প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান কাভারেজে বেসরকারি টেলিভিশনের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ‘প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান কাভার করতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই’ বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস ইউং থেকে বেসরকারি টেলিভিশনের রিপোর্টার ও ফটোগ্রাফারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ফলে গত সোমবার বিকেল থেকে কোনো বেসরকারি টেলিভিশনের রিপোর্টার ও ক্যামেরাম্যান প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান কাভার করতে যেতে পারছেন না। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা(বিএসএস), বাংলাদেশ বেতার, ইউএনবি ও বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচিগুলো কাভারেজের জন্য অনুষ্ঠানে যেতে পারছে।
টেলিভিশনগুলোর সংবাদে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসুচি ও বক্তব্য যথাযথভাবে কাভারেজ না দেওয়া এবং টক শো’তে ঢালাওভাবে সরকারের সমালোচনা করার কারণে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে।
তবে এই নিষেধাজ্ঞা সাময়িক। বিষয়টি নিয়ে বেসরকারি টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে কথা বলা হচ্ছে বলেও সূত্রটি জানায়।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, আসলে নিষেধাজ্ঞা নয়, সাময়িকভাবে বেসরকারি টেলিভিশনগুলোকে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি কাভার করা থেকে বিরত রাখা হয়েছে।
এদিকে কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশনের প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি কাভার করেন এরকম কয়েকজন রিপোর্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি কাভার করতে না যাওয়ার জন্য প্রেস উইং থেকে আমাদের যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে কি কারণে নিষেধ করা হয়েছে, সে ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।’’
সরকারি সাংবাদ মাধ্যমগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি টেলিভিশনগুলো প্রধানমন্ত্রীর সকল কর্মসূচি নিয়মিত কাভার করে আসছে। এ জন্য বেসরকারি টেলিভিশনের রিপোর্টর ও ক্যামেরাম্যানদেরকে এসবি পাস দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু কর্মসূচিতে রিপোর্টারদের প্রবেশের অনুমতি না দিলেও ছবির জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় ক্যামেরাম্যানদের অনুমতি দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো ছাড়া অন্যান্য অনুষ্ঠানে প্রিন্ট মিডিয়া অর্থাৎ সংবাদপত্র, অনলাইন পত্রিকা ও সংবাদ সংস্থাকে কাভারেজের অনুমতি দেওয়া হয় না।
গত সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ সভার ছবি ধারণ করতে দেওয়া হয়। এরপর থেকে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচিতে ছবি ধারণের ক্ষেত্রেও নিষেধ করা হয়।
সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভা কাভারেজের জন্য এক দিন আগে মিডিয়াতে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হলেও সভার আগে সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে ফোন করে জানানো হয়, কর্মসূচি কাভার করার জন্য আসার দরকার নেই।
এ ব্যাপারে বেসরকারি টেলিভিশনের একজন রিপোর্টার বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘ওই দিন প্রেস উইংয়ের একজন কর্মকর্তা আমাকে ফোন করে বলেন, মিটিং কাভার করতে আসতে হবে না। ক্যামেরাম্যানেরও আসার দরকার নেই। বিষয়টি বিস্তারিতভাবে জানতে চাওয়া হলে শুধু সংসদীয় বোর্ডের সভাই নয় অন্য কর্মসূচিগুলোও কাভার করতে আসার দরকার নেই, প্রয়োজন হলে ডাকা হবে বলে ওই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।’’
সুত্র জানায়, সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বেসরকারি টেলিভিশন ও সংবাদপত্রে সরকারের ঢালাও সমালোচনা নিয়ে কথা ওঠে। এতে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচির সংবাদ ও তার বক্তব্য টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে ৪/৫টি খবরের পর প্রকাশ করা হয়। কোনো কোনো পত্রিকায় ভেতরের পাতায় ছাপানো হয়। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর টক শো’তে ঢালাওভাবে সরকারকে দোষারোপ করা হচ্ছে।’
বেসরকারি টেলিভিশনগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর নিউজ যথাযথভাবে কাভারেজ দেওয়া হয় না বলে প্রধানমন্ত্রী নিজেও মন্তব্য করেন।
ওই দিন বিকেলেই বেসরকারি টেলিভিশনকে কাভারেজে যেতে নিষেধ করা হয়। পর দিন মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরে ইসলামিক ইউনির্ভাসিটির অনুষ্ঠানে বেসরকারি টিভিকে কাভারেজ করতে দেওয়া হয়নি। ওই দিন দুপুরের পর একনেকের সভায় বেসরকারি টেলিভিশনের ক্যামেরা যায়নি। বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় গ্রন্থ সমিতির আয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানেও যাননি টিভি রিপোর্টার ও ক্যামেরাম্যানরা।
বিটিভি থেকে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সংগ্রহ করে বেসরকরি টিভি চ্যানেলগুলো তা প্রকাশ করছে। কোনো কোনো চ্যানেল সংবাদ সংস্থা থেকে সংবাদ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্টিল ছবি দিয়ে(গ্রাফিক্স করে) সংবাদ প্রচার করছে বলে বেসরকারি টেলিভিশনের একজন রিপোর্টার জানান। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর প্রতিদিনের কর্মসূচি সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারদের আগের দিন ই-মেইল করে জানিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু গত সোমবার ই-মেইলেও কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে না বলেও জানান ওই রিপোর্টার।
বিষয়টি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের একাধিক কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।