নির্বাচনকালীন সরকার হচ্ছে না, সময়মতোই নির্বাচন : প্রধানমন্ত্রী

নির্বাচনকালীন সরকার হচ্ছে না, সময়মতোই নির্বাচন : প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচনকালীন সরকার করা হবে না বলে জানি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনকালীন কোনো সরকার গঠিত হচ্ছে না। বরং তফসিল ঘোষণার পর এ সরকারই নিয়মমাফিক তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, মন্ত্রী পরিষদও ছোট হচ্ছে না। কিন্তু তারা নির্বাচনের কাজে সরকারি সুবিধা পাবেন না।
সাম্প্রতিক বেলজিয়াম সফর নিয়ে আজ মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) বিকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচন কেউ ঠেকাতে পারবে না বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন হবে এবং সময়মতোই হবে। নির্বাচন থামাতে পারবে না, আগেও পারেনি, এবারও পারবে না।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ২৮ অক্টোবরের সহিংসতার ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট যে সন্ত্রাসী সেটা আবারও প্রমাণ করল। কানাডার কোট সেটা বারবার বলেছে। মাঝে কিছুটা রাজনৈতিক কর্মসূচি তারা পালন করেছে। আমাদের সরকারও তাদের কোনো বাধা দেয়নি। এতে তারা ধীরে ধীরে আস্থা অর্জন শুরু করেছিল। তবে ২৮ তারিখ যে ঘটনা, যেভাবে পুলিশকে কোপালো, সাংবাদিকদের মারল, এতে ধিক্কার ছাড়া আর কিছুই তাদের জুটবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিনে যেমন ইসরায়েলি বাহিনী হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে, বিএনপিও সেভাবে হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলি হামলার সঙ্গে তাদের কোনো তফাৎ দেখছি না। আমরা এই সন্ত্রাসী ঘটনার নিন্দা জানাই। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে তারা নিজেরাই পালালো।
বিএনপির অবরোধের সমালোচনা করে সরকারপ্রধান বলেন, কিসের অবরোধ, কার জন্য অবরোধ। যখন দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, সারা বিশ্ব প্রশংসা করছে, তাদের কাজটাই হলো উন্নয়ন নস্যাৎ করা।
সাংবাদিকদের ওপর বিএনপি কেন হামলা চালিয়েছে এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, সাংবাদিকরা তো তাদের পক্ষেই লিখছিল। সরকারেরই তো সমালোচনা করছিল। কোনো কোনো টেলিভিশন আমার নিউজ অনেক পরে দেয়। তাদের নিউজই আগে দেয়। অথচ আমিই এসব টিভির লাইসেন্স দিয়েছি। মূলত তাদের কোনো মনুষত্ববোধ নেই।
একুশে টেলিভিশনের (ইটিভি) হেড অব নিউজ রাশেদ চৌধুরী প্রশ্নোত্তর পর্বে জানতে চান—মঙ্গলবার পিটার হাস নির্বাচন কমিশনে গিয়ে সংলাপের কথা জোর দিয়ে বলেছেন, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কী বলতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুনিদের সঙ্গে কীসের সংলাপ? বরং সে (পিটার হাস) বসে ডিনার খাক, সে সংলাপ করুক। আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এটা বাংলাদেশের মানুষও চাইবে না। বাংলাদেশের মানুষ বিএনপি-জামায়াতকে ঘৃণা করে। যেটুকু সুযোগ পেয়েছিল, আমরা করে দিয়েছিলাম সুযোগ, সেটাও হারিয়েছে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘যখন উপনির্বাচনে হিরো আলমকে কেউ মেরেছিল, তার বিচার দাবি করেছিল। এখন যখন পুলিশকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হলো, তখন কেন বিচারের দাবি করে না। যারা সাংবাদিকদের সুরক্ষার কথা বলে, আজকে যখন এত সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হল, তারা চুপ কেন?’
তিনি বলেন, ‘আমাদের তো মেরেছেই, এই পুলিশকে পিটিয়ে মারলো। ওগুলো মানুষের জাত নাকি? ট্রাম্প সাহেবের সঙ্গে বাইডেন সংলাপ করছে? ট্রাম্প বাইডেনের সংলাপের দিন আমরাও সংলাপ করবো। তাদের সব কর্মকাণ্ড রেকর্ড করা আছে।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিটার হাস তাদের সঙ্গে বসুক, ডিনার করুক। আমরা করব না।

আগামী নির্বাচন যথাসময়ে হবে কি না এবং নির্বাচন আদৌ হবে না এ ব্যাপারে প্রশ্ন করেন সিনিয়র সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল। জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, আমি আশ্বস্ত করতে চাই, নির্বাচন হবে এবং যথাসময়েই হবে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, মাঝখানে কিছুদিন বিএনপি রাজনৈতিকভাবে কর্মসূচি করছিল এবং আপনারা নিশ্চয়ই বিশেষভাবে লক্ষ্য করেছিলেন আমাদের সরকার কিছু তাদের কোনো বাধা দেয়নি। তাদের ওপর একটা শর্ত ছিল, তারা অগ্নিসংযোগ বা ভাঙচুর করবে না।
তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) যখন সুষ্ঠুভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি করছিল তাতে কিন্তু মানুষের একটু আস্থা-বিশ্বাসও তারা ধীরে ধীরে অর্জন করতে শুরু করেছিল। কিন্তু ২৮ তারিখে বিএনপি যেসব ঘটনা ঘটালো, বিশেষ করে যেভাবে পুলিশকে হত্যা করেছে, মাটিতে ফেলে যেভাবে কোপালো, সাংবাদিকদের যেভাবে পেটালো, এ ঘটনার পর জনগণের ধিক্কার ছাড়া বিএনপির আর কিছুই জুটবে না।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পুলিশকে তো মেরেছেই তারপর হাসপাতালে ঢুকে অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়েছে, সেখানেও পুলিশের ওপর আক্রমণ। আজকে ইসরায়েল প্যালেস্টাইনে যেভাবে হামলা করেছে, সেখানেও হাসপাতালে বোমা হামলা করলো। নারী-শিশুদের হত্যা করেছে এবং সেখানে তাদের সবকিছু বন্ধ করে রেখেছে। আমি এখানে তফাত কিছু দেখতে পাচ্ছি না। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। নিজেরাই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে নিজেরাই আবার পালালো। এখন আবার অবরোধের ডাক। কীসের অবরোধ, কার জন্য অবরোধ? যখন বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে, সারা বিশ্ব বাংলাদেশের প্রশংসা করছে তখন তাদের কাজটাই হলো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা, বাংলাদেশে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা দেখাবে যে কিছু হয়নি।
২৮ অক্টোবরে বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, নদীর তলদেশ দিয়ে এত বড় টানেল উপমহাদেশে আর কোনও দেশ করেনি। আমরা প্রথম এই টানেলটা করলাম। চট্টগ্রামে একটা বাণিজ্যের জায়গা, পোর্ট রয়েছে। সেখানে টানেল তৈরি করে যখন আমরা উদ্বোধন করছি, তখন এখানে তারা মানুষের ওপর হামলা করছে, পুলিশের ওপর হামলা করছে, মানুষ খুন করছে। তাদের হামলায় লক্ষণীয় হলো, পুলিশ ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। গুলি কারা কারা করেছে, তাদের নামধাম… (বের করা হবে)— তারা তা প্রকাশ্যেই করেছে, গাড়ি পুড়িয়েছে। কালকেও লালমনিরহাটে যুবলীগের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এভাবে হত্যা করা আর মানুষের সম্পদ নষ্ট করা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।

সাংবাদিকদের ওপর তারা যেভাবে চড়াও হলো— বুঝতে পারলাম না কেন হঠাৎ… কারণ সাংবাদিকরা তো তাদের পক্ষে ভালো ভালো নিউজ দেয়। টক শো’তে… বরং সবকিছুতেই সরকারের দোষটাই বেশি দেখে। তাহলে তাদের এত রাগটা কেন সাংবাদিকদের ওপর। সবজায়গায় তাদের নিউজ সবার আগে। আমার নিউজ সবার পরে। কোথাও কোথাও ৪ নম্বর/৫ নম্বরেও থাকে। কিন্তু তারাও যথেষ্ট সুযোগ পাচ্ছিল। তারপরও কেন তাদের রাগটা। সাংবাদিকদের চিকিৎসার বিষয়টি সরকার দেখবে বলেও জানান তিনি।
যাদের বাস পুড়েছে তাদেরটা সরকার দেখবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যেসব গাড়ি পুড়িয়েছে। ২০১৩ সালে তারা একই রকম অগ্নিসন্ত্রাস করে। পরে ২০১৪ ও ১৫ সালে একই রকম অবস্থা। তিনটি বছর ধরে তাদের অগ্নিসন্ত্রাস আর আক্রমণ। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত বাসমালিকদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। যাতে তারা ব্যবসাটা চালাতে পারে। আহত নিহতদের আমরা সহায়তা দিয়েছি।
সরকারের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে যেখানেই গেছি, সবাই বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। একমাত্র দুঃখে মরে যায় এই বিএনপি আর জামায়াত জোট। কাজেই বিএনপি হচ্ছে একটা সন্ত্রাসী সংগঠন। সন্ত্রাসীদের কীভাবে শিক্ষা দিতে হবে, সেই শিক্ষাই এখন আমাদের দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। সেটাই আমরা দেবো। এদের জন্য দেশটা ধ্বংস হোক, এটা সহ্য করা যাবে না। যাদের বাস-টাস পুড়েছে, তাদের সহযোগিতা করবো।
এর আগে, গত ২৫-২৬ অক্টোবর বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ‘গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে’ যোগদান করেন প্রধানমন্ত্রী। ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেইনের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী গত ২৪ অক্টোবর ব্রাসেলসে যান। ২৭ অক্টোবর দেশে ফেরেন তিনি।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর