আমার সামনে কোন চাহিদা নাই: মোস্তফা কামাল

আমার সামনে কোন চাহিদা নাই: মোস্তফা কামাল

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র সভাপতি হিসেবে আ হ ম মোস্তফা কামাল তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। তার সময়ে দেশের ক্রিকেটের অনেক ক্ষেত্রে গতি এসেছে। আইসিসির সহ-সভাপতি এবং সভাপতি হিসেবেও তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে কাজ করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন। মঙ্গলবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন মোস্তফা কামাল। সংক্ষিপ্তাকারে বিসিবি সভাপতির সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে ছিলেন ছেড়ে যেতে খারাপ লাগছে কি না এবং কোন অতৃপ্তি আছে কি না?

কামাল: আমার মনে হয় যা চাহিদা ছিলো সব পূরণ হয়েছে। আমার সামনে কোন চাহিদা নেই। একটা পেতে হলে আরেকটি ছাড়তে হয়। বড় কিছু পাওয়ার জন্য ছোট স্বার্থ ত্যাগ করতে হয়। আমি মনে করি তুলনামূলক ভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য কাজের বড় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যই আমি কাজ করবো। হয়তো সরাসরি করতে পারবো না। কিন্তু পরক্ষ ভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

প্রশ্ন: বোর্ডের সভাপতি হিসেবে যে কাজগুলো করতে চেয়েছিলেন সব শেষ করতে না পারায় কোন অতৃপ্তি আছে?

কামাল: তিন বছরে সব কিছু করা যায় না। ক্রিকেট একটি চলমান প্রক্রিয়া। মোটামুটি ধারণাগুলো দেওয়া হয়েছে। দু’একটা জায়গায় হাত দিতে পারিনি। কক্সবাজারে স্টেডিয়াম করার কথা বলেছি সেটা এখনও করতে পারিনি। নিজেরা কিছু স্টেডিয়ামের কাজ করতে চেয়েছি সেগুলো হচ্ছে। একটা টিভি চ্যানেল করার ইচ্ছে ছিলো। টিভি চ্যানেল আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টিভি চ্যানেল করার জন্য আমি বোর্ডকে অনুরোধ করবো। এছাড়া বিপিএল করার কথা ছিলো, হয়েছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট করার কথা ছিলো, তাও হবে।

প্রশ্ন: কক্সবাজার স্টেডিয়াম কি হচ্ছে, হলে কবে?

কামাল: বিশ্বকাপের আগেই হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা এখন অবকাঠামো নির্মাণের দিকে যাবো না, উইকেট দিয়ে শুরু করবো। নতুন সভাপতি দায়িত্ব নেওয়ার পর তাকে এবং ববি (সাজ্জাদুল আলম ববি) ভাইসহ বিসিবির কয়েকজন পরিচালককে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবো কক্সবাজার স্টেডিয়াম করার অনুমতির জন্য।

প্রশ্ন: কক্সবাজার স্টেডিয়ামের মালিকানা এনএসসি না বিসিবির হাতে থাকবে?

কামাল: পর্যটন এবং বিসিবির একসঙ্গে করার কথা হচ্ছে। পর্যটনও মালিকানায় থাকবে। পর্যটন জায়গার ব্যবস্থা করে দেবে, আমাদের টাকায় সেটাকে তৈরি করবো। সুতরাং পর্যটন এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যৌথ মালিকানায় হবে স্টেডিয়ামটি।

প্রশ্ন: ভারত সফরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আপনার সময়ে তা বস্তবায়ন হয়নি?

কামাল: বেশিদিন অপেক্ষা করা লাগবে না। এটা হবে। সুজন (ভারপ্রাপ্ত সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী) জানে অফিসিয়ালি করা হচ্ছে। ভারতের ক্রিকেট সূচি খুব ব্যস্ত। কোন একটি জায়গায় আমাদের সুযোগ করে দেওয়া খুব কঠিন। আমি যে ভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে ভারত রাজি হয়নি। আমি বলেছিলাম সাতদিনের জন্য হলেও বাংলাদেশকে সফরে নেওয়ার জন্য। তারা বলেছে, এতে আমাদের মর্যাদা হানি হবে। বাংলাদেশ এলে একটা পূর্ণঙ্গ সিরিজ খেলতেই আসবে। আমি মনে করি আমার পরে যিনি আসবেন তিনি ধারাবাহিকতা রাখবেন। আমাদের বোর্ডের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে।

প্রশ্ন: পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের কাছে আপনার দায়বদ্ধতা এখন কি আরও বেড়েছে?

কামাল: আমার পরে যিনি আসবেন তাকেও অনুরোধ করবো পাকিস্তানে দল পাঠানোর জন্য। শ্রীলঙ্কাও পাকিস্তানে যেতে চায়। জিম্বাবুয়ে যেতে রাজি আছে। আমি চাই বাংলাদেশ আগে যাক। সেই কাজটি আমাদের করতে হবে। এটার দায়বদ্ধতা ওই রকম কিছু না। কথা দিয়েছিলাম আমরা যাবো। দায়বদ্ধতা আর কথা রাখা এক জিনিস না। কথা রাখাকে হালকা ভাবে নিলে দায়বদ্ধতা না। সিরিয়াসলি নিলে দায়বদ্ধতা। কারণ তারা আমাদের বিশ্বাস করেছে। আমি মনে করি এখন যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

প্রশ্ন: কোচ সম্পর্কে একটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে, আসল ঘটনা কি?

কামাল: কোচের সঙ্গে আমাদের একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। সেটা হচ্ছে তার সঙ্গে সুজন কথা বলেছে, আমিও কথা বলেছি। আমি কথা বলেছি তাকে আনার জন্য। সুজন কথা বলেছে ‘টার্মস এন্ড কন্ডিশন’ নিয়ে। তিনি মনে করেন আমাদের এখানে কোন সিরিজ না থাকলে ছুটিতে যাবেন। এই সময় তিনি তার পরিবারের কাছে থাকবেন। আমরা বলি অন্যটা, এটাই তার জন্য কোচিং করানোর উপযুক্ত সময়। কোচিংয়ের দায়িত্বটি তাকে তখনই গ্রহণ করা উচিৎ যখন খেলা থাকবে না। খেলা শুরু হয়ে গেলে ‘ফিজিক্যাল’ ফিটনেস দেখা ছাড়া কিছু করার থাকে না। তখন কোচিং কি করাবেন? স্টাইল কি শেখাবেন। বেসিক কি শেখাবেন। বেসিক তো শেখাতে হবে। মৌলিক জায়গায় কোন সমস্যা থাকলে সেগুলোতে ঠিক করে দেবেন।

প্রশ্ন: তিনি ইচ্ছে মত ছুটি ভোগ করতে পারবেন কখনো এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিলো?

কামাল: এরকম কখনো বলা হয়নি। তাকে ধারণা দেওয়া হয়েছিলো ৪৫ দিন নির্দিষ্ট থাকলেও দুই চারদিন বেশি ছুটি নিতে পারবেন। মনে করেন আমাদের এক বছরে কোন আন্তর্জাতিক সিরিজ নেই। তখন কি তিনি এক বছরের জন্য ছুটিতে চলে যাবেন। এটা তো হতে পারে না। তিনি বলছেন আমি তো তোমাদের এভাবে বলেছিলাম। আমার মনে হয় উনি একজন পেশাদার কোচ। এখানে মূল সমস্যটি হচ্ছে তার পরিবার। এখন আমরা তাকে অনুরোধ করবো ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজটি করে দিয়ে যাওয়ার জন্য।

প্রশ্ন: বিপিএলের দ্বিতীয় আসর এসে যাচ্ছে কিন্তু এখনও অনেক খেলোয়াড় টাকা পায়নি?

কামাল: আমি মনে করি বিপিএল গভর্নিং কমিটির এটা দায়িত্ব। গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান লিপু সাহেব (গাজী আশরাফ হোসেন লিপু) এই দায়িত্ব পালন করবেন না তা হতেই পারে না। কিন্তু তিনি দায়িত্বই নিচ্ছে না। আজকে দেখলাম তামিম পারিশ্রমিক পায়নি। তামিম সম্মানি পাবে কি পাবে না তিনি (লিপু) একজন খেলোয়াড় হিসেবে তা বুঝতে পারবেন। যেভাবে দাবি করবে সেভাবে হয়তো পাবে না। কিছু তো পেতে হবে। তিনি (লিপু) এটা করতে পারেন। কিন্তু তিনি এটা করেননি। তিনি এটা করলে পত্রিকাতে আসতো না। যতদিন পত্রিকাতে আসবে ততদিন আমি তাকে দায়ি করবো।

প্রশ্ন: বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গেও তো চুক্তি হয়নি?

কামাল: ফ্র্যাঞ্চাইজিদের চুক্তি আমি দেব না। আমি নিজে আটকে রেখেছি। তারা টাকা না দিলে চুক্তি দেব কি করে। চুক্তি দিয়ে দিলে বাতিল করতে পারবো না। আগে ক্রিকেটারদের টাকা পরিশোধ করে আস। তা না হলে আমি নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজিদের নেব। তাদের সঙ্গে বসতে হবে। প্রয়োজনে তাদের ২৪ ঘণ্টায় টাকা পরিশোধ করতে হবে। অথবা সবাই চেক বই নিয়ে আসবে এখানে বসে চেক দেবে।

প্রশ্ন: তামিম ইকবাল এবং আকরাম খানের পদত্যাগ বিষয়ে বলতে চেয়েছিলেন?

কামাল: তামিম ইকবালের বিষয়টিও ভুল বোঝাবুঝি। তাকে কখনো বাদ দেওয়া হয়নি। আমাকে ১৫ জনের দল পাঠিয়েছে। আমি ১৫ জনের দল অনুমোদন দিয়েছি। কোথাও লেখা নেই তামিম বাদ। তার বিরুদ্ধে কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছিলো। শর্তগুলো সে (তামিম) জানে আর আমি জানি। তামিমকে বলেছিলাম সুশৃঙ্খল হতে হবে। তোমার পারফর্ম করার যোগ্যতা আছে কিন্তু প্র্যাকটিসে না আসলে চলবে না। প্র্যাকটিসে আসতে হবে। চিটাগং কিংস কেন টাকা দেয় না। সে ছিলো তাদের আইকন ক্রিকেটার। তখন একটি সমস্যা হয়েছিলো। আমাকে যদি তখন পূর্ণ মাত্রায় ব্যাখ্যা দিতো তাহলে অনুমোদন এভাবে আসতো না। আমাকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করলে হবে না। পরে আমার কাছে সব স্বীকার করেছে।

প্রশ্ন: বিসিবির নিজস্ব কোন মাঠ নেই, শেরেবাংলা স্টেডিয়ামও পাকাপাকি নেওয়া যায় কি না?

কামাল: আমাদের এখানে কিছু কিছু মানুষ আছে ক্রিকেট এই দেশে হোক, ভালো করুক তা চায় না। আগাগোড়া এই সমস্যা ছিলো। আমি যখন আবাহনীতে ছিলাম তখনও এই সমস্যা দেখেছি। আমাদের নিজস্ব মাঠ নাই। এগুলো পাওয়া কঠিন কাজ। যারা চাকরি করেন তাদের তো লাভ হয় না। ক্রিকেট যদি ভালো করে সভাপতি বা ক্রিকেট বোর্ডের নাম হয়। যারা সরকারের চাকরি করে বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের তো নাম হয় না। এই জন্য তারা দিতেও চায় না। তাদের জাতীয়তাবোধ খুব কম। জাতি উপরে উঠে যাবে এই ধরণের অনুভূতি তাদের মধ্যে নেই। সকল কাজে আমাদের বাধা। এখানে যে দোকানগুলো আছে উঠাতে পারলাম না। এগুলোকে স্থানান্তরিত করার জন্য আলাদা একটি ভবন হয়েছিলো। কিন্তু ওখানে কারা চলে এসেছে? এখান থেকে একজনও যায়নি।

প্রশ্ন: আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা কি হচ্ছে?

কামাল: আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা সুন্দর ভাবে করা হয়েছে। সরকারকে অনুমোদনের জন্য দেওয়া হয়েছে। প্রথম দিকে ছোটখাট সমস্যা আসতে পারে। আমি আঞ্চলিকতার বাইরে না। কিন্তু এই মুহূর্তে তাদের সব দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। তাদের ছোটখাট দায়িত্ব দিয়ে আস্তে আস্তে সক্ষমতা বাড়াতে জায়গা করে দিতে হবে। কোন এক সময় নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে দেওয়া হবে ক্রিকেট বোর্ড থেকে। ওটা দিয়ে তারা চলবে। তারাও ম্বাবলম্বী হবে তখন।

খেলাধূলা