মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যকার ঐতিহ্যবাহী ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট’র দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মঙ্গলবার রাতে।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী মিট রমনি’র মধ্যকার দ্বিতীয় দফার এ বিতর্ক অনুষ্ঠানে সঞ্চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত নারী সাংবাদিক ক্যান্ডি ক্রাউলি। একজন নারী সাংবাদিক হিসেবে এ ধরণের হেভিওয়েট অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করার মত গুরু দায়িত্ব পালনের আগে নিজের বিভিন্ন অনুভূতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন ক্যান্ডি ক্রাউলি।
নিউইয়র্কের হ্যাম্পস্টেডের হফসট্রা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের স্থানীয় সময় অনুযায়ী রাত নয়টা এবং বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী বুধবার সকাল সাতটায় মুখোমুখি হবেন আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রিপাবলিকান মিট রমনি ও ডেমোক্রেট বারাক ওবামা।
প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হিসেবে সাংবাদিক জিম লেহরার সফলতাই প্রমাণ করে যে এ ধরণের অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করা একজন সাংবাদিকের জন্য খ্যাতিলাভের অভাবনীয় সুযোগ।
এরই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় বিতর্কে সঞ্চালক হিসেবে মনোনীত হয়ে একজন নারী সাংবাদিক হিসেবে ক্রাউলি ইতিমধ্যেই যথেষ্ট স্বীকৃতি ও মনোযোগ আদায় করে নিতে সক্ষম হয়েছেন।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ১৯৯২ সালের পর এই প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে সঞ্চালক হিসেবে কাজ করতে যাচ্ছেন কোনো নারী ।
মঙ্গলবার রাতের বিতর্কে নিজের ভূমিকা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পুরো ব্যাপারটিতে নিজের অনুভূতির কথা এবং একইসঙ্গে অনুষ্ঠানে দর্শকরা আসলে তার কাছে কী প্রত্যাশা করছে– তা তুলে ধরেন ক্যান্ডি ক্রাউলি। তিনি সিএনএন’র মত বিশ্বের প্রথম সারির একটি সংবাদমাধ্যমের প্রধান পলিটিকাল করেসপন্ডেন্ট।
প্রশ্ন: বিতর্কের আগে সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার অনুভূতি ও প্রতিক্রিয়া কি ?
ক্রাউলি: আমি মনে করি না, আমি সবার থেকে আলাদা অনুভব করছি। তবে পরিস্থিতির তাৎপর্য কিছুটা অন্যভাবে ধরা পড়ে আমার দৃষ্টিতে।
প্রথম বিতর্কের আগ দিয়ে আমরা দেখলাম, প্রত্যেকেই বলছে এই বিতর্ক কোনো কিছুই পরিবর্তন করবেনা। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠানের পর কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিস্থিতির কিছুটা হলেও পরিবর্তন এসেছে। আমার কাজ হলো ভোটারদের মনোভাব বুঝে তারা প্রার্থীদের কাছে যা জানতে চায় তা উপস্থাপন করা ।
প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠান এবং দ্বিতীয় বিতর্কে মারথা (ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বিতর্কের সঞ্চালক) যা করেছেন তা এবং আগের ধারা অনুসরণ করে আমি আমার দায়িত্ব পালন করবো।
প্রশ্ন: আপনার উপস্থাপনের প্রক্রিয়াটি হবে বাকিদের থেকে একটু আলাদা যেহেতু আপনি সেসব প্রশ্নই করতে পারবেন যা উপস্থিত শ্রোতারা করতে চায়?
ক্রাউলি: আমি অবশ্য এ ধরনের সঞ্চালনা এর আগে করিনি। এ বিষয়টি তো আমাকে কিছুটা উদ্বেগে ফেলছেই। আমি নিজেও সাধারণ ভোটারদের বাইরে নই এবং এমন নয় যে আমি জানি না সাধারণ মানুষ কি ভাবছে। আমার চারপাশের মানুষ কী জানতে চায় তা নিয়ে আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। সাধারণ মানুষ কোন বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করতে চায় তা আমি জানি বলেই মনে করি।
প্রশ্ন: বিতর্ক অনুষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়া সঞ্চালকদের মধ্যে আপনি সবচেয়ে বেশি মনোযোগ পেয়েছেন, কারণ গত ২০ বছরে এই প্রথম একজন নারী হিসেবে আপনি এ কাজে মনোনীত হলেন?
ক্রাউলি: এটা সম্পূর্নভাবে আলাদা অনুভূতি। তবে যখন প্রথম ডাক পেলাম, আমি তখনও ভাবিনি যে আমি একজন নারী। আবার এটাও ভাবা ঠিক নয় যে এটা খুবই সহজ একটা কাজ হবে। সারা জীবন ধরেই আমি একজন নারী। প্রথমে যে জিনিসটি আমার মাথায় এসেছিলো, ‘এখানে তো ভালোই মজা হবে’। কিন্তু যখন আমার কাছে প্রশ্ন আসা শুরু করলো তখনই মূলত আমি বুঝতে পারলাম যে এর আলাদা তাৎপর্য আছে।
প্রশ্ন: এখন পর্যন্ত ক্যারোল সিম্পসনই শেষ নারী যিনি কোনো প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনিই সিএনএনকে বলেছেন ‘নারীরা কোনঠাসা থাকতে বাধ্য হয়’। তার মত আপনিও একই কাজে মনোনীত হয়েছেন। আপনার মনেও কি এমন প্রশ্ন উকি দেয়নি?
ক্রাউলি: ক্যারোল আর আমি খুব ভালো বন্ধু। তার ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছে আমি জানিনা। তবে আমি তার মত মনে করি না। আমি মনে করি আলোচনায় আমিও খুব ভালোভাবে অংশ নিতে পারবো। আমি নিজেকে কোনঠাসা মনে করি না। তবে আমি বুঝতে পারি আসলে তিনি কোন পরিস্থিতিতে এ কথা বলেছেন। কারণ ক্যারোলের জন্য সহজ কোনো রাস্তা ছিলো না। একই কথা আমার জন্য এবং আমার মত এই পেশার আরো অন্য অনেক নারীর ক্ষেত্রেও খাটে। কিন্তু বাধা সত্ত্বেও আমাদের দাঁড়াতে হবে। কাউকে না কাউকে তো প্রথমে শুরু করতেই হবে। ক্যারোল তাই করেছে। আমি আশা করি আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগ ভবিষ্যতে নারী সাংবাদিকদের পথ চলা আরও সহজ করে দেবে।
প্রশ্ন: আচ্ছা আপনি যদি দেখেন নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো প্রার্থী যা বলেছেন তার সঙ্গে বিতর্কে বলা তার বক্তব্য সাংঘর্ষিক তখন কি আপনি সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিক্রিয়া দেখাবেন?
ক্রাউলি: আমি মনে করি তারা দু’জনেই পরিণত ব্যক্তি। এবং কথা বলার ক্ষেত্রে তারা অবশ্যই নিজ অবস্থান সম্পর্কে সচেতন। এটা মনে করি না যে আমি বিতর্কে হস্তক্ষেপ করতে পারবো না, অথবা তাদের প্রতিটি কথায় হস্তক্ষেপ করাও আমার ঠিক হবে না। তবে আমি মনে করি ওই মুহুর্তে যা করা দরকার আমি ঠিক তাই করবো।