সাগর-রুনি হত্যা: ৮ দিনের রিমান্ডে তানভীর-রুদ্র

সাগর-রুনি হত্যা: ৮ দিনের রিমান্ডে তানভীর-রুদ্র

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির বহুল আলোচিত হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার হওয়া তানভীর ও রুদ্র পলাশের আট দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

বুধবার বিকাল ৩টায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের হাজির করে প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও র‌্যাবের ইনভেস্টিগেশন ও ফরেনসিক উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. জাফর উল্লাহ।

শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কেশব রায় চৌধুরী সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিকে অপর ৫ আসামিকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তারা হলেন, কামরুল হাসান অরুন, পেশাদার ডাকাত রফিক, বকুল, মিন্টু ও সাঈদ। ওই ৫ জন ডা. নিতাই হত্যা মামলারও আসামি। তাদের মধ্যে আসামি কামরুল হাসান অরুন ডা. নিতাইয়ের ড্রাইভার ছিলেন।

রিমান্ড চেয়ে আদালতে শুনানি করেন আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার জিআরও হুমায়ুন কবির।

শুনানিতে তিনি বলেন, “আসামিরা সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডে জড়িত মর্মে সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। আসামিদের নিয়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অভিযান পরিচালনা করা, হত্যাকাণ্ডে আর কারা জড়িত তা উদ্ঘাটন করার জন্য আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।” তিনি আসামিদের প্রত্যেকের ১০ দিন রিমান্ড মঞ্জুরের আবেদন করেন।

অপরদিকে, আসামিদের রিমান্ডে নেওয়ার বিরোধিতা করেন তাদের আইনজীবী কিশোর কুমার বসু রায় চৌধুরী পিন্টু।

তিনি শুনানিতে বলেন, “তানভীর ঢাকার স্কলাসটিকা স্কুলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আসামি রুদ্র উক্ত বাড়ির (সাগর-রুনির ভাড়া বাসা) দারোয়ান। তানভীরের সঙ্গে মেহেরুন রুনির ফেসবুকে পরিচয় হয়। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তানভীরকে তিনবার ডিবি অফিসে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়। রুনির বাসায় তিনি কখনও যাননি। তাকে তার পরিবার গত ১ অক্টোবর থেকে খুঁজে পাচ্ছিল না। সর্বশেষ মঙ্গলবার তারা মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারেন তাকে এ মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামিরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তাদের এ মামলার “জজ মিয়া“ বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।”

পরে আসামির আইনজীবী মিডিয়ার সামনে অভিযোগ করেন, “মামলার কোনো কপি তাদের দেওয়া হয়নি। তাদের একজন নাগরিকের ন্যূনতম যে অধিকার তা থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। প্রশাসনের কাছ থেকেও তারা কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না। মূলত তাদের ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।”

রিমান্ড আবেদনে আসামি তানভীরকে তেজগাঁও থানার শাহিনবাগ মাঠের উত্তর কোনের সামনের ফুটপাত থেকে এবং রুদ্রকে কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডের যাত্রী ছাউনির সামনের রাস্তা থেকে র‌্যাব-২ এর সদস্যরা গ্রেফতার করেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর সাগর-রুনি হত্যার অন্যতম প্রধান সন্দেহভাজন হুমায়ূন ওরফে এনামুলকে ধরতে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেন। হুমায়ূন সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির বাড়ির আরেক সিকিউরিটি গার্ড।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি নিজ ভাড়াবাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।

উল্লেখ্য, তদন্তের দায়িত্ব পাবার পর গত ২৪ এপ্রিল সাগর-রুনির লাশ কবর থেকে তুলে সুরতহাল করে র‌্যাব।

মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, গত তিনটি তারিখে মামলায় জব্দকৃত বিভিন্ন আলামত আমেরিকায় ডিএনএ ও ফিঙ্গার প্রিন্ট পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।

প্রথমবার পাঠানো হয় গত ৭ জুন। ওইদিন একটি ১২ ইঞ্চি স্টিলের রক্তমাখা ছুরি, ছুরির বাট, একটি পুরাতন ছাই রংয়ের মোজা, সাগরের ব্যবহৃত প্যান্টের রক্তমাখা লুফ ও রুনির প্যান্টির রক্তমাখা অংশ।

দ্বিতীয়বার পাঠানো হয় গত ৩১ জুলাই। ওই দিন সাগরের মুখে বাধা একটি টিয়া রংয়ের ওড়না, পায়ে বাধা হালকা খয়েরি রংয়ের চাদর ও কালো রংয়ের দুই খণ্ড রক্তমাখা গেঞ্জি।

তৃতীয় ও সর্বশেষ পাঠানো হয় গত ২০ সেপ্টেম্বর। ওই দিন একটি ১৮ ইঞ্চি রক্তমাখা লোহার তৈরি বটি ডিএনও ও ফিঙ্গার প্রিন্টের জন্য আমেরিকা পাঠানো হয়।

মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১২ নভেম্বর  দিন ধার্য আছে।

বাংলাদেশ