রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলোর ব্যবসায়িক প্রস্তাব সম্বলিত আবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিলো মঙ্গলবার। শেষ দিন পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া নতুন ৯ টি ব্যাংকের মধ্যে ৭ টি ব্যাংক চুড়ান্ত ব্যবসায়িক প্রস্তাব জমা দিতে পেরেছে। দুটি ব্যাংক আরো ছয়মাস সময় চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে।
ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করতে এই সময় চেয়েছে প্রস্তাবিত মধুমতি ব্যাংক এবং একটি এনআরবি ব্যাংক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায় যে সাতটি ব্যাংক সব শর্ত পূরণ করে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে তার মধ্যে চারটি ব্যাংকের চূড়ান্ত প্রস্তাব আসে গত তিন দিনে। এর মধ্যে রোববার মেঘনা ব্যাংক ও ফারমার্স ব্যাংক অনুমোদন নেয়ার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদন করে। সোমবার আবেদন করে ইউনিয়ন ব্যাংক আর মঙ্গলবার শেষ দিনে আবেদন জমা পড়ে একটি এনআরবি ব্যাংকের। বাকি তিনটি আবেদনই জমা পড়ে এর আগের সপ্তাহে। ওই সপ্তায় মিডল্যান্ড ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চূড়ান্ত ব্যবসায়ীক প্রস্তাব সম্বলিত আবেদন জমা পড়ে।
সূত্র জানায়, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের মূল উদ্যোক্তা ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির নেতা অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী। চেয়ারম্যান হিসেবে নাম রয়েছে এস এম আমজাদ হোসেনের।
মিডল্যান্ড ব্যাংকের জন্য অনুমোদন পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর আয়কর উপদেষ্টা এসএম মনিরুজ্জামান খন্দকার। প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ফরাসত আলী এনআরবি কর্মাশিয়াল ব্যাংকের আবেদন জমা দিয়েছেন। মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দেখা গেছে সাংসদ এইচএন আশিকুর রহমানের নাম।
তবে ইউনিয়ন ব্যাংকের সম্মতি পেয়েছেন শহিদুল আলম নামের এক ব্যক্তি। তবে এই ব্যাংকের সঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ জড়িত বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে।
এদিকে অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলোর ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা মনিটরিং করার জন্য এরই মধ্যে একটি ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবৃদ্ধি ও নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আব্দুল ওয়াদুদকে সমন্বয়ক করা হয়েছে। এই কমিটি অনুমোদন চাওয়া ব্যাংকগুলোর প্রস্তাবনা পরীক্ষা করে দেখবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানায়, মধুমতি ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমতিপত্র নেওয়ার জন্য কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। সাড়া না দেওয়া এ ব্যাংকের চেয়ারম্যান হলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। সবশেষ তিনি আরো ছয়মাস সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। যুক্তরাজ্য প্রবাসী ইকবাল চৌধুরীও নির্ধারিত সময়ে আবেদন করতে পারেননি। তিনিও সময় চেয়েছেন।
সূত্র বলছে, প্রাপ্ত আবেদন এবং যারা সময় চেয়েছেন এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরবর্তী বৈঠকে।
গত এপ্রিল মাসের ১৬ তারিখে ৬ মাস সময় বেধে দিয়ে অনুমোদন পাওয়া ৯ ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের আগ্রহপত্র লেটার অব ইন্টেন্ড-এলওআই) ইস্যু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন উধর্বতন কর্মকর্তা এব্যাপারে রোববার বলেন, এর বাইরে উদ্যোক্তারা পরিশোধিত মূলধন হিসেবে যে ৪০০ কোটি টাকা পে অর্ডার করবেন তা কর পরিশোধিত কিনা অর্থাৎ সাদা টাকা কিনা তা জানতে চাওয়া হবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে। এরপর এদের উদ্দেশ্যে চুড়ান্ত লাইসেন্স দেওয়া হবে। যেটি নিয়ে ব্যাংকগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে তার বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে চলতি বছরের এপ্রিল মাসের ৩ তারিখে প্রবাসীদের মালিকানাতে তিনটি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ৮ এপ্রিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড সভায় দেশীয় উদ্যোক্তাদের মালিকানাতে ৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়। গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ব্যাংকের জন্য আগ্রহী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। মোট ৩৭টি আবেদন জমা পড়ে নতুন ব্যাংকের জন্য।