পদ্মা-সেতু দুর্নীতি বিশ্বব্যাংক নয়, অভিযোগ প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেবে দুদক

পদ্মা-সেতু দুর্নীতি বিশ্বব্যাংক নয়, অভিযোগ প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেবে দুদক

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ব্যাপারে যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয় তবে দেশের আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন -২০০৪ এর ধারা অনুযায়ী দুদক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানা গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে।

রোববার বিশ্বব্যাংকের তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রথম দফার বৈঠকে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় উভয় পক্ষ। বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন বৈঠকে উপস্থিত দুদকের একজন ‌শীর্ষ কর্মকর্তা।

এ প্রসঙ্গে দুদকের আইন উপদেষ্টা আনিসুল হক বিশেষজ্ঞ প্যানেলকে জানান, দুদক আইনেই পদ্মা সেতু প্রকল্পের স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ অনুসন্ধান সম্ভব। এ সময় তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন- ২০০৪ বিশেষজ্ঞদের সামনে উপস্থাপন করেন।

বিশেষজ্ঞ টিম কমিশনের আইন পর্যালোচনা করছে বলে এ সময় দুদককে জানান সফররত বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সাবেক প্রধান আইনজীবী লুইস গাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পো। বৈঠকে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী অপরাধের যে বিচার হয় তা আমরা মেনে নিবো।“ স্বচ্ছভাবে যদি অনুসন্ধান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় তবে তবে বিশ্বব্যাংক দুদককে অবশ্যই স্বাগত জানাবে বলে উল্লেখ করেন ওকাম্পো।

দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বৈঠকে এ সময় বিশেষজ্ঞ প্যানেলের উদ্দেশ্যে বলেন, “আশা করছি আমরা একটি স্বচ্ছ অনুসন্ধান প্রতিবেদন উপহার দিতে পারবো।“ জবাবে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান কমিশনকে বলেন, “আমরাও দুদকের কাছে একটি স্বচ্ছ প্রতিবেদন প্রত্যাশা করি।“

ওকাম্পোর নেতৃত্বে এই বিশেষজ্ঞ দলের অন্য দুই সদস্য হলেন- হংকংয়ের দুর্নীতিবিরোধী স্বাধীন কমিশনের সাবেক কমিশনার টিমোথি টং ও যুক্তরাজ্যের সিরিয়াস ফ্রড অফিসের সাবেক পরিচালক রিচার্ড ওল্ডারম্যান। বিশেষজ্ঞ এ প্যানেলের সঙ্গে দুদক কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি অ্যালেন গোল্টস্টেইন এবং অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান টিমের প্রধান জি মামেন।

কমিশনের পক্ষ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান, কমিশনার বদিউজ্জামান, শাহাবুদ্দিন ও দুদকের আইন উপদেষ্টা আনিসুল হক এবং দুদক সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী। পরিচয় পর্ব ও প্রাথমিক আলোচনা সম্পন্ন শেষে অনুসন্ধান টিমের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিশেষজ্ঞ প্যানেল।

পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগের দুর্নীতির অনুসন্ধানে গঠিত দুদকের চার সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান কমিটির সিনিয়র উপ-পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী, এএসএম আবদুল আল-জাহিদ, গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী ও মির্জা জাহিদুল আলম। এ অনুসন্ধান  টিমের সঙ্গে ছিলেন দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত) খোন্দকার আমিনুর রহমান।

অনুসন্ধান টিমের কাছে বিশেষজ্ঞ প্যানেল তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কিছু লিখিত কাগজপত্র প্যানেলের কাছে উপস্থাপন করেন দুদক অনুসন্ধান টিম। এসময় পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে ইতিমধ্যেই যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাদের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ প্যানেলকে অবহিত করা হয় বলে জানা গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে।

দুদক সূত্র জানায়, বর্তমানে ছুটিতে থাকা সরকারের অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের করার বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের প্যানেল প্রথমদিন সরাসরি কিছু না বললেও তারা অনুসন্ধান টিমের সামনে প্রশ্ন রেখে বলেন, “স্বচ্ছতার জন্য আরও কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন মনে করছেন কি-না!“ জবাবে “আমরা জিজ্ঞাসাবাদের উপসংহারে আসিনি“ বলে উল্লেখ করেন অনুসন্ধান টিম।

অর্থ বাণিজ্য