আল্লাহর মেহমানদের ইহরাম বাঁধার পর থেকে কিছু কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়। ইহরাম বাঁধা অবস্থায় এই কাজগুলি করা সম্পূর্ণ নিষিব্ধ। যদি কেউ অজ্ঞতা বা ভুলবশত এই কাজগুলো করে ফেলেন তাহলে অবশ্যই তাকে এর জন্য ফিদিয়া বা জরিমানা দিতে হবে।
হজ তিন প্রকার।
প্রথম প্রকার- হজে ইফরা: ওমরাহ্ ব্যতিত শুধু হজের জন্য ইহরাম বাঁধা এবং হজের সঙ্গে ওমরাহকে না মিলানো। (বদলী হজের জন্যও এই হজ)। নিয়ত: আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল হাজ্জা ফায়াসছির হুলিওয়াতা কাব্বালহুমিনি্ন। (বাংলা নিয়ত- আল্লাহ আমি ইফরাদ হজের উদ্দেশে আপনার সন্তুষ্টির জন্য ইহরাম বাঁধলাম। তা সহজ করে দিন ও কবুল করে নিন)।
দ্বিতীয় প্রকার- হজে কিরান: একত্রে একই স্থান থেকে হজ ও উমরার নিয়ত করে হজের সঙ্গে উমরাহকে মিলানো এবং একই ইহরামে উভয়টি আদায় করা। নিয়ত: আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল উ`মরাতা ফায়াচ্ছির লী-ওয়াতাক্বাব্বাল মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি আপনার উদ্দেশে হজে কিরানের জন্য ইহরাম বাঁধলাম, তা সহজ করে দিন ও কবুল করে নিন।
তৃতীয় প্রকার- হজে তামাত্ত: একই সফরে পৃথক পৃথকভাবে `ইহরাম` পরিধান করে `হজও উমরাহ` আদায় করা। প্রথম ইহরামে উমরাহর নিয়ত করে তা পালন শেষে চুল কেটে `ইহরাম` খুলে হালাল হয়ে দ্বিতীয় বার নতুন করে হজের নিয়তে ৮ই জিলহজ `মক্কা শরীফ` থেকে হজের জন্য ইহরাম বাঁধা। তামাত্তু করার ইচ্ছা থাকলে প্রথমে ওমরার নিয়ত করে এহরাম বাঁধুন।
এ তিন প্রকার হজে যেসব কাজ নিষিদ্ধ- ১. মাথার চুল কাটা বা মাথা মুণ্ডন করা ২. নখ কাটা ৩. পুরুষদের জন্য সেলাই করা কাপড় পরিধান করা ৪. পুরুষের মাথা ঢাকা ৫. শরীরে ও কাপড়ে আতর বা সুগন্ধি লাগানো ৬. শিকার করা তথা বৈধ বন্য প্রাণী শিকার করা ৭. বিবাহের আকদ করা। এরুপ করা হারাম, তবে এর জন্য কোনো ফিদিয়া দিতে হবেনা ৮. উত্তেজনার সঙ্গে যৌনাঙ্গ ব্যতিত স্ত্রীকে আলিঙ্গন করা। (এর ফিদিয়া বা জরিমানা হচ্ছে একটি ছাগল জবেহ করা অথবা তিন দিন রোজা রাখা, অথবা ছয়জন মিসকিনকে খাবার দেওয়া) এবং ৯. সহবাস করা। প্রথম হালালের পূর্বে সহবাস করলে হজ বাতিল হয়ে যাবে। সেই বছর হজের অবশিষ্ট কাজ পূর্ণ করতে হবে। পরবর্তী বছর উক্ত হজ কাযা আদায় করতে হবে। সেই সঙ্গে ফিদিয়া স্বরুপ একটি উট জবেহ করে মক্কার ফকীরদের মাঝে বিতরণ করতে হবে। সহবাস ব্যতিত অন্য কোনো কারণে হজ বা উমরা বাতিল হবেনা।
নারীর বিধান পুরুষের মতোই, তবে নারী সেলাই করা কাপড় পরতে পারবে। নারী নেকাব বা হাত মোজা পরিধান করবে না।
ফিদিয়া বা জরিমানা: এই ফিদিয়া বা জরিমানা ২ প্রকার। ১. ইচ্ছাধীন: এটি হচ্ছে মাথামুণ্ডন বা আতর-সুগন্ধি ব্যবহার বা নখ কাটা বা মাথা ঢাকা বা পুরুষের সেলাই করা কাপড় পরিধান প্রভৃতিতে ফিদিয়া দেওয়ার ব্যাপারে স্বাধীনতা। তিনটি রোযা রাখবে অথবা ছয়জন মিসকিনকে খাদ্য প্রদান করবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক মিসকিনকে দের কেজি করে খাদ্য প্রদান করতে হবে। অথবা একটি ছাগল জবেহ করতে হবে। প্রাণী শিকার করলে অনুরূপ একটি চারপেয়ে জন্তু জবেহ করবে। কিন্তু অনুরূপ জন্তু না পাওয়া গেলে তার মূল্য ফিদিয়া দিতে হবে। ২. ধারাবাহিক: তাম্মাত্তুকারী ও কিরানকারীর জন্য আবশ্যক হচ্ছে একটি ছাগল কুরবানী দেওয়া। সহবাস করলে তার ফিদিয়া হচ্ছে একটি উট। এই ফিদিয়া দিতে না পারলে হজের মধ্যে তিনটি এবং গৃহে ফিরে গিয়ে সাতটি রোযা রাখবে। ফিদিয়ার ছাগল বা খাদ্য হারাম এলাকার (বাইতুল্লাহ) ফকির ছাড়া কাউকে দেওয়া যাবেনা।