জোর দিতে হবে।
প্রথম রিভিউ সম্পন্ন হলে এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ), এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ)-এর আওতায় ৪৬ লাখ ২০ হাজার ডলার (কোটার ৩৩ শতাংশ) এবং রেসিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় ২১ কোটি ৯০ লাখ ডলার (কোটার ১৫.৮ শতাংশ) ছাড় করা হবে।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ খবর