“উনি চোরদের সঙ্গে গেলেন কেন”

“উনি চোরদের সঙ্গে গেলেন কেন”

ডেসটিনির প্রেসিডেন্ট ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে.(অব.) হারুন অর রশিদের জামিনের শুনানিতে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ তার আইনজীবী আব্দুল মতিন খসরুকে উদ্দেশ করে বলেন, “গত বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, উনি (হারুন অর রশিদ) চোরদের সঙ্গে গেলেন কেন? এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?”

জবাবে আব্দুল মতিন খসরু বলেন, “অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে অপরাধী বলা যায় না। ডেসটিনিকে যারা টাকা দিয়েছে বা যারা ডেসটিনির গ্রাহক তারা তো কোনো অভিযোগ করেনি। আমরা তো (ডেসটিনি) কাউকে প্রতারিত করিনি।”

প্রসঙ্গত, ১১ অক্টোবর জেনারেল হারুনের চিকিৎসার জন্য আবেদনের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, “হারুন অর রশিদ ডেসটিনি থেকে মাসে ১০ লাখ টাকা বেতন নেন। তিনি সেক্টরস কমান্ডার ফোরাম থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি ডেসটিনি ছাড়তে পারবেন না। তাই বলে কি উনি চোরদের সঙ্গে থাকবেন?”

আব্দুল মতিন খসরু বলেন, “যারা অর্থ আত্মসাৎ করে তাদের শাস্তি পেতে হবে। অন্য এমএলএম কোম্পানিতে গ্রাহকরা অভিযোগ করে। কিন্তু ডেসটিনির কোনো গ্রাহক অভিযোগ করেনি। লে. জেনারেল (অব.)হারুনের অ্যাকাউন্টে যে অর্থ আছে সেটা তার নিজস্ব। এটা বেতনের টাকাও হতে পারে। আমাদের দেশে প্রাইভেট ব্যাংকের এমডিরা ১০/২০ লাখ টাকা বেতন পায়। সুতরাং একজন সাবেক সেনাপ্রধান হিসেবে তিনি এ রকম বা এর চেয়ে বেশি বেতন পেতে পারেন।”

আদালত বলেন, “ডেসটিনিতে লে. জেনারেল (অব.) হারুনের শেয়ার কত শতাংশ।” এ প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে আব্দুল মতিন খসরু বলেন,‘ডেসটিনির কোনো টাকা তুলতে জেনারেল হারুনের স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয় না। তিনি শুধু সভায় সভাপতিত্ব করেন। যা করার বোর্ড অব ডাইরেক্টররা করেন। এ মামলায় বাদীপক্ষ বলেনি জেনারেল হারুন টাকা আত্মসাত করেছে।”

আব্দুল মতিন খসরু বলেন, “মামলার এফআইআরে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালে ১৯ মার্চ ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন লিমিটেড নিবন্ধিত হয়। এ কোম্পানির শুরুতে রফিকুল আমীনরা ছিলেন। সেসময় জেনারেল হারুন ছিলেন না। ২০০৭ সালে চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন লিমিটেডে যোগদান করেন। সুতরাং ২০০৬ সালের অভিযোগে লে. জেনারেল (অব.) হারুনকে অভিযুক্ত করা যাবে না।”

আব্দুল মতিন খসরু আরো বলেন, “হারুন অর রশিদ সাবেক সেনাপ্রধান, রাষ্ট্রদূত, সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। তিনি ডেসটিনির ঋণ গ্রহণ ও প্রদানের কোনো দায়িত্বে ছিলেন না। তার  বিরুদ্ধে বাদীপক্ষ কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনেননি। তাকে জামিন দিলে তিনি পালিয়ে যাবেন না। এছাড়া তিনি অসুস্থ।”

এ সময় আদালত বলেন, “তার অসুস্থার পক্ষে কোনো প্রমাণ আছে কিনা।”

জবাবে মতিন খসরু বলেন, “প্রমাণের দরকার নেই। আপনার আদেশে অ্যাটর্নি জেনারেলের যে চিকিৎসা বোর্ড গঠন করতে বলেছেন সেই বোর্ডই বলেছেন তিনি অসুস্থ। তাকে জামিন দিলে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন।”

এছাড়াও তিনি বলেন, “মামলায় মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ কোথায় আছে সেটা বলা হয়নি। আর টাকা কোথায় পাচার করা হয়েছে সেটাও বলা হয়নি।”

সরকারপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বলেন, “জামিন আবেদনটি গ্রহণযোগ্য নয়। এটা এভাবে নয়, আপিল হিসেবে আবেদন করতে হবে। এছাড়া এখানে দুদককেও বিবাদী করা হয়নি।”

এরপর আদালত লে. জেনারেল (অব.) হারুনকে জামিন না দিয়ে নতুন করে আপিল আবেদন করতে বলেন। পরে রোববার বিকালে জামিনের জন্য জেনারেল হারুন হাইকোর্টে আপিল করেন।

এদিন জামিনের বিষয়ে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি ফরিদ আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হয়।

আদালতে সরকারপক্ষে ছিলেন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও দুদকের পক্ষে ছিলেন, অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।

গত ১১ অক্টোবর ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) হারুন অর রশিদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন এবং চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর তারাসহ ডেসটিনির শীর্ষ ২২ কর্মকর্তাকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দেওয়া জামিন বাতিল করেছিলেন একই আদালত।

উল্লেখ্য, দুদকের উপ-পরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ও সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম গত ৩১ জুলাই মামলা দুটি দায়ের করেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড কর্তৃপক্ষ ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশন ও ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মাধ্যমে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। কিন্তু বর্তমানে তাদের পৃথক দুটি অ্যাকাউন্টে ৫৬ লাখ ও ৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা আছে। বাকি তিন হাজার ২৮৫ কোটি টাকা তারা মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন।

বাংলাদেশ