দীর্ঘদিন পুঁজিবাজারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায় হতে দূরে থাকার পর ফের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সক্রিয় হতে শুরু করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে ও ২০১১ সালে জানুয়ারিতে দেশের পুঁজিবাজারে ধস নেমে আসে। এর আগে থেকেই গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে রকিবুর রহমানের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এরপর বাজারে ধস ও ধস পরবর্তী সময়েও রকিবুর রহমানের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। তবে সম্প্রতি বিভিন্নভাবে সরব ভূমিকায় রয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) পুঁজিবাজার বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান রকিবুর রহমান। গত বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু করে এরইমধ্যে কমিটির তিনটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর প্রথম দুটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যে। কিন্তু বৈঠকেরই কোনো সিদ্ধান্তই জানানো হয়নি গণমাধ্যমে।
গত বছরের ২৩ নভেম্বর সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। যার প্রভাবে বাজার অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। এরপর ৩০ নভেম্বর এফবিসিসিআইর পুঁজিবাজার বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির তৃতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর বৈঠক থেকেই রকিবুর রহমান দৃশ্যমান ভূমিকায় আসেন।
অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের পক্ষ থেকে রকিবুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হয়- ধসের সময় তিনি কোনো ভূমিকা পালন করেননি কেন? তিনি এ প্রশ্নের নানা ব্যখ্যা দিলেও তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি প্রশ্নকর্তারা। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, এ কারণে অনেকেই রকিবুর রহমানের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এদিকে বাজার ধসের পর ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), বাংলাদেশ ব্যাংক, এফবিসিআই’র সভাপতি একে আজাদ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি সালমান এফ রহমানসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই নানাভাবে পতন হতে বাজারকে উত্তোলনে এগিয়ে আসেন। কিন্তু বাজারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হওয়ার পরও রকিবুর রহমানকে তেমনটা দেখা যায়নি।
জানা গেছে, মার্চে ডিএসই’র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনে রকিবুর রহমান গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য নির্বাচন করবেন। আর এ লক্ষ্য অর্জনেই তিনি নানা দৃশ্যমান ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে।
সম্প্রতি ডিএসই’র বোর্ডসভা শেষে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতার বিষয়ে ডিএসই’র সভাপতি অথবা জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি অথবা সহ-সভাপতি সাংবাদিকদের ব্রিফিং না করে, ব্রিফিং করেছেন তিনি।
এছাড়া ১০ জানুয়ারি ডিএসই পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকশেষেও গুজব মোকাবিলায় এসইসি’র ভূমিকাসহ দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে মন্তব্য করেন। পাশাপাশি এ লক্ষ্য অর্জনে তিনি এরইমধ্যে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. ইব্রাহীম খালেদের পুঁজিবাজার তদন্ত রিপোর্টে কমিটি সরকারকে ২৫টি সুপারিশ করে।
যার ২৪ নম্বরে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারের লেনদেন ও পরিচালনায় রকিবুর রহমানের প্রভাব বিস্তারের বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন। দেখা গেছে, তদন্ত কমিটির বেশকিছু সুপারিশ এরইমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অারো বেশকিছু বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধীন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০০৯ সালের পরে বিভিন্ন সময় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার জন্য আহ্বান জানান তৎকালীন ডিএসই সভাপতি রকিবুর রহমান।