ব্যর্থতা-অদক্ষতা চায়না কনটেইনার লাইন পরিচালনা ছাড়তে হচ্ছে এমজিএইচ গ্রুপকে

ব্যর্থতা-অদক্ষতা চায়না কনটেইনার লাইন পরিচালনা ছাড়তে হচ্ছে এমজিএইচ গ্রুপকে

ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে চায়না কন্টেইনার লাইন পরিচালনা ছাড়তে হচ্ছে শিল্পগোষ্ঠী এমজিএইচ কে। গত ১০ বছর লাইন পরিচালনার পরও ব্যবসায়িক অদক্ষতার কারণে ল্ক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় চায়না শিপিং কোম্পানি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি থেকে।

এমজিএইচ’র পরিবর্তে কন্টিনেন্টাল শিপিং লাইন নামে দেশীয় আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছে চায়না শিপিং। এর ফলে বিদেশি জাহাজ অপারেটিংয়ের ক্ষেত্রে খ্যাতনামা বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান এমজিএইচ গ্রুপ বড় ধরনের ব্যবসায়িক ধাক্কা খেল বলে মনে করছেন শিপিং ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা।

তবে বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমস এবং সংশ্লিষ্ট দু`টি শিপিং কোম্পানির কেউই তেমন মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না।

চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, নতুন নিয়োগ পাওয়া কন্টিনেন্টাল শিপিং লাইনকে গত ১ অক্টোবর থেকে কাজ শুরুর আদেশ দেয় চায়না শিপিং কোম্পানি। কিন্তু এর আগেই চট্টগ্রাম কাস্টমস ও বন্দরের বিরুদ্ধে এমজিএইচ গ্রুপ মামলা দায়ের করে।

কিন্তু এমজিএইচ গ্রুপ অন্যায়ভাবে তাদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ এনে হাইকোর্টে এ বিষয়ে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা চেয়ে একটি মামলা দায়ের করে। এতে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসকে বিবাদী করা হয়। এতে আদালতের সর্বশেষ রায় না আসা পর্যন্ত কন্টিনেন্টাল শিপিং লাইনের বিপরীতে বন্দরে চায়না শিপিংয়ের জাহাজ পরিচালনার কোন অনুমতি না দেয়ার জন্য বন্দর ও কাস্টমসকে আদেশ দেয়ার আবেদন জানানো হয়।

হাইকোর্ট দু`মাসের জন্য এমজিএইচ গ্রুপ ও কন্টিনেন্টাল শিপিংয়ের যৌথ স্বাক্ষরে চায়না শিপিংয়ের জাহাজ পরিচালনার আদেশ দিতে বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

এদিকে, আদেশ পেয়েও মামলার কারণে কাজ শুরু করতে না পারায় চায়না শিপিং কম্পানির কন্টেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে আসা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে এমজিএইচ গ্রুপের মামলার বিরুদ্ধে কন্টিনেন্টাল গ্রুপও আদালতে পাল্টা আপিল আবেদন করে। এ আবেদনের উপর শুনানি আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে কন্টিনেন্টাল শিপিং লাইনসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রাশিদ আলী বলেন, পহেলা অক্টোবর থেকে কাজ শুরুর সব প্রস্তুতি শেষ করলেও এমজিএইচ গ্রুপের মামলার কারণে করতে পারিনি। কন্টিনেন্টাল-এমজিএইচ গ্রুপ যৌথ স্বাক্ষর ছাড়া কন্টেইনার খালাস না করতে মামলার সাময়িক রায় নিয়ে আসায় আমদানি-রপ্তানি কন্টেইনার বন্দরে আসা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।’

উল্লেখ্য কন্টিনেন্টাল গ্রুপ বর্তমানে কোরিয়ান হুন্দাই, হংকংভিত্তিক ওরিয়েন্ট ওভারসিস কন্টেইনার লাইনস (ওওসিএল) এবং সামুদা শিপিং লাইনসের দেশিয় এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। এদের মধ্যে ১ অক্টোবর থেকে চায়না কন্টেইনার লাইনস তাদেরকে নতুন এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়।

অভিযোগ রয়েছে, চায়না কন্টেইনার লাইনসের এজেন্ট হিসেবে দেশে ভালো ব্যবসা করতে পারেনি এমজিএইচ গ্রুপ। আর প্রতিমাসে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও পুরণ করতে না পারায় দু`মাস আগে চায়না কন্টেইনার লাইনস কর্তৃপক্ষ এমজিএইচ গ্রুপকে শোকজ করে।

এ শোকজ নোটিশের সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় তাদের লাইসেন্স বাতিল করে ১ অক্টোবর থেকে নতুন এজেন্ট নিয়োগ দেয় চায়না শিপিং কোম্পানি। এই আদেশে ক্ষুব্ধ হয়ে এমজিএইচ কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে মামলা করে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আসে।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে এমজিএইচ গ্রুপের কর্মকর্তা আহসানুল হক চৌধুরী বলেন, “মামলা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে বিষয়টি আমি এখন দেখছি না। এছাড়া মামলা হলেও কন্টেইনার বন্দরে আসার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হচ্ছে না।”

বিস্তারিত জানতে তিনি ঢাকা অফিসে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। পরে ঢাকা অফিসে যোগাযোগ করা হলেও সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকর্তা এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।

উল্লেখ্য থাইওয়ানের সরকারি শিপিং লাইন ইয়াং মিন লাইন, হংকংয়ের এমিরেটস লাইন, চিলির কম্পানিয়া সুদামেরিকান ডি বাপুরেস শিপিং লাইন, নুরেশিয়া শিপিং লাইন, সিঙ্গাপুরের ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস লাইনস ও মালয়েশিয়ার হাবলাইন শিপিং লাইনসের দেশিয় এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে এমজিএইচ গ্রুপ।

এদের মধ্যে ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস লাইন পরিচালনা নিয়ে জিবিএক্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে মামলা করেছে এমজিএইচ গ্রুপ। এখনো তা বিচারাধীন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

অর্থ বাণিজ্য