মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগ দিয়ে প্রার্থীদের প্রচারণা লড়াইয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট’ আবার ফিরে আসছে অল্প সময়ের মধ্যেই। মঙ্গলবার রাতে দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর যুক্তি তর্কের মুখোমুখি লড়াইকে সামনে রেখে এখন উত্তেজনায় কাঁপছে পুরো আমেরিকা।
প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটের দ্বিতীয় পর্বে মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের স্থানীয় সময় নয়টায় মুখোমুখি হচ্ছেন ডেমোক্রাট দলীয় প্রার্থী ও যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনি।
নির্বাচনের মাত্র তিন সপ্তাহেরও কম সময় সামনে রেখে এই বিতর্ক অনুষ্ঠানকে দেখা হচ্ছে উভয় প্রার্থীর জন্যই একটি সন্ধিক্ষণ হিসেবে।
নিউইয়র্কের হ্যাম্পস্টেডের হফস্ট্রা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শুরু হবে এ বিতর্ক অনুষ্ঠান। সরাসরি টেলিভিশনে প্রচারিত এ অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বের অগণিত দর্শক।
এই প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটকে তাই দেখা হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বীকে পেছনে ফেলার ক্ষেত্রে উভয় প্রার্থীর জন্যই এক সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে।
৩ অক্টোবর রাতের প্রথম দফার বাক লড়াইয়ে কিছুটা হোঁচট খাওয়া ওবামা অবশ্য এখনও কোনো কোনো জনমত জরিপে রমনির থেকে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। তবে ১৬ অক্টোবর রাতের লড়াইয়ের আগে স্নায়ু চাপের বেশিরভাগটা ওবামাকেই বহন করতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। প্রথম পর্বে দৃশ্যতই কর্তৃত্ব করা রমনি ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আবারও ওবামার ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অনেকে আবার একে দেখছেন প্রথম পর্বে নিষ্প্রভ ওবামার জন্য পায়ের নিচে মাটি ফিরে পাওয়ার একটি সুযোগ হিসেবে। নির্বাচনের আর মাত্র তিন সপ্তাহ সামনে রেখে অনুষ্ঠেয় আজকের বিতর্কে ওবামা যদি রমনিকে পেছনে ফেলতে পারেন, তবে তিনি শুধু নিজের হারানো অবস্থানই ফেরত পাবেন না বরং তাকে আবারও পেছনে ফেলা রমনির জন্য হয়ে পড়বে অনেকখানি কঠিন।
তাছাড়া গতবারের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া সর্তক ওবামার সামনে রমনির আক্রমণাত্মক উপস্থাপনের নীতি কতটা কাজে আসবে তাই এখন দেখবার বিষয়। তবে প্রথম পর্বের মত দ্বিতীয় বিতর্কেও ওবামাকে পেছনে ফেলতে পারলে তা পরোক্ষভাবে সমগ্র জাতির সামনে নিজের রাষ্ট্রনায়কোচিত ইমেজ তুলে ধরার ক্ষেত্রে রমনির জন্য দুর্লভ সুযোগ হিসেবে মূল্যায়িত হবে।
এদিকে, মার্কিন সংবাদমাধ্যমের জরিপ অনুযায়ী ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ বা সিদ্ধান্তহীনতার দোলাচলে ঝুলতে থাকা রাজ্যগুলোর জনমত জরিপ সামান্যভাবে এখনও ওবামার দিকেই ঝুঁকে আছে। তবে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে মার্কিন মিডিয়ায় অভিহিত এ রাজ্যগুলোর বেশিরভাগ ভোটারই আসলে এখনও ভোটদানের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীন।
‘যুদ্ধক্ষেত্র’ রাজ্যগুলো প্রথাগতভাবে আসলে রিপাবলিকান বা ডেমোক্রাট কোনো দলেরই ঘাঁটি নয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জটিল নির্বাচনী আইনের কারণে এ রাজ্যগুলোতে এগিয়ে থাকাও মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। এ আইন অনুযায়ী শুধু জনগণের মোট ভোটই জয়লাভর জন্য একমাত্র বিবেচ্য নয় বরং রাজ্যগুলোতেও ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে থাকার ওপর চূড়ান্ত জয়লাভ অনেকাংশেই নির্ভরশীল।
খুব শিগগিরই কোনো কোনো রাজ্যে আগাম ভোট শুরু হয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিতীয় বিতর্কের ফলাফল ভোটারদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে ওহাইয়ো এবং আইওয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ রাজ্যগুলোতে বিতর্কের ফলগত প্রভাব পড়তে পারে। বিতর্কে যে কারো ছোট-খাটো ভুলই বড় মাশুল গোণার কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে– যার দায় থেকে মাথা বাঁচানোর সুযোগ আর নাও মিলতে পারে।