দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো ঢের বাকি থাকলেও ময়মনসিংহে এরই মধ্যে নির্বাচনী ছক কষতে শুরু করে দিয়েছেন প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
এবার ময়মনসিংহের সব ক’টি আসনে প্রধান দু’দলেই নবীন ও প্রবীণ প্রার্থীর ঘনঘটা রয়েছে। ফলে আসন্ন মনোনয়ন যুদ্ধ হবে জমজমাট। এসবের পাশাপাশি যারা মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন তারা বিকল্প প্ল্যাটফর্মও ঠিক করে রেখেছেন বলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে আভাস পাওয়া গেছে।
ময়মনসিংহের যেসব আসনে আগামী নির্বাচনে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যদের পুনরায় প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে কোন বিতর্ক নেই তাদের মধ্যে রয়েছেন- ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অবসরপ্রাপ্ত মুজিবুর রহমান ফকির।
ময়মনসিংহ-৪ (সদর) ও ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসন থেকে এ দু’রাজনীতিকের মনোনয়ন নিশ্চিত বলে দলের অনেক নেতা-কর্মী মনে করছেন।
ময়মনসিংহ-৪ (সদর)
জেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী মনে করেন, ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের মানুষের প্রত্যাশা ছিল জীবনের গোধূলি বেলায় আওয়ামী লীগ তথা ময়মনসিংহের রাজনীতির অবিসংবাদিত মুরব্বী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান এমপিকে মন্ত্রিত্ব দিয়ে তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক জীবনের ত্যাগ ও সংগ্রামের মূল্যায়ন করা হবে।
কিন্তু তা হয়নি। তবুও তাকে রেলমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি করায় ময়মনসিংহ সদরের মানুষ কিছুটা হলেও সন্তুষ্ট।
ময়মনসিংহের ‘মাটি ও মানুষের নেতা’ বলে খ্যাত এ বর্ষীয়ান রাজনীতিক এলাকার কাঙ্খিত উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সামাজিক নিবিড় যোগাযোগ অক্ষুন্ন রেখে চলেছেন।
ফলে এবারো সদর আসন থেকে তার দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত বলে মনে করেন দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। তবে এ আসন থেকে সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফয়জুর রহমান ফকির ও ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জণ রয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানের নেতৃত্বে হাইভোল্টেজের ময়মনসিংহ পৌরসভা নির্বাচনে ময়মনসিংহের তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় নেতা ইকরামুল হক টিটু মেয়র নির্বাচিত হন। তৃণমূলে সামান্য ভোটের ব্যবধানে তিনি পরাজিত হলেও টিটুর জনপ্রিয়তার বিষয়টি বিবেচনা করে কেন্দ্র থেকে তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়।
এরপরেও পৌর নির্বাচনে শহর আওয়ামী লীগের গুটিকয়েক প্রভাবশালী নেতা সরাসরি টিটুর বিরোধিতা করেন।
কিন্তু পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির টিটু ভোটের মাঠে শক্তিশালী অবস্থানের কারণে শেষতক মেয়র নির্বাচিত হন। টিটু মেয়র নির্বাচিত হবার পর তাকে ঘিরে দলের ত্যাগী ও বঞ্চিত একটি অংশ শক্তিশালী বলয় তৈরি করেছে।
টিটুর প্রতি প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানের প্রগাঢ় স্নেহ থাকলেও দলের ভেতর সুবিধাভোগী একটি অংশ এ দু’নেতার মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করতে কৌশলে মাঠে রয়েছে বলেও সূত্রের দাবি।
এ আসনে গত নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ.কে.এম.মোশাররফ হোসেন। এবারের নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ শক্ত মনোনয়ন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।
এ আসনে বিএনপি’র প্রার্থিতা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সূত্রের দাবি। এছাড়া দলীয় প্রতিটি কর্মসূচিতে সব সময় সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে ব্যাপক গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছেন আবু ওয়াহাব আকন্দ।
ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর)
এ আসনে গেল সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হন ক্যাপ্টেন অবসরপ্রাপ্ত মুজিবুর রহমান ফকির। তার বিরুদ্ধে গ্রুপিংয়ের অভিযোগ রয়েছে তারই নির্বাচনী এলাকায়।
কিন্তু কাঙ্খিত উন্নয়ন ও মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের ধারা অব্যাহত থাকায় আসন্ন নির্বাচনেও তার দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত বলে আওয়াজ দিচ্ছে তার সমর্থকরা। বেশ কয়েকজন তরুণ প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে কাজ করলেও প্রতিমন্ত্রীর গ্রহণযোগ্যতার কাছে তারা হালে পানি পাচ্ছেন না- এমন দাবি তার সমর্থকদের।
ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া)
এ আসনে দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র অন্যতম সদস্য ও শেরে বাংলা এ.কে.ফজলুল হকের নাতি জামাই আখতারুল আলম ফারুক মনোনয়ন প্রত্যাশী নতুন মুখ। তাকে নিয়ে দলীয় পরিমণ্ডলে নতুন করে হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে।
তৃণমূল ও মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশ রয়েছে তার সঙ্গে। এতে বেশ বিপাকে রয়েছেন এ আসনে গেল নির্বাচনে বিএনপি’র মনোনয়ন পাওয়া সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শামসুদ্দিন আহমেদ।
ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা)
এ আসন থেকে নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী ফখরুদ্দিন বাচ্চু পরাজিত হলেও বেশ সাড়া জাগিয়েছেন তিনি। কিন্তু এবার তার মনোনয়নকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ঠেলে দিয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, হবিরবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব মুহাম্মদ মোর্শেদ আলম।
এরই মধ্যে নিজেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন তিনি। দলীয় প্রার্থিতার জন্য তার পাল্লা যেমনি ভারি হচ্ছে, তেমনি দলীয় পরিমণ্ডলে তাকে নিয়ে নতুন মেরুকরণ হচ্ছে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে, গেল নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী সাবেক ছাত্র নেতা ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চুও ব্যাপক জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের বেশিরভাগ নেতা-কর্মীই তার সঙ্গে রয়েছেন বলে দাবি বাচ্চু সমর্থকদের। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে একদিনের জন্যও মাঠ ছাড়েননি তিনি।
ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা)
এ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য শাহ শহীদ সারোয়ারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন উত্তর জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন তালুকদার। এ আসনে এবার বিএনপি নির্বাচনে গেলে প্রার্থিতা পরিবর্তন করা হতে পারে বলে ব্যাপক গুঞ্জণ রয়েছে।
ফলে বিষয়টি নিয়ে ভীষণ চিন্তিত সংস্কারপন্থি তকমা লাগানো বিএনপি দলীয় সাবেক সাংসদ শাহ শহীদ সারোয়ার। আর খোশ মেজাজে রয়েছেন মোতাহার বলয়ের বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা।