সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২০১২ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। শুক্রবার নরওয়ের নোবেল কমিটি এ পুরস্কার ঘোষণা করে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ছয় দশক ধরে ইউরোপে শান্তি ও সংহতি সুসংহত করা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য সংগঠনটিকে এ পুরস্কারে ভূষিত করা হলো বলে নোবেল কমিটি থেকে বলা হয়েছে।
পুরস্কারের ১২ লাখ ডলার আগামী ১০ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ইইউ’র কাছে হস্তান্তর করা হবে।
অসলোতে পুরস্কার ঘোষণার সময় কমিটির চেয়ারম্যান থরবজোয়ার্ন জাগল্যান্ড বলেন, “ইউরোপ মহাদেশকে যুদ্ধের মহাদেশ থেকে শান্তির মহাদেশে পরিণত করার পথে ইইউ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।”
তিনি বলেন, “ইউরোপ যা কিছু অর্জন করেছে তা ধরে রাখতে এবং একে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিতে তাদের সাধ্যমতো সবকিছু করতে হবে- নোবেল পুরস্কার তাদের এ-ই বার্তাই দিচ্ছে।”
সেই সঙ্গে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন- এই ইউনিয়ন যদি ভেঙে পড়ে তাহলে সব অর্জন ব্যর্থ হয়ে যাবে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত ইউরোপ পুনর্গঠনে এবং ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীর পতনের পর ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়া অস্থিতিশীলতা সামাল দিতে ইইউ যে ভূমিকা রেখেছে তার ভূয়সী প্রশংসা করেন জাগল্যান্ড।
উল্লেখ্য, এবার শান্তিতে নোবেল পাওয়ার দৌড়ে ছিল ২৩১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে একজন রুশসহ মুসলিম-খ্রিস্টান সম্প্রীতি রক্ষার্থে কাজ করা কয়েকজন ধর্মীয় নেতাও ছিলেন।
অবশ্য অর্থনৈতিক সঙ্কটে জর্জরিত ইইউ এবং জোটটির ১৭ দেশের একক মুদ্রা ইউরোর অস্তিত্ব যখন হুমকির মুখে তখন তার শান্তিতে নোবেল প্রাপ্তি অনেককে চমকে দিয়েছে। যেখানে খোদ নরওয়েবাসীরাই এ সংগঠনের তীব্র বিরোধিতা করেন।
এমনকি ২৭ সদস্যের জোট ইইউতে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ১৯৭২ এবং ১৯৯৪ সালে ‘না’ ভোট দিয়েছে নরওয়ে। ইইউ ছাড়াই বিপুল তেল-গ্যাস সমৃদ্ধ ব্যাপক উন্নত এবং সম্ভাবনাময় দেশ নরওয়ে।
প্রসঙ্গত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) হচ্ছে ইউরোপের ২৭টি দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোট। এর প্রধান কার্যালয় বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে।
ইইউ গঠনের ইতিহাস একটু লম্বা। এর শুরুটা হয় ইউরোপিয়ান কোল অ্যান্ড স্টিল কমিউনিটি (ইসিএসসি) এবং ইউরোপিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটি (ইইসি) গঠনের মধ্য দিয়ে। ছয়টি দেশ নিয়ে যথাক্রমে ১৯৫১ এবং ১৯৫৮ সালে এ দু’টি জোট গঠন করা হয়। পরে ক্রমান্বয়ে এর সদস্য সংখ্যা এবং প্রভাববলয় বাড়তে থাকে।
১৯৯৩ সালে মাসট্রিখট সনদের মধ্য দিয়েই মূলত বর্তমান ইইউ’র জন্ম হয়। এ সনদের রূপকার হেলমুট কোহল এবং ফ্রাঁসোয়া মিত্তারান্দ। আর ইইউ সংবিধানের মৌলিক সংশোধনীর মাধ্যমে প্রণীত লিসবন সনদ কার্যকরী হয় ২০০৯ সালে।