‘আমি বিশ্বাস করি সেই দিন খুব বেশি দূরে নয় যে, বিশ্বের সেরা চলচ্চিত্রকার-শিল্পী ও কলাকুশলীরা যোগ দিবেন এই চলচ্চিত্র মেলায়। আমাদের চলচ্চিত্রে সোনালী দিন ফিরিয়ে আনতে বিএফডিসি ও চ্যানেল আইয়ের যৌথ উদ্যোগে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত চলচ্চিত্র মেলা পালন করবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এটি একদিন ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেবে। আয়ু ফুরিয়ে যাবার আগে এই চলচ্চিত্র মেলায় পাওয়া সম্মাননাটাকে আমার জীবনের অন্যতম সেরা স্বীকৃতি বলে মনে করি।’
এভাবেই বর্ষিয়ান চলচ্চিত্র পরিচালক সুভাষ দত্ত চতুর্থ চলচ্চিত্র মেলায় আজীবন সম্মাননা প্রাপ্তির অনুভূতি জানিয়েছেন ।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সূতিকাগার বিএফডিসি প্রাঙ্গণে ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার অনুষ্ঠিত হলো চলচ্চিত্রের নবীন-প্রবীণ শিল্পী-নির্মাতা ও কলাকুশলীদের মিলনমেলা। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) ও চ্যানেল আইয়ের যৌথ উদ্যোগে চতুর্থবারের মতো অনুষ্ঠিত এবারের চলচ্চিত্র মেলা উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ।
চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বদের নিয়ে আকাশে স্বপ্নের মতো রঙিন একরাশ বেলুন উড়িয়ে দিয়ে চলচ্চিত্র মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর তথ্যমন্ত্রী তার শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। এসময় তিনি বলেন, চলচ্চিত্রের উন্নয়নের জন্য সরকার ৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। উন্নতমানের সিনেমা হল নির্মাণ, কবিরপুরে চলচ্চিত্রের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গার উন্নয়ন, বর্তমান এফডিসির কারিগরী মান উন্নত ও যুগোপযোগী করে তোলা প্রভৃতি কাজে এই অর্থ ব্যয় করা হবে। চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজকদের তিনি আহবান জানান, বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান বৃদ্ধি করার মতো উন্নত মানের চলচ্চিত্র নির্মাণ করার জন্য। এ বিষয়ে তিনি সরকারী অনুদানে নির্মিত ছবির সংখ্যা বৃদ্ধির পরিকল্পনার বিষয়টি উল্লেখ করেন। আগামীতে আরো ব্যাপক পরিসরে মেলাটি উদযাপন করার জন্য সবধরনের সরকারী সহযোগিতার আশ্বাস দেন তথ্যমন্ত্রী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন – তথ্যসচিব হেদায়েত উল্লাহ আল মামুন এনডিসি, এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ম.হামিদ, ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সভাপতি মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা), নায়করাজ রাজ্জাক, আলমগীর, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মহম্মদ হাননান, চলচ্চিত্র গ্রাহক সমিতির সভাপতি আবদুল লতিফ বাচ্চু, ফিল্ম এডিটর ফিল্ডের সভাপতি আবু মুসা দেবু এবং চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি শাকিব খান। বক্তারা সবার কাছে আহ্বান জানান, আমাদের চলচ্চিত্রের হারানো সোনালী দিন ফিরিয়ে আনতে একজোট বেঁধে কাজ করার জন্য। সকলে আশা প্রকাশ করেন, চলচ্চিত্র মেলার ধারাবাহিকতা ধরে রাখবে বিএফডিসি ও চ্যানেল আই।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরই জসিম ফ্লোরে আজীবন সম্মাননা জানানো হয় বরেণ্য চলচ্চিত্রনির্মাতা সুভাষ দত্তকে। তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ আজীবন সম্মাননা ক্রেস্ট ও ১ লক্ষ টাকার একটি চেক তুলে দেন সুভাষ দত্তের হাতে। এ সময় সুভাষ দত্ত সম্মাননা পাওয়ার অনুভূতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন এবং চলচ্চিত্রের দিনবদলের জন্য নতুনপ্রজন্মের শিল্পী ও কলাকুশলীদের আর্শীবাদ জানান।
চলচ্চিত্র মেলার সবচেয়ে জমকালো আয়োজন দিনব্যাপি সাংস্কৃতিক পরিবেশনা শুরু হয় এর পরপরই। সঙ্গীতে-নৃত্যে উৎসব আমেজ ছড়িয়ে দেন – শিল্পী খুরশীদ আলম, সুবীর নন্দী, রিজিয়া পারভীন, এস আই টুটুল, কনা, চিত্রতারকা ইলিয়াস কাঞ্চন, রোজিনা, অঞ্জনা, ওমর সানী, আমিন খান, হেলাল খনা, টেলি সামাদ, মারুফ, সাহারা, সম্রাট, নিপূর্ণ, তমা মির্জাসহ চিত্রাঙ্গণের বিভিন্ন শিল্পীবৃন্দ। নায়করাজ রাজ্জাক ও সোহেল রানার মতো চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তোলে। এ সময় পুরো জসিম ফ্লোর ছিলো কানায় কানায় পূর্ণ। দর্শকদের মধ্যে ছিলো বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস।
মেলায় স্টল ছিলো মোট ৪১টি । স্টলগুলোর মধ্যে ছিলো চলচ্চিত্র শিল্পের সূচনা থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের চলচ্চিত্র নির্মাণের যন্ত্রপাতির স্টল, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, প্রযোজক সমিতি, শিল্পী সমিতি, ফিল্ম এডিটরস গীল্ড, ফিল্ম ক্লাব লি., সিনে ফটোগ্রাফী এসোসিয়েশন, ফজলুল হক ইনন্সিটিউট এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ, ফিল্ম আর্কাইভ খ্যাত আমার ছবি’র স্টলসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টল। স্টলগুলোতে তেমন দর্শকদের ভিড় না থাকলেও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র গ্রাহক সমিতির স্টলে দর্শকদের আনাগোনা ছিল চোখে পরার মত। এ ছাড়াও মেলা প্রাঙ্গণে প্রজেক্টরের মাধ্যমে স্বপন আহমেদ পরিচালিত বিশাল ক্যানভাসে নির্মিত বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবি ‘লাল টিপ’-এর প্রমো চলছিল।
এবারের চলচ্চিত্র মেলায় বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়, চলচ্চিত্রের সঙ্গীতে অবদান রাখার জন্য আবদুল জব্বার ও মোঃ খুরশীদ আলমকে এবং সোনালী যুগের চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য দুই নায়িকা নূতন ও অঞ্জনাকে। চলচ্চিত্রের আজকের প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন- শাকিব খান, মিশা সওদাগর ও মৌসুমী। তাদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন ম. হামিদ ও ফরিদুর রেজা সাগর। এ সময় চ্যানেল আই আর্কাইভে `ভালোবাসার লাল গোলাপ ও নীল আচল ছবি দুটির ক্যান ফরিদুর রেজা সাগরের হাতে হস্তান্তর করেন দুই প্রযোজক। মেলার প্রকল্প পরিচালনায় ছিলেন আবদুর রহমান। মেলা থেকে চ্যানেল আইতে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন তাহের শিপন এবং সঞ্চালনা ছিঅপু মাহফুজ ও মৌসুমী বড়–য়া।